দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ মে: মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড সীমান্ত এলাকায় ১৩৯টি গণকবর ও ২৮টি টর্চার ক্যাম্পের (বন্দিশিবির) সন্ধান পেয়েছে মালয়েশিয় পুলিশ। মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান খালিদ আবু বকর সোমবার একথা জানিয়েছেন।মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান জানান, মে মাসের ১১ থেকে ২৩ তারিখের মধ্যে বন্দিশিবির ও কবরগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়।তবে এসব গণকবরে কতটি মৃতদেহ আছে তা জানানো হয়নি।
সেমাবার থেকে ওইসব কবর থেকে লাশ তোলার কাজ শুরু হতে পারে। এর আগে দেশটির স্টার পত্রিকা ১০০টি লাশ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে।পুলিশ প্রধান খালিদ আবু বকর জানিয়েছেন,কোনো কোনো কবরে একাধিক লাশ রয়েছে। এ ছাড়া কোনো বন্দিশিবিরে একসঙ্গে ৩শ’য়েরও বেশি লোককে রাখার মতো জায়গা রয়েছে।ধারণা করা হচ্ছে, মানবপাচারকারীরা বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওই বন্দিশিবিরগুলোতে রাখত এবং লাশগুলো তাদেরই।
পুলিশের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, বন্দিশিবির ও কবর পাওয়ার ঘটনার তদন্তকালে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকও মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের আটকের ঘোষণা দিয়েছেন। বেশ কিছুদিন আগে মালয়েশিয়ার উত্তরের পারলিস প্রদেশের পাশে অবস্থিত থাইল্যান্ডের সঙ্খলা প্রদেশে মানবপাচারকারীদের ব্যবহৃত ১৭টি নির্যাতন শিবির ও ২৬টি লাশ খুঁজে পায় দেশটির পুলিশ।এ ঘটনার পর থাই পুলিশ মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান শুরু করে। অভিযানের কারণে পাচারকারীরা থাইল্যান্ডে না গিয়ে বিদেশগামীদের নিয়ে সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে ও উপকূলে ছেড়ে দিচ্ছে।
মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া উপকূল থেকে এ পর্যন্ত তিন হাজারেরও বেশি বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা মুসলিমদের উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই প্রথম থাইল্যান্ডের বাইরে পাচার হওয়াদের কবর ও বন্দীশিবিরের সন্ধান পাওয়াগেল।থাইল্যান্ড সীমান্তের কাছে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলে মানবপাচারকারীদের পরিত্যক্ত আস্তানায় সব মিলিয়ে ১৩৯টি গণকবরের সন্ধান পেয়েছে দেশটির পুলিশ।
মালয়েশিয়া পুলিশের মহা পরিদর্শক খালিদ আবু বকরকে উদ্ধৃত করে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই সপ্তাহ ধরে অভিযান চালিয়ে তার বাহিনীর সদস্যরা এসব কবর চিহ্নিত করেছে, যার কোনো কোনেটিতে একাধিক দেহাবশেষ থাকতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।গত ১ মে থেকে থাই সীমান্তের ৫০০ মিটার উত্তরে ২৮টি পরিত্যাক্ত ক্যাম্পে এসব কবর পাওয়া গেছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আবু বকর।এর মধ্যে একটি গণকবরের অবস্থান গতমাসে থাইল্যান্ডে পাওয়া কবর থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরে।কবরগুলো থেকে দেহাবশেষ তোলার কাজ চলছে বলে মালয়েশীয় পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন। এক মাস আগে থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশের পাহাড়ি এলাকায় পাচারকারীদের ক্যাম্পে ওই গণকবরে ২৬টি দেহাবশেষ পাওয়া পরই সাগরপথে মানবপাচারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় আসে।
ধারণা করা হয়, বিভিন্ন স্থান থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকায় করে প্রথমে আনা হয় থাইল্যান্ডে। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে পাচারকারীদের বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের রাখা হয়। পরে সময় সুযোগ মতো তাদের আবার নৌকায় করে অথবা স্থলপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়।
আর এক্ষেত্রে শংখলা প্রদেশ ও পেদাং বেসারের ওই দুর্গম এলাকা পাচারকারীদের একটি রুট হিসাবে ব্যবহৃত হয় বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। সম্প্রতি বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই সমাজের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে মানবপাচারে যুক্ত।থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর পাওয়ার পর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের কয়েকটি নৌকা থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়, যারা বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে সংশ্লিষ্ট তিন দেশ।মালয়েশিয়ার পুলিশ চলতি মাসের শুরু থেকেই থাই সীমান্ত সংলগ্ন পেদাং বেসার ও ওয়াং কেলিয়ান এলাকায় পাচারকারীদের আস্তানার খোঁজ পেলেও বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে রোববার।এদিন ১৭টি পরিত্যক্ত ক্যাম্পে ৩০টি গণকবরের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদি। পরদিন এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য দেন দেশটির পুলিশ প্রধান।মিয়ানমারে সরকারের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরেই সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে টওতিবেশী মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।বাংলাদেশ থেকেও কাঠের নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মুখে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাগর থেকে উদ্ধার করে সাময়িক আশ্রয় দিতে ও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।এছাড়া বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় সেখানে আটক বাংলাদেশির ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এর আগে রোববার মালয়েশিয়ার পারলিস রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী শহর পাদাং বেসারের গভীর জঙ্গলে অন্তত ৩০টি গণকবর পাওয়া গেছে। এসব গণকবরে প্রায় কয়েকশ অভিবাসীর মরদেহ রয়েছে।
গণকবরের এসব মরদেহ বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গ মুসলমান অভিবাসীদের বলে দাবি করেছে মালয়েশিার একটি গণমাধ্যম। গণমাধ্যমটি জানায়, আবিষ্কৃত গণকবরের স্থানটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। রোববার মালয় মেইল অনলাইনের বরাত দিয়ে দ্য স্টার পত্রিকা এ খবর জানায়। এতে বলা হয়, থাইল্যান্ডের শংখলা প্রদেশে পাওয়া গণকবরের সঙ্গে এগুলোর মিল রয়েছে।খবরে বলা হয়, শুক্রবার বিকেলে বুকিত আমান থেকে পুলিশ কমান্ডো ও ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে। পুলিশ ও ফরেনসিক টিমের অনেক গাড়ি সীমান্ত শহর পাদাং বেসার থেকে আসতে দেখা গেছে।যদিও গণকবরের সঠিক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সূত্রটি জানিয়েছে আগামীকাল এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক খালিদ আবু বকর সংবাদ সম্মেলন করবেন।সূত্রটি গণমাধ্যমকে বলেছে, যতটা জানি, অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছে পুলিশ। তাই কোনও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
পাদাং বেসার জেলা পুলিশ সদর দফতরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, গণকবরের অবস্থান একটি সংরক্ষিত এলাকায়, যেখানে সাধারণ নাগরিকরা প্রবেশ করতে পারে না।তিনি বলেন, পুলিশ স্থানটি ঘেরাও করে রেখেছে। এটি একটি পাহাড়ি এলাকা।একজন গ্রামবাসী বলেছেন, সম্ভবত পাদাং বেসারে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। শুধু থাইল্যান্ডে নয়, অভিবাসীরা এখানেও কোথাও মরে থাকতে পারে।তিনি বলেন, আপনি কোথায় মরতে চান সেটা আপনি পছন্দ করে রাখতে পারেন না।
জঙ্গলে মানবপাচারকারীদের আস্তানায় পাচারের শিকার মানুষের হাড়গোড় পাওয়ার এক মাসের মাথায় মালয়েশিয়ার সীমান্ত এলাকায় ১৭টি পরিত্যক্ত ক্যাম্পে একই ধরনের গণকবরের সন্ধান মিলেছে।মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাহিদ হামিদিকে উদ্ধৃত করে দেশটির রাষ্ট্রায়াত্ত বার্তা সংস্থা বারনামার এক প্রতিবেদনে রোববার বলা হয়, পেরলিস প্রদেশের থাই সীমান্ত সংলগ্ন পেদাং বেসার ও ওয়াং কেলিয়ান এলাকায় পাচারকারীদের এসব আস্তানার খোঁজ পেয়েছে পুলিশ ও কমান্ডোরা।পুলিশের মহা পরিদর্শক ও উপ মহা পরিদর্শক এখন সীমান্তের ওই এলাকায় আছেন।
ওগুলো পাচারের শিকার হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের কবর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি ও রয়টার্স সেখানে অন্তত ৩০টি গণকবর পাওয়ার তথ্য দিয়েছে।তবে সেখানে কতজনের দেহাবশেষ পাওয়া গেছে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি মালয়েশিয়ার মন্ত্রী।কুয়ালালমপুরে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোনো কোনো কবরে তিন বা চারজন,আবার কোনোটিতে একজনের লাশ আছে। আমাদের গণনা এখনো শেষ হয়নি।
তবে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়ার স্টার অনলাইন বলেছে, এসব কবরে শ’খানেক কঙ্কাল থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।মালয়েশিয়া সীমান্তের যে অংশে এসব গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে, তার উল্টো দিকে থাইল্যান্ডের পাহাড়ি এলাকার নামও পেদাং বেসার। শংখলা প্রদেশের ওই এলাকাতেই গতমাসে কয়েকটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়। এরপর মানবপাচারে জড়িত সন্দেহে জেলার মেয়রকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
ধারণা করা হয়, বিভিন্ন স্থান থেকে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নৌকায় করে প্রথমে আনা হয় থাইল্যান্ডে। সেখানে জঙ্গলের মধ্যে পাচারকারীদের বিভিন্ন ক্যাম্পে তাদের রাখা হয়। পরে সময় সুযোগ মতো তাদের আবার নৌকায় করে অথবা স্থলপথে মালয়েশিয়া বা ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়।আর এক্ষেত্রে শংখলা প্রদেশ ও পেদাং বেসারের ওই দুর্গম এলাকা পাচারকারীদের একটি রুট হিসাবে ব্যবহৃত হয় বলে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।সম্প্রতি বিবিসির একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, থাই সমাজের প্রায় সবাই’ কোনো না কোনোভাবে মানবপাচারে যুক্ত।তবে মালয়েশিয়ায় এই প্রথম গণকবরের সন্ধান মিলল, যদিও কিছুদিন আগে দেশটির সরকার দাবি করেছিল, সেখানে পাচারকারীদের কোনো ক্যাম্প নেই।
পেদাং বেসার ও ওয়াং কেলিয়ান এলাকায় পাচারকারীদের অস্তানার খবর নিশ্চিত হওয়ার পর বিস্মিত জাহিদ হামিদি সাংবাদিকদের বলেন, অন্তত পাঁচ বছর ধরে মানবপাচারকারীরা এসব ক্যাম্প চালিয়ে আসছে বলে পুলিশের মনে হয়েছে। সেখানে অভিযান শুরুর আগে আগে পাচারকারীরা পালিয়ে যায়।পুলিশ ও ভ্যাট ৬৯ কমান্ডো বাহিনী এখনও ওই এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। এ কাজে তারা থাইল্যান্ডের সহায়তা নিচ্ছে।
আমরা হয়তো আরও লাশের খবর পাব।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার পুলিশ কমিশনার ‘শিগগিরই’ আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত জানাবেন।স্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তা স্টার অনলাইনকে বলেছেন, পেদাং বেসারের সেখানে গণকবর পাওয়া গেছে, সেটি একটি সংরক্ষিত এলাকা। সেখানে সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার নেই।পাহাড়ি ওই এলাকা এখন ঘিরে রাখা হয়েছে, বলেন তিনি।
মিয়ানমারে সরকারের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরেই সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেশি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।বাংলাদেশ থেকেও কাঠের নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।গতমাসের শেষে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে গণকবর পাওয়ার পর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের কয়েকটি নৌকা থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়।সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মুখে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাগর থেকে উদ্ধার করে সাময়িক আশ্রয় দিতে ও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।