দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ মে: বাল্যাবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৪ এ মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বহাল রাখার দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল।সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’র ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুমকি দেন তিনি। এসময় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, সহ-সভানেত্রী রেখা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও চেয়ারপারসন ড. হামিদা হোসেন, উইমেন ফর উইমেন’র সভাপতি জামিয়া কে হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সুলতানা কামাল বলেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স ন্যূনতম ১৮ এবং ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের কোন রকম টালবাহানা চলবে না।এই দাবি মানা না হলে আমরা কঠোর প্রতিবাদ ও আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো, বলেন তিনি। আসক‘র নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আপত্তি ও প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সুস্পষ্ট সুপারিশসহ একটি স্মারকলিপি গত বছরের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী বরাবরে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ ও বাংলাদেশের প্রচলিত শিশু আইনে বয়স ১৮ বছরের কম হলে তাকে শিশু বলা হচ্ছে, এক্ষেত্রে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানো হলে তা প্রচলিত আইনের সঙ্গেও সাংর্ঘষিক হবে।গণস্বাক্ষারতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, কাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই আইন পাশ করা হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। যারা এই আইন পাশ করতে চাচ্ছেন, তারা কী তাদের সন্তানদের ১৬ বছরে বিয়ে দেবন?
মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ বছর করার সিদ্ধান্তটি আত্মঘাতী উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আইন করার অর্থ হচ্ছে বাল্য বিবাহকে উৎসাহিত করা।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর।
মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করার সরকারি প্রস্তাব বাতিলের দাবি জানিয়েছে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি নামের একটি মোর্চা। নয়তো কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন নারী নেত্রী রোকেয়া কবীর। তিনি বলেন, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ করা হবে একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীর বিয়ের বয়স ১৮ বছর থেকেও বরং বাড়ানো উচিত। শুধু বিয়ের বয়স বাড়ানো হলেই বাংলাদেশে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ছে, তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
১৮ বছরের আগে কোনো মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া মানে বাল্যবিবাহ প্রবর্তন করা।জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদ ও বাংলাদেশে প্রচলিত আইনের বরাত দিয়ে রোকেয়া কবীর বলেন, ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কেউ শিশু বলে স্বীকৃত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, ১৬ বছরের নিচে কোনো নারীর সম্মতিতে বা অসম্মতিতে যৌনমিলন ধর্ষণের অপরাধ। এখন যদি মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ করে আইন করা হয়, তবে তা হবে আইন করে শিশু ধর্ষণ। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে বিয়ের বয়স কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হচ্ছে আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আইন চূড়ান্ত হওয়ার আগেই সরকার বাল্যবিয়ে রোধে একটি জাতীয় কর্মপরিকল্পনা করেছে। সেখানে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর ধরা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি তা বাতিলের দাবি জানানো হয়।বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, তারা শিগগিরই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি স্মারকলিপি দেবেন।