দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ মে: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বাদীর দেওয়া সাক্ষ্য প্রত্যাহার করার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত। খালেদা জিয়ার পক্ষে জেরা করার জন্য ১৮ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত।ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার শুনানির এই তারিখ ধার্য করেন। সোমবার ঢাকার বকশীবাজার এলাকার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ভবনে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এ মামলার বিচারকাজ শুরু হয়। আদালতে হাজিরা দেন খালেদা জিয়া।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে পৃথক এক আবেদনে মামলার সাক্ষী ও বাদী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা হারুনুর রশিদের জবানবন্দি প্রত্যাহার করার আবেদন জানানো হয়। আদালত আবেদন নাকচ করে দেন। পরে আইনজীবীরা জানান তাঁরা জেরার জন্য প্রস্তুত নেই। সময় চেয়ে তাঁরা পৃথকভাবে আবেদন করেন। আদালত তা মঞ্জুর করেন।খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তাঁরা হাইকোর্টে আবেদন জানাবেন। সোমবার মামলায় সাক্ষ্য-জেরার দিন ধার্য ছিল। মামলায় হাজিরা দিতে সকাল ১০টার কিছু আগে গুলশানের বাসভবন থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপির চেয়ারপারসন। বেলা ১১টার কিছু আগে আদালতে পৌঁছান তিনি।
মামলার শুনানি ও খালেদা জিয়ার হাজিরাকে কেন্দ্র করে আদালত ও এর আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।এর আগে ৫ মে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। সেদিন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু আহমেদ জমাদার ২৫ মে পরবর্তী সাক্ষ্য-জেরার তারিখ ধার্য করেন।এর আগে ২৫ ফেব্র“য়ারি খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় তাঁর জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এদিন জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হন।মামলা দু’টির প্রধান আসামি আদালতে পৌঁছানোর আগেই সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়।শুরুতেই খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবীরা আসামি বেগম জিয়া আদালতে আসার পথে রয়েছেন মর্মে বিচারককে অবহিত করেন। ওই সময় বিচারক বলেন, ঠিক আছে তিনি আসুক, আমরা সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করি।এরপর জিয়া চ্যারিটেবল মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদের অবশিষ্ট জবানবন্দি গ্রহণ শুরু করেন।আদালত জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণরত অবস্থায় খালেদা জিয়া সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে আদালতে পৌঁছান। আদালতে ঢোকার পর তাকে একটি চেয়ারে বসতে দেয়া হয়।
খালেদা জিয়া আদালতে পৌঁছানোর পরই সাক্ষি দেখে দেখে সাক্ষ্য দিচ্ছেন এবং পাবলিক প্রসিকিউটর সাক্ষিকে বলে দিচ্ছেন এ অভিযোগ তুলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হট্টগোল শুরু করেন। প্রায় ৫ মিনিট হট্টগোল চলাবস্থায় বিচারক বলেন, সাক্ষি এজাহার দেখে না বলতে পারলেও নোট নিয়ে বলতে পারবেন বলে জানিয়ে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজলকে তার চেয়ারে বসতে বলে ফের জবানবন্দি গ্রহণ শুরু করেন এবং ১১টা ১০ মিনিটে জবানবন্দি শেষ হয়। এরপর বিচারক মামলাটিতে আসামি মুন্নার আইনজীবী মিজানুর রহমানকে জেরার জন্য বলেন।
কিন্তু এ আইনজীবী জেরার জন্য টওস্তুত নয় বলে উল্লেখ করলে বিচারক জিয়া অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবীদের জেরা করতে বলেন।ওই সময় আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন জিয়া অরফানেজ মামলায় বাদীর দেয়া জবানবন্দি বাতিলের আবেদন করে বলেন, মামলাটিতে বেগম জিয়ার অনুপস্থিতিতে জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জবানবন্দি গ্রহণের ক্ষেত্রে বাদীকে দেখে দেখে বলার সুযোগ দেয়াসহ ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করা হয়নি। তাই জবানবন্দি বাতিল করা আবশ্যক।ওই সময় দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, যথাযথভাবেই ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসরণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র সময়ক্ষেপন করার জন্য এ ধরনের আবেদন দেয়া হচ্ছে। শুনানি শেষে বিচারক জবানবন্দি বাতিলের আবেদন নামঞ্জুর করে জেরার জন্য ফের আহ্বান জানান।
ওই সময় আইনজীবী মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা নামঞ্জুর আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব এ জন্য আমাদের সময় দিন। এছাড়া বার কাউন্সিল নির্বাচনে আমরা ব্যস্ত থাকায় জেরা করার জন্য প্রস্তুতও নই।ওই সময় বিচারক বলেন, উচ্চ আদালতে যাওয়া আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার এ জন্য আদালতের কার্যক্রম থেমে থাকবে না। তবে আপনারা জেরার জন্য প্রস্তুত নন এই কারণে আগামী ১৮ জুন পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি করলাম।সাক্ষ্য গ্রহণ এবং শুনানির পুরো সময় খালেদা জিয়া চুপ করে বসে ছিলেন এবং আদালতের কার্যক্রম বেলা সাড়ে ১২টায় শেষ হওয়ার পর তিনি আদালত অঙ্গন ত্যাগ করেন।এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে আসা উপলক্ষে আদালত অঙ্গনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
গত ১৯ মার্চ ওই আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় দুই মামলায় খালেদা ও তারেক রহমানসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর থেকেই এ বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আসছিলেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ওই অনাস্থার মধ্যেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করেন তিনি। এরপরই গত ১৮ ডিসেম্বর তাকে বদলি করে আবু আহমেদ জমাদারকে নিয়োগ দেয়া হয়।এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলাটি করা হয়।২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।আসামি তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু হতেই পলাতক।
অন্যদিকে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এ মামলায় ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়।মামলাটিতে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী এবং তার তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আসামি।