দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ মে: রাজধানীতে মাইক্রোবাসে গারো সম্প্রদায়ের এক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা নিতে বিলম্ব করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের শুনানির পর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দ সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা তিন সপ্তাহের মধ্যে জানাতে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে মামলা নিতে বিলম্ব ও অবহেলার জন্য দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না এবং ধর্ষিতাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না- রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন নারীপক্ষ, মহিলা পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আইন ও সালিস কেন্দ্র এবং ব্লাস্ট এ রিট পিটিশনটি দায়ের করে। আগামী ৩১ মের মধ্যে এই তালিকা আদালতে দাখিল করতে হবে। শুনানি শেষে আদালত রুল জারি করে নির্দেশনা দেয়।
আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও আইনুন নাহার সিদ্দীকা।অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম।গত বৃহস্পতিবার ২১ মে রাতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় গারো সম্প্রদায়ের এক তরুণী কাজ শেষে উত্তরার বাসায় যাওয়ার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় পাঁচ ব্যক্তি তাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। পরে তারা ওই তরুণীকে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোডে ফেলে রেখে যায়। এ ঘটনার পর শুক্রবার ধর্ষণের শিকার মেয়েটির স্বজনেরা ভাটারা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তরুণীর স্বাস্থ্য পরীক্ষায়ও ধর্ষনের আলামত পাওয়া গেছে।তরুণী যমুনা ফিউচার পার্কের একটি পোশাকের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায়।
রুলে ধর্ষণের ঘটনায় এজাহার, সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো এবং পরীক্ষা করতে বিলম্ব কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, ধর্ষিতাকে কেন ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না এবং দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অবহেলার জন্য কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক,ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, উত্তরা,খিলক্ষেত,গুলশান, ভাটারা থানার ওসি এবং ভাটারা থানার ডিউটি অফিসারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রুল ছাড়াও আদালত অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেন। আদেশে বাংলাদেশের সব থানায় ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ ও জন্ম পরিচয় নির্বিশেষে বৈষ্যমহীনভাবে সবার সেবা নিশ্চিতে একটি সার্কুলার জারি করার জন্য স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও পুলিশ কমিশনারকে দিয়েছেন।এছাড়াও যৌন হয়রানি ও যৌন সহিংসতা রোধে বিদ্যমান আইন ও প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, আইনজীবী ও নারী অধিকারকর্মীদের নিয়ে একটি কমিটি করতে আবেদনকারীদের কাছে নামের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট।এছাড়াও আদালত অন্তবর্তীকালীন আদেশও দিয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠন নারীপক্ষ, মহিলা পরিষদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং ব্লাস্ট-এর পক্ষথেকে রোববার সংগঠনের করা এক রিট আবেদনের ওপর এই আদেশ দেওয়া হয়।আইনুন নাহার সিদ্দীকা জানান, বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য ১৪ জুন আবার কার্যতালিকায় থাকবে।