দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ মে: রাজধানীতে মাইক্রোবাসে গারো তরুণীর সম্ভমহানির ঘটনার তিন দিনেও জড়িতরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি।রোববার বিকালে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন রাস্তাঘাটে মা-বোনদের চলাচলের নিরাপত্তা নেই। পয়েলা বৈশাখে নারী সম্ভমহানির জঘন্য ঘটনার ক্ষত না শুকাতেই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির গারো সম্প্রদায়ের এক তরুণীর সম্ভমহানির ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত করেছে। এই ঘটনা দেশের জন্য লজ্জার।রিপন বলেন, ‘ঘটনার এতোদিন পরও মানুষ নামের ওইসব জানোয়ারদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনতে না পারায় কালচার অব ইমপিউনিটি’ আরো প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।
গারো উপজাতির এক তরুণীর সম্ভমহানির ঘটনায় সরকারের ভুমিকার সমালোচনা আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, সরকার এই ঘটনার দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, তাদের (সরকার) কোনো নড়াচড়া নেই।বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এক গারো তরুণীকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে দেড় ঘণ্টা ধরে চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ করেছে পাঁচ যুবক। এরপরদিন শুক্রবার ভাটারা থানায় মামলা করেছে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির পরিবার। বর্ষবরণের উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের যৌন নিপীড়নের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলনের মধ্যেই ধর্ষণের এ ঘটনা ঘটল। ২১ বছর বয়সী ওই তরুণী যমুনা ফিউচার পার্কের একটি পোশাকের দোকানে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করেন। বড় বোনের সঙ্গে উত্তরায় থাকেন খালার বাসায়। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়ায়।
বিএনপির মুখপাত্র বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নিবার্চনে যে সংসদ গঠিত হয়েছে, তারা জনগনের কথা বলে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবণতি, নারীর সম্ভমহানির অসংখ্য ঘটনা, দ্রব্যমূল্যের উধ্বর্গতি,ধান-চাল-গম সরকারিভাবে সংগ্রহের নীতি মার খাওয়ায় শাসকদলীয় মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপটে দেশের কৃষকরা আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।তিনি বলেন,এমনি পরিস্থিতিতে সরকার নির্বিকার ভুমিকা পালন করে চলেছে।দেশে আজ কোনো জবাবিহিতি কোনো সরকার নেই্। সংসদে গৃহপালিত একটি বিরোধী দল আছে। তারা সরকারের প্রশংসা করে বাহাবা পায়।জনগণের সঙ্গে থাকার দলের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে একটি উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আমরা সরকারের সকল খারাপ নীতি ও পদক্ষেপের সমালোচনা করছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি, জানাব। সাংবিধানিক সীমার মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা এসব কাজ করব।
রিপন বলেন, কেবল তাই নয়, জনগণ ও দেশের স্বার্থে সকল ইস্যুতে আমরা বরাবরের মতো ইতিবাচক ভুমিকা পালন করব। নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরব। আমরা বার বার বলেছি, ঘৃণা ও সহিংসতা গণতন্ত্রের পথ নয়। আমরা জনগনের পক্ষে জনস্বার্থ সকল ইস্যুতে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা অব্যাহত রাখবো।
সরকারের প্রতি আহবান রেখে দলের মুখপাত্র রিপন বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, সরকার বিরোধী মতকে সহ্য করে বিরোধী দলের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলো চর্চার জন্য পথকে সংকুচিত করার নীতি থেকে সরে আসবেন।তিনি বলেন, ‘সরকার অতিদ্রুত দেশে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নিবার্চন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে বিএনপিসহ সকল দলের সাথে অর্থবহ সংলাপের আন্তরিক সূচনার সূত্রপাত ঘটাবেন। তা না করে তারা যদি দিবাস্বপ্ন দেখে থাকেন ২০১৯ সালেও ভোটারবিহীন একটি নিবার্চন করবে। তাদের বলব, বিনা ভোটে নিবার্চন হয় না, বিদেশীদের কাছে সরকারের কোনো ভাবমূর্তি থাকে না।ধান-চাল-গম সংগ্রহের সরকারের একগুঁয়েমি নীতির কারণে কৃষকরার সর্বশান্ত হচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে সরকার ঘোষিত মূল্যে ধান-চাল-গম সংগ্রহের দাবিও জানান তিনি।তিনি বলেন, সরকারকে বলব, দ্রুত কৃষকদের বাঁচানোর পদক্ষেপ নিন।
নইলে আগামীতে কৃষকরা ফসল উৎপাদনের নিরুৎসাহিত হয়ে পড়বে। দেশ খাদ্য আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।সমুদ্রবক্ষে হাজার হাজার বাংলাদেশীদের উদ্ধারে সরকারের ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনাও করেন তিনি।সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা আফজাল এইচ খান, শাহজাদা মিয়া, আবদুস সালাম আজাদ, হাবিবুর রহমান হাবিব, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আসাদুল করীম শাহিন, হেলেন জেরিন খান, শাম্মী আখতার, সেলিম রেজা হাবিব, আকম মোজাম্মেল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।