1432455535

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ মে: আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে।

আগামী ২৮ মে এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ।এর ফলে ২৭ মে নির্ধারিত বার কাউন্সিলের নির্বাচন আর হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ) এ বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন বার কাউন্সিল নির্বাচনের প্রার্থী আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী।এর আগে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২১ মে) বার কাউন্সিলের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ওইদিনই এ আদেশ স্থগিত চেয়ে বার কাউন্সিল এবং তিন প্রার্থী আপিল আপিল আবেদন করেন।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচন (২০১৫) বিষয়ে আদেশের দিন আগামী ২৮ মে ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কাজেই ২৭ তারিখে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই।এরপর হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে যায় বার কাউন্সিল। চেম্বার আদালত তা শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। আজ আপিল বিভাগে ওই আবেদন শুনানি শেষে ২৮ মে আদেশের দিন ধার্য করা হয়।

১৭ মে পৃথক দুটি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ইউনূস আলী আকন্দ। ভোটার তালিকায় ত্রুটি ও তা সময়মতো প্রকাশ না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বার কাউন্সিল নির্বাচনের তফসিল অবৈধ ঘোষণা চেয়ে একটি আবেদন করা হয়। অপর আবেদনে তিনি বার কাউন্সিল (সংশোধিত) আইন, ২০০৩-এর ৩ ধারা অবৈধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকের ঘোষণা চান। ২১ মে আবেদন দুটির পক্ষে ইউনূস আলী আকন্দ নিজে শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

ওই আদেশের পর ইউনূস আলী বলেন,স্থগিতাদেশের পাশাপাশি আদালত দুটি রুল দিয়েছেন। বার কাউন্সিল নির্বাচনের তফসিল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা একটি রুলে আদালত জানতে চেয়েছেন। আরেকটি রুলে আদালত জানতে চান, বার কাউন্সিল আইনের ৩ ধারা কেন অবৈধ ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না। চার সপ্তাহের মধ্যে আইনসচিব ও বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে হবে।গত ২৫ মার্চ বার কাউন্সিল নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ৯ এপ্রিল ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়, যাতে ভোটার সংখ্যা দেখানো হয় ৪৮ হাজার ৪৬৫ জন।

২০ মে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে ভোটার তালিকায় ত্রুটি ও একই নাম একাধিকবার থাকার অভিযোগ জানিয়ে কাউন্সিলের নির্বাচিত পাঁচ সদস্য এবং ১০১ জন আইনজীবী ২৯ এপ্রিল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিবকে চিঠি দেন। এতে অভিযোগ করা হয়, আইনজীবীদের নিযন্ত্রক সংস্থা হলেও কাউন্সিল নিজস্ব নথির সাহায্য না নিয়ে আইনজীবী সমিতিগুলোর পাঠানো সদস্য তালিকা ধরেই ভোটার তালিকা তৈরি করেছে। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ১২ মে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অ্যাটর্নি জেনারেল বিশেষ সভা ডাকেন, যাতে নির্বাচন সাত দিন পিছিয়ে ২৭ মে করা হয় এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ইউনূস আলী জানান, নিয়ম অনুসারে নির্বাচনের এক মাস আগে ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ২৭ মে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ভোটার তালিকা চূড়ান্ত হয়নি। এখন নির্বাচন স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার, ১৯৭২ অনুসারে সরকার অ্যাডহক কাউন্সিল গঠন করতে পারবে।এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ।

অপরদিকে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম. আমীর উল ইসলাম। ভোটার তালিকা এবং ভোটদানের পদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা দুটি রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার বার কাউন্সিলের নির্বাচন স্থগিত করার আদেশ দেন।বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সংশোধনী আইন ২০০৩ এর ধারা (ত) কেন অবৈধ এবং সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

চার সপ্তাহের মধ্যে আইনসচিব ও বার কাউন্সিলকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।রুল শুনানি না হওয়া পর্যন্ত ১৯৭২ সালের বার কাউন্সিল আদেশ অনুযায়ী ৭/১-৪৬ অনুযায়ী এডহক কমিটি গঠনের আবেদন জানানো হয় রিটে। বার কাউন্সিল নির্বাচন ২০১৫ তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং নির্বাচন স্থগিত চেয়ে এ রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়। চলতি মাসের ২০ তারিখে বারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও পরবর্তীতে তা পিছিয়ে ২৭ মে নির্ধারণ করা হয়।