24-05-15-PM-5

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ মে: অবৈধভাবে সমুদ্রপথে যারা বিদেশে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানসিকভাবে যারা অসুস্থ তারাই দালাল ধরে অনিশ্চয়তার পথে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ জন্য শ্রমিক ও দালাল উভয়েরই শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রোববার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশ দেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা অবৈধভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে সমুদ্র পাড়ি দিচ্ছে, যারা যাচ্ছে এবং যারা সহায়তা করছে উভয়েরই শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।তারা যাতে অবৈধভাবে বিদেশে যেতে না পারে এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের জ্বালাও- পোড়াওয়ের কারণে সরকার পিছিয়ে পড়েছে।

যারা মানবপাচারে জড়িত, তাদের পাশাপাশি যারা সাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে অভিবাসনের চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে বলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা এভাবে অবৈধভাবে যাবে, যারা দালাল তাদের যেমন শাস্তি হতে হবে, যারা যাবে তাদেরও শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, তারা তো আমাদের দেশের সুনাম ক্ষুন্ন করছে।

সম্প্রতি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাগরপথে মানবপাচার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হওয়ার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য এল। বাংলাদেশের নাগরিকদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাচারকারীদের মাধ্যমে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতায় দুঃখ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুর্ভাগ্য হলো, এতো সুযোগ সুবিধা করে দেওয়ার পরও মানুষ দালালের হাতে টাকা দিয়ে একবারে একটা অনিশ্চিত জায়গায় যাচ্ছে। কেন যে এভাবে যাচ্ছে….,স্বগতোক্তি প্রধানমন্ত্রীর।তিনি বলেন, সবাই যে অভাবের তাড়নায় যাচ্ছে তা নয়। মনে হচ্ছে, তারা একটা সোনার হরিণের পেছনে ছুটছে। বাইরে গেলেই মনে হয় অনেক টাকা।

গতমাসের শেষে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে পাচারকারীদের একটি পরিত্যক্ত আস্তানায় গণকবর পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাগর পথে মানবপাচারের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়।এরপর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের কয়েকটি নৌকা থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, যারা বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য।

মিয়ানমারে সরকারের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরেই সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেশি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।বাংলাদেশ থেকেও কাঠের নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার এই প্রবণতা সংক্রামক আকার ধারণ করেছে মন্তব্য করে সরকারপ্রধান বলেন, মানসিক অসুস্থতার মতো হয়ে যাচ্ছে মানুষের। বাইরে যেতে হবে, গেলেই যেনো অনেক টাকা পাবে।এতে জীবনটা যাচ্ছে, অথবা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার জন্য অর্থ না ব্যয় করে তা দিয়ে দেশেই কিছু করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, দালালের হাতে যে টাকা দিচ্ছে, সে টাকা দিয়ে যদি নিজেরা কিছু করে- তাহলে অনেক ভালভাবে থাকতে পারবে।

অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার বিপজ্জনক দিকটি তুলে ধরে এই প্রবণতা বন্ধের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা।এটা অনেক দুর্ভাগ্যজনক। আমি মনে করি, প্রচার চালানো দরকার। দালালদের টাকা দিয়ে বিদেশ যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ এরা ধোঁকার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাগরে ভেসে চলে যাওয়ার চেষ্টা..। তাদের তো ধারণাই নাই যে, কোথায় যাবে। বনে জঙ্গলে এখন লাশ পাওয়া যাচ্ছে।অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার পথ বন্ধের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, এরা নিজের জীবনটা বিপদে ফেলছে।

তাদের জন্য একটা ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। তাহলে, হয়তো এগুলো থামবে।সার্বিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের মুখে বিপদগ্রস্ত মানুষদের সাগর থেকে উদ্ধার করে সাময়িক আশ্রয় দিতে ও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।এছাড়া বাংলাদেশ সরকারও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার সহায়তায় সেখানে আটক বাংলাদেশির ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৬ লাখ এবং সৌদি আরবে ৮ লাখেরও বেশি অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়মিত হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারি পর্যায়ে আলোচনার ভিত্তিতে ২০১২ সালে মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার পুনরায় চালু হয়েছে। বিদেশগামীদের হয়রানিও অনেক কমেছে।আওয়ামী লীগ সরকারকে শ্রমিক বান্ধব অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,তাঁর সরকার শ্রমিক শ্রেণীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং এ লক্ষ্যে দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে ২৯টি শ্রমিক কল্যাণ কেন্দ্র সেবা দিয়ে যাচ্ছে।তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে একটি শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন এবং ১৯৭৪ সালের শ্রম পরিদপ্তর ও ট্রেড ইউনিয় রেজিস্ট্রেশন পরিদপ্তরকে একীভূত করে শ্রম পরিদপ্তর গঠন করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার শ্রম আইন-২০০৬ সংশোধনের মাধ্যমে সময়োপযোগী এবং শ্রমিকদের স্বার্থে ২০১৩ সালের জুলাই মাসে শ্রম আইন সংশোধন করেছে। এ সংশোধনীর পর গার্মেন্টস সেক্টরে এ পর্যন্ত ৩১৮টি ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন খাতে ৭ হাজার ৪৬৭টি রেজিস্ট্রার্ড ট্রেড ইউনিয়ন রয়েছে।শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ এবং দেশের শিল্পায়ন, কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন ও বহিঃবাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে জাতীয় শিল্প স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। গৃহ কর্মে সংশ্লিষ্ট বিপুলসংখ্যক শ্রম গোষ্ঠীকে শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সুরক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিতের পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের অবসরের বয়স সীমাও ৫৭ থেক ৬০ বছরে উন্নীত হয়েছে।তিনি বলেন, শিশুদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা কিংবা নৈতিকতার জন্য হানিকর এমন ৩৮টি কাজকে তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নির্ধারণ করে শিশু শ্রম নীতিমালা ২০১০ প্রণয়ন করা হয়েছে।শিশু শ্রম নিরসনে ইতোমধ্যে ৩টি পর্যায়ে ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে।গার্মেন্টস কারখানার নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পসহ সকল শিল্পে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে। এ অধিদফতরের ৩২টি পরিদর্শন টিম ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টসসহ মোট ১৭ হাজার ৯৮০টি শিল্প-কারখানা পরিদর্শন করেছে।