দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ মে: ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা লিখে যান। আপনাদের লেখার মধ্য দিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো।তিনি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, আপনারা লিখুন। আপনাদের লেখার মধ্য দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিন। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই। রোববার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সেমিনার কক্ষে সিটি কর্পোরেশন বিটের সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।সভায় তিনি সিটি কর্পোরেশন নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা, অভিযোগ ও পরামর্শগুলো শোনেন এবং সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানের পাশাপাশি পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর আশ্বাস দেন।এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা লিখে যান। আপনাদের লেখার মধ্য দিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। বস্তুনিষ্ঠভাবে লিখুন। আপনাদের লেখার মধ্য দিয়ে আমাদের চোখ খুলে দিন। আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।
সাঈদ খোকন বলেন, কিছু আলোচনা-সমালোচনা থাকবেই। এটাকে আমরা টলারেট করবো। তবে লেখার মধ্যে বাহাস থাকবেন না।মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতি, বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা, জনগণের দুর্ভোগ, কর্পোরেশনের জনসংযোগ বিভাগের দুর্বলতা, জনসংযোগ বিভাগকে আধুনিকীকরণ, মিডিয়া সেন্টার স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয় তার সামনে তুলে ধরেন।কোটি মানুষের শহরে বিড়ম্বনা লাঘবে প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে পাবলিক টয়লেট বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র সাঈদ খোকন।বিশেষ করে নারীদের জন্য টয়লেট স্থাপনের লক্ষ্যে কয়েক দিনের মধ্যে পেট্রোল পাম্প ও সিএনজি স্টেশন মালিকদের সঙ্গে বসবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
রোববার নগর ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় পাবলিক টয়লেটের এই ঘোষণা দেন সাঈদ খোকন। গত ২৮ এপ্রিল ভোটে বিজয়ী হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার এই ধরনের প্রথম সভা।পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট না থাকায় নগরবাসীর দুর্ভোগের কথা উঠে আসে ঢাকা দক্ষিণের প্রথম নির্বাচিত মেয়র খোকনের কথায়।কাকলী থেকে শাহবাগ আসতে দুই ঘণ্টা-তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। এ সময় ওয়াশরুমের প্রয়োজন হতে পারে। ধানমণ্ডি এলাকায়ও একই সমস্যা। যে পেট্রোল পাম্পগুলো রয়েছে, সেই পেট্রোল পাম্পগুলোর মালিকদের আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমরা ডাকছি, সেখানে টয়লেট করে দেওয়া যায় কি না, বিশেষ করে নারীদের জন্য, বলেন তিনি।
পেট্রোল পাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় সেখানে মানসম্মত টয়লেট করে দেওয়ার পরিকল্পনা সিটি করপোরেশনের তরফ থেকে নেওয়া হবে বলে জানান মেয়র। সমীক্ষায় দেখা যায়, সিটি করপোরেশন নির্মিত মোট ৬৯টি পাবলিক টয়লেটের মধ্যে এখন ৪৭টি নামে টিকে আছে। সেগুলোর মধ্যে পাঁচটি মোটামুটি ব্যবহার উপযোগী। বাকিগুলোর মধ্যে দুটি ভেঙে ফেলা হয়েছে, ১০টি বন্ধ হয়ে গেছে এবং ১০টিতে কোনো সেবা নেই।২০১১ সালে সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজ ও ওয়াটার এইড পরিচালিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ৮০০ বর্গকিলোমিটারের এই শহরে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে পাঁচ লাখ ভাসমান, রিকশাচালক ১০ লাখ, অন্যান্য জীবিকার মানুষ ১০ লাখ, নিয়মিত পথচারী ২০ লাখ এবং ঢাকার বাইরে থেকে আসা ১০ লাখসহ মোট ৫৫ লাখ মানুষের প্রতিদিন চলাচলের সময় টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।
ঢাকার বাসিন্দাদের প্রায় অর্ধেক নারী হলেও পাবলিক টয়লেটগুলোর প্রায় ৭৫ শতাংশেই নারীদের জন্য কোনো আলাদা ব্যবস্থা নেই। নেই শিশু ও প্রতিবন্ধীদের ব্যবহার উপযোগী টয়লেট।পাবলিক টয়লেটের স্বল্পতা, সচেতনতা আর নজরদারির অভাবে রাজধানীর অনেক ফুটপাতই মল-মূত্রের গন্ধে হাঁটার জন্য অস্বস্তিকর। শহরের অলি-গলি, প্রধান সড়কের আশপাশ প্রায় সবখানেই এ চিত্র নিয়মিত।মতবিনিময় সভায় সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, আপনার লিখবেন, সব সংবাদকেই আমি ইতিবাচকভাবেই দেখি এবং কিছু এদিক-সেদিক হলেও আপনারা লিখবেন।তবে আপনারা একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, কেউ যেন নিজের স্বার্থে আপনাদেরকে ভুল কিছু বুঝিয়ে রিপোর্ট না করাতে পারে। আপনারা লিখবেন, বস্তুনিষ্ঠভাবে লিখবেন।ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের এই ছেলে নিজের বাবাকে উদ্ধৃত করে বলেন, আমার বাবা একটা কথা প্রায়ই বলতেন, সাংবাদিকরা হচ্ছেন ‘আই ওপেনার। আমি তো তখন মেয়র ছিলাম না। এখন আমি বলছি, আপনারা চোখ খুলে দিবেন।কিছু আলোচনা থাকবে, কিছু সমালোচনা থাকবে। এটা আমরা সহ্য করব, বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই নেতা।
সর্বস্তরের মানুষ শহর গড়তে উদগ্রীব থাকার কারণে শহরকে সুন্দর করে গড়ে তোলা মোটেই কঠিন কাজ নয় বলে মন্তব্য করেন সাঈদ খোকন।একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি, এই শহরটাকে পরিচ্ছন্ন শহর করার জন্য সব শ্রেণির মানুষের একটা আকাঙ্ক্ষা আছে। সে যেই পেশারই হোক।সবার মধ্যে আকাঙ্ক্ষা, তার এই শহরটা সুন্দর হোক।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে অনেকে বলেছে, এটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। এত মানুষ এই শহরটাকে ভালো দেখতে চায়, আমার কাছে মোটেই চ্যালেঞ্জিং মনে হয়নি।আমি যেখানেই গিয়েছি, সবার মধ্যে একটা সহযোগিতার মনোভাব দেখেছি। কারও মধ্যেই অসহযোগিতার মনোভাব এখনও খুঁজে পাইনি। আমি জানি না এটা হানিমুন পিরিয়ডের কারণে কি না। তবে এখনও আমার কাছে মনেই হয়নি, এটা খুব একটা টাফ জব। এটা খুবই সম্ভব।নির্বাচনী তহবিল জুগিয়েছে দাবি করে কতিপয় ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশনে ভিড়ছে বলে গুঞ্জনের বিষয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে সাঈদ খোকন বলেন, “এই ধরনের অভিযোগের (তহবিল জোগানোর) কোনো প্রমাণ যদি আমার সামনে এনে দেখাতে পারেন, আমাকে এই টাকা দিয়েছে, তাহলে আমি অন স্পট পদত্যাগ করব। এটা ওপেন চ্যালেঞ্জ, সবার জন্য।আর এটার বিনিময় দেওয়ার তো কোনো সুযোগই নাই। যে বলছে, তাকে ধরে নিয়ে আসবেন আমার সামনে।