দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ মে: মানব পাচারকারীদের দ্বারা হাজার হাজার বাংলাদেশির জীবন বিপন্ন হওয়ার সাম্প্রতিক সংবাদে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।এ দুরবস্থার জন্য অভিবাসন খাতে সুশাসনের ঘাটতি,যোগসাজশের দুর্নীতি ও আইন প্রয়োগের দুর্বলতাকে দায়ী বলে মনে করছে সংস্থাটি।এই চরম দুর্দশার জন্য দায়ী চক্রকে চিহ্নিত করে কোনো প্রকার করুণা বা ভয়ের ঊর্ধ্বে থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একইসাথে টিআইবি বর্তমানে সাগরে ভাসমান কয়েক হাজার বাংলাদেশিদের উদ্ধারে জাতিসংঘ ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করতে একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।রোববার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রে মানব পাচারের ওপর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এটি সুস্পষ্ট যে অভিবাসন ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি, আইন প্রয়োগে দুর্বলতা, পাচারকারীদের পাশাপাশি এক শ্রেণীর ক্ষমতাবান ব্যক্তি, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার যোগসাজশের দুর্নীতির ফলে অভিবাসনে ইচ্ছুক বাংলাদেশের নাগরিকরা এরূপ নির্মম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে দেশীয় পাচারকারীদের সাথে পাচারকৃত দেশে এ জঘন্য ব্যবসার সাথে জড়িত এক শ্রেণীর কুচক্রী মহলের যোগসাজশ ও অন্যদিকে বিদেশে পাচার হতে পারলেই অর্থ সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব এমন ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান প্রত্যাশী সরল, দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে প্রতারিত করে জীবনের ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় আরো একবার প্রতীয়মান হল যে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিশ্চিতে ব্যর্থতা শুধু আর্থ-সামাজিক ক্ষতিই করে না বরং মানুষের জীবন বিপন্ন করে; দুর্নীতি নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
উল্লেখ্য, টিআইবির ২০১২ সালের জাতীয় খানা জরিপের ১৪টি সেবা খাতের মধ্যে শ্রম অভিবাসন খাতে দুর্নীতির শিকার হওয়ার মাত্রা ছিল সর্বাধিক। জরিপ অনুযায়ী শ্রম অভিবাসন খাতে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ দেওয়ার হার ছিল ৭৭শতাংশ এবং নিয়ম বহির্ভূত অর্থের গড় পরিমাণ ছিল প্রায় দুই লাখ টাকা।প্রতিবেদনের তথ্য ও সুপারিশমালা ব্যাপকভাবে আলোচিত হলেও দুঃখের সংশ্লিষ্ট মহল দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
অন্যদিকে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী কিছুদিনের মধ্যেই ২০৮ জন বাংলাদেশিকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনার জন্য সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে টিআইবি। বর্তমানে সাগরে ভাসমান সকল বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের একটি জাতীয় টাস্কফোর্স গঠনের জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে তারা।