দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৩ মে: আন্দামান সাগরে ভাসমানদের অধিকাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে বাংলাদেশ মনে করলেও উল্টো কথা বলছে ইন্দোনেশিয়া৷তাদের বক্তব্য,এর অধিকাংশই বাংলাদেশি৷সিউলে এক বৈঠকে ইন্দোনেশিয়ার কর্মকর্তারা অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপকে একথা জানিয়েছেন বলে দি অস্ট্রেলিয়ান শনিবার এক প্রতিবেদনে বলেছে৷এর দুদিন আগেই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, আন্দামান সাগরে বিভিন্ন নৌকা ও ট্রলারে থাকা অধিকাংশ ব্যক্তিই রোহিঙ্গা৷ এদের মধ্যে বাংলাদেশির সংখ্যা কম৷বিশপ সিউলে পাওয়া তথ্য তুলে ধরে শনিবার অস্ট্রেলিয়ার সংবাদপত্রটিকে বলেন, ইন্দোনেশিয়ার হিসাব অনুযায়ী সাগরে ভাসমানদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ রোহিঙ্গা৷ বাকিরা বাংলাদেশি৷ইন্দোশিয়ান কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, অধিকাংশই বাংলাদেশি৷ তারা অবৈধ শ্রমিক বা আশ্রয়প্রার্থী, শরণার্থী নয়৷ তারা মালয়েশিয়াতে চাকরির খোঁজে যেতে বা প্রলোভনে পড়ে এখানে এসেছে৷
মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের জঙ্গলে সমপ্রতি মানব পাচারকারীদের কয়েকটি আস্তানা ও কবরের সন্ধান মেলার পর অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে কড়া পদক্ষেপ নেয় ইন্দোনেশিয়াসহ এই তিনটি দেশ৷ফলে অবৈধ অভিবাসীবাহী ট্রলার বা নৌকাগুলো কূলে ভিড়তে পারছিল না৷ খাদ্য সঙ্কটে পড়ে নৌকায় নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে অনেকের মারা যাওয়ার খবরও আসে৷এর মধ্যে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের চাপে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া কিছুটা নমনীয় হয়ে ভাসমান ট্রলারে আটকেপড়াদের উদ্ধার করতে রাজি হয়৷ ইন্দোনেশিয়র কর্মকর্তা হাসান ক্লেইব সিউলে বিশপকে বলেছেন, একটি নৌকার যাত্রীদের উদ্ধার করে তারা ৬০০ জনের মধ্যে ৪০০ জন বাংলাদেশি পেয়েছেন৷ইন্দোনেশিয়া বলছে, আন্দামান সাগরে বর্তমানে ৭ হাজারের মতো মানুষ ভাসমান অবস্থায় রয়েছে৷ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যারা জাহাজে আটকা পড়েছে, তারা বাংলা ভাষায় কথা বলে ঠিকই, অনেকে বাংলাদেশি বলছে, তাও ঠিক৷আমাদের দেশের ইয়ং ছেলেপেলেরা কাজের জন্য ভাগ্যান্বেষণে যেতে পারে, কিন্তু এই যে মহিলা ও বাচ্চা-বৃদ্ধরা গিয়েছে, তাদের বেশভূষা দেখবেন, তা দেখলে স্পষ্ট হয় বেশিরভাগ রোহিঙ্গা৷মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার রোহিঙ্গাদের পাঁচ লাখের বেশি বাংলাদেশের আশ্রয়ে রয়েছে৷ এই রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে৷মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করতে নারাজ৷ তাদের ভাষায়, এরা বাংলাদেশি বা বাঙালি৷ ফলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের খবরেও তাদের পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য মেলে৷
অস্ট্রেলীয় মন্ত্রী বিশপ এটাও বলেছেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে গিয়ে সেখানকার অধিবাসীদের সঙ্গে মিশে তারপর চাকরির খোঁজে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে চাইছে৷সাগর পথে অবৈধ অভিবাসী বা আশ্রয়প্রার্থীদের জায়গা নাদেওয়ার নীতিতে বরাবরই কঠোর অস্ট্রেলিয়া৷ তাদের বক্তব্য, এতে মানবপাচারকে উত্সাহিত হয়৷শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট বলেছেন, আমি এ বিষয়ে এমন কিছুই বলব না, যাতে কেউ নৌকায় করে অভিবাসনে উত্সাহিত হয়ে ওঠে৷
আসাদুজ্জামান কামাল অবশ্য বলেছেন,আটকেপড়াদের মধ্যে যারা বাংলাদেশি হিসেব শনাক্ত হবেন, তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকার উদ্যোগ নেবে৷সমুদ্রপথে পাচারের শিকার হয়ে মালয়েশিয়া উপকূলে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের পেনাংসহ উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সাময়িক আশ্রয় দেয়া হতে পারে বলে মালয়েশিয়া জানিয়েছে৷তবে জাতিসংঘ মনে করছে, ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সঙ্কটের মধ্যে নতুন করে এসব অভিবাসীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা কষ্টসাধ্য৷এদিকে, আন্দামান সাগরে ভাসমান কয়েক হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর অধিকাংশই অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক৷ বাকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়েছে ইন্দোনেশিয়া৷এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, মিয়ানমারকে রোহিঙ্গা সঙ্কটের দায় নেয়া উচিত৷সাগরপথে মানবপাচার ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মহল তত্পর হয়ে ওঠার পর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে অভিবাসন প্রত্যাশী সাড়ে তিন হাজারের বেশি বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাকে৷ এখনো সাগরে ভাসছেন কয়েক হাজার আশ্রয় প্রত্যাশী৷
মালয়েশিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া উপকূলে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের জন্য দেশটির পেনাংসহ উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হতে পারে৷ জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে৷তবে জাতিসংঘ মনে করছে, ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সঙ্কটের মধ্যে নতুন করে এসব অভিবাসীদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে৷ যেখানে শুধুমাত্র সিরিয়ারই ৪০ লাখ শরণার্থী রয়েছে৷এদিকে, ইন্দোনেশিয়া অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়েছে, পাচারের শিকার হয়ে আন্দামান সাগরে ভাসমান অভিবাসন প্রত্যাশীর অধিকাংশই অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক৷ বাকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা৷অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ শনিবার দেশটির একটি সাপ্তাহিককে এ কথা জানান৷ ইন্দোনেশিয়া বলেছে, এসব বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী নয়,তারা উদ্বাস্তুও নয়,এরা অবৈধ শ্রমিক৷ তারা মালয়েশিয়ায় কাজের খোঁজে যাচ্ছিল৷ইন্দোনেশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ কাল্লা দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাকে আচেহ উপকূলে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা আশ্রয়প্রার্থীদের দেখভালের নির্দেশ দেন৷ গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে আচেহ-তে ১ হাজার ৭২২ অভিবাসীকে আশ্রয় দেওয়া হয়৷
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্থনী বি্লঙ্কেন বলেন, মিয়ানমারে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার কারণে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সঙ্গে বৈঠকে এ মার্কিন কূটনীতিক স্মরণ করিয়ে দেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের দায় মিয়ানমার সরকারের নেয়া উচিত৷ অন্যদিকে, সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ২০৮ জন বাংলাদেশীকে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমার৷ শনিবার দেশটির সরকার এ ঘোষণা দিয়েছে৷ আর ওই বাংলাদেশীদের পরিচয় নিশ্চিত করতে আগামীকাল রোববার মিয়ানমারে ১০ সদস্যের দল পাঠাবে বিজিবি৷ গতকাল শুক্রবার সাগরে ভাসমান প্রায় ২০৮ জন বাংলাদেশীকে উদ্ধার করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী৷মিয়ানমানের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তিং মুয়াং সোয়ে এ দাবি করেন৷ অভিবাসীবাহী একটি নৌযান থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়৷এটাই মিয়ানমার সরকারের সাগর থেকে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের উদ্ধারে প্রথম অভিযান৷তিং মুয়াং সোয়ে শুক্রবার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বাংলাদেশীদের উদ্ধারের খবরটি জানিয়েছেন৷