দৈনিকবার্তা-রাজশাহী , ২৩ মে : রাজশাহীর অ্যাডমিশন চ্যালেঞ্জ নামের একটি কোচিংয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট আটকে রেখে টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে তানোর কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা এক শিক্ষার্থী প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অ্যাডমিশন চ্যালেঞ্জ নামের একটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার চটকদার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থী টানার ফাঁদ পেতেছে। তারা বিজ্ঞাপনে বলে যে, তাদের কোচিংয়ে ভর্র্তি হতে কেনো টাকা লাগবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরই টাকা নেয়া হবে। তবে ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের এসএসসি অথবা এইচএসসির মূল সনদপত্র অফিসে জমা রাখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার পর অনেক শিক্ষার্থী এমনিতেই চান্স পেয়ে যায়। তখন তাদের গুণতে হয় মোটা অংকের টাকা। চান্স পাওয়ার পর অনেক শিক্ষার্থীর পরিবারই এ টাকা দিতে আপত্তি করে না। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় যারা চান্স পায় না তাদের ক্ষেত্রে। তাদেরকেও গুণতে হয় টাকা।
অভিযোগে বলা হয়, শর্ত অনুযায়ী চান্স না পেলে শিক্ষার্থীরা তাদের সনদ ফেরত নিতে যান। কিন্তু তখন সনদ ফেরত দেয়ার জন্য সাড়ে তিন হাজার টাকা দাবি করে কোচিং। টাকা না দেয়া হলে সনদ দেয়া হয় না। এভাবেই প্রতরণা করছে রাজশাহীর অ্যাডমিশন চ্যালেঞ্চ। তানোর কলেজের সাবেক ওই শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থী যিনি নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়ে এ প্রতিবেদককে জানান, চান্স পাওয়ার পর টাকা নেয়া হয় এমন বিজ্ঞাপন দেখে তিনি অ্যাডমিশন চ্যালেঞ্জে কোচিং করেছিলেন। কিন্তু কোচিংয়ের সার্ভিস ছিলো খুবই খারাপ। এ কারণে তিনি ভর্তির চান্স পান নি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর তিনি সনদ ফেরত নিতে যান কোচিংয়ে। কিন্তু সনদ ফেরত দেয়ার শর্তস্বরূপ কোচিং কর্তৃপক্ষ দুই হাজার টাকা তার কাছে দাবি করে। টাকা না দিতে পারায় তাকে সার্টিফিকেট না দিয়ে কোচিং অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়। বাধ্য হয়ে তিনি নগরের ডিবি পুলিশের কাছে অভিযোগ করে রক্ষা পান। তবে ডিবি পুলিশ বলার পরও তিন দিন ঘোরানোর পর তাকে সনদ ফেরত দেয় ওই কোচিং। এখনো বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। তবে যোগাযোগ করা হলে অ্যাডমিশন চ্যালেঞ্জের পরিচালক মামুন-অর-রশিদ অভিযোগ অস্বীকার করেই ফোন কেটে দেয়। এরপর তার সহকারী ওবাইদুল ইসলাম ফোনকল ব্যাক করে নানান শর্তের কথা জানান। তিনি বলেন, তারা কিছু নিজস্ব নিয়ম তৈরি করেছেন। সেই নিয়মের মধ্যে শিক্ষার্থীরা থাকলে চান্স না পেলে কোনো টাকা ছাড়াই তাদের সনদ ফেরত দেয়া হয়।
তবে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, ভর্তির সময় এসব নিয়ম-কানুন তাদের জানানো হয় না। মিষ্টিমিষ্টি কথা বলে তাদেরকে ভর্তি করানো হয়। এরপর যদি কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিও চান্স পেয়ে যায় তাহলে তাদের গলা কাটা হয়। আর যারা পায় না তাদেরও গুণতে হয় মোটা অংকের টাকা।
এদিকে অ্যাডমিশন চ্যালেঞ্জের এরকম প্রতারণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক ফোরামের আহ্বায়ক গোলাম সারওয়ার জানান, কোচিং সেন্টারগুলো এভাবেই প্রতারণা করছে। তারা মোটা অংকের বাণিজ্য করছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই। অনেক কোচিং সেন্টার আবার কোচিংয়ের আড়ালে পশ্চদপদ রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচার করছে। এসব কোচিং সেন্টারের উপর নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান এ অভিভাবক। রাজশাহী প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য আহমেদ সফিউদ্দিন তার ফেইসবুকে এক কমেন্টে অভিযোগ করেন, কোচিং সেন্টার গঠন করে জিম্মি করছে শিক্ষার্থীদের। নানা কৌশলে লুটে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এসব নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করা উচিত মিডিয়ার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।