d2096740ad5e278d5afccce147fd486b

দৈনিকবার্তা-গোপালগঞ্জ, ২৩ মে: গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা চালিয়ে ভাংচুর এবং চিকিৎসক ও নার্সকে মারধরের প্রতিবাদে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ সকল সরকারী ও বে-সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের ধর্মঘট চলছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীরা। স্বজনরা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। শনিবার সকাল থেকে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখা এ ধর্মঘটের ডাক দেয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য বিএমএ-র নেতাদের সঙ্গে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা দফায় দফায় মিটিং করেছে। শনিবার সকাল থেকে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালসহ সকল সরকারী হাসপাতালে এ ধর্মঘট শুরু হয়।

এদিকে, এঘটনায় ১০ জনকে আটক করেছে টুঙ্গিপাড়া থানা পুলিশ। অন্যদের আটকের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।জানাগেছে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে সহস্রাধিক এলাকাবাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এসময় তাদের হামলায় ডাঃ পবিত্র কুমার কুন্ডু, নার্স কাকতি লতা পালসহ অন্ত:ত ৪০ জন আহত হয়।এদিকে হাসপাতাল ভাংচুরের ঘটনায় টুঙ্গিপাড়া থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছে।

এঘটনার প্রতিবাদে ও পরবর্তি পরিস্থিতি নিয়ে ওই সংগঠনের (বিএমএ) ডাকে সকালে চিকিৎসকরা গোপালগঞ্জ হাসপাতালের হলরুমে এক জরুরী বৈঠকে বসেন। প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তাদের অনিদৃষ্টকালের ধর্মঘট চলবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওই বৈঠক থেকে।একই সাথে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাদে জেলার অন্যান্য হাসপাতাল গুলোতে জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা অব্যাহত থাকবে বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় ধর্মঘটের ফলে দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। চিকিৎসা সেবা নিতে পাচ্ছেন না।

গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গার সোহেল মাতুব্বর, জেলার টুঙ্গীপাড়ার উপজেলার মাওলানা মিজানুর রহমান ও সুন্দর কুমার মন্ডলসহ একাধিক রোগী ও রোগীর স্বজনরা বলেন, আমরা অনেক দূর-দূরান্ত থেকে এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কিন্ত, এসে দেখি কোন চিকিৎসক চেম্বারের বসছেন না। তারা হাসপাতালে ভর্তি রোগীদেরও দেখছে না। বর্হিবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন। পরে খবর নিয়ে জানতে পারি চিকিৎসকরা চিকিৎসা-সেবা বন্ধ করে ধর্মঘট পালন করছেন। অনেক ভর্তি রোগী তাদের স্বজনরা অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা চরম ভোগান্তীতে পড়েছি।

গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ নেওয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার টুঙ্গীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ন্যাক্করজনক ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবীতে হাসপাতালে চিকিৎসকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন। তবে, জরুরী বিভাগের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

বিএমএ, গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ আবিদ হাসান জানিয়েছেন, টুঙ্গীপাড়ার ঘটনায় আমরা মর্মাহত। সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ এক নার্সকে মারপিট করা হয়েছে। ভাংচুরসহ তান্ডব চালানো হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে সারা জেলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ধর্মঘট চলছে। তবে, টুঙ্গীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাদে অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল গুলোতে জরুরী বিভাগ চালু রয়েছে। এঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে বলেও তিনি জানান। একই সাথে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থারও দাবী জানান এ চিকিসৎসক নেতা।

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন এস এম সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলায় কর্মরতঃ চিকিৎসকরা কালো-ব্যাচ ধারণ ও ধর্মঘট কর্মূসূচি পালন করছেন। বিষয়টি সমাধান করার জন্য ঢাকা থেকে পরিচালক ( হাসপাতাল) এসেছেন। তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও বিএমএ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন। তিনি আরো জানান, আমরা সবাই চেষ্টা করছি যত দ্রুত বিষয়টি সমাধান করার। তা না হলে রোগীরা চরম ভোগান্তীর শিকার হবেন।টুঙ্গীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক একরাম হোসেন জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর আটককৃতদের জেল হাজতে পাঠানো হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার দুপুরে জেলার টুঙ্গীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে সহস্রাধিক এলাকাবাসী হামলা চালিয়ে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ পবিত্র কুমার কুন্ডু, নার্স কাকতি লতা পাল ও পুলিশ সদস্যসহ অন্ততঃ ৪০ জন আহত হয়।