দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ মে: বৃষ্টি হলেও মৃদু তাপপ্রবাহের কারণে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নগরী। সারাদেশেই বৃদ্ধি পেয়েছে অসহ্য গরম। তবে সেই মাত্রাটা আরো বাড়িয়ে দিতে আজকালের মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে তাপপ্রবাহ বিস্তার লাভ করতে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে এমন তথ্যই দেয়া হয়েছে।
এদিকে, মাদারীপুর,বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের কিছু অংশে বিস্তার লাভ করতে পারে।আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, আজ সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘন্টায় রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগে দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।আগামী ৭২ ঘন্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, এ সময়ে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।আবহাওয়া চিত্রের সংক্ষিপ্তসারে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ অবস্থান করছে।
যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু রেঙ্গুন উপকুল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করছে।পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মাদারীপুর, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলসহ খুলনা ও রাজাশাহী বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের কিছু অঞ্চলে বিস্তার লাভ করতে পারে। আর এতে সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা বাড়বে।তবে সুখবর হচ্ছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায় প্রতিবেশী মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন শহর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। যা দ্রুতই বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। মৌসুমী বায়ু যোগ হলেই গরমের দাপট কমে যাবে বলে আবহাওয়াবিদদের মন্তব্য।
বৃহস্পতিবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও যশোরে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে দেশের প্রায় সব এলাকায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে তাপমাত্রা ছিল। সেই সঙ্গে বৃষ্টিও কম হয়েছে। গতকাল সবচেয়ে বেশি ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে সৈয়দপুরে।২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, রংপুর, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি আবার বজ্র বৃষ্টিও হতে পারে।আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক শাহ আলম বলেন, এবার গরমের মাত্রা গত বছরের মতো এতো বাড়বে না। কারণ খুব দ্রুতই দেশের আকাশে মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করছে। যা বর্তমানে প্রতিবেশী মিয়ানমারের ইাঙ্গুন শহর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে।
রাজশাহী: রাজশাহীতে অব্যাহতভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মহানগরী। টওখর রোদে পুড়ছে পথ-ঘাট। বাতাসে যেন আগুনের হলকা। দিনভর তাপপ্রবাহ ও রাতে ভ্যাপসা গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বৃষ্টির জন্য চারিদিকে যেন হাহাকার পড়ে গেছে।রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক দেবল কুমার মৈত্র বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার (২২ মে) রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ২৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল সকাল ৬টায় ৯৫ শতাংশ এবং বেলা ৩টায় ৫৫ শতাংশ।
তিনি জানান, গত ১৯ মে নগরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০ মে রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ২১ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে প্রতিদিনই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বাড়ছে রাজশাহী অঞ্চলে।এদিকে, দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করলেও আজ তা ৩৯ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। এর ওপর দুপুরে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় তাপমাত্রা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। ফলে তীব্র গরমে কাহিল হয়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। অব্যাহত তাপপ্রবাহে রাজশাহীর খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের সীমা চরমে পৌঁছেছে। অসহনীয় গরমে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রকোপ বেড়েছে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগের। শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গাছে থাকা আম ও লিচু শুকিয়ে ঝড়ে যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের মাঠ বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে।প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সাল থেকে বাংলাদেশে তাপমাত্রার রেকর্ড শুরু হয়। এর মধ্যে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। যা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এবার সে রেকর্ড ভাঙার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন রাজশাহীবাসী। দুই সপ্তাহ আগে ভারি বুৃষ্টির পর থেকে টানা তাপপ্রবাহ চলছে। ফলে তপ্ত মাটি ভিজে যাওয়ার মতো এক পশলা বৃষ্টির দিকে মানুষ আকাশের দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে। ভ্যপসা গরমে মানুষের সাধারণ কার্যক্রম স্তবির হয়ে পড়েছে। দুপুরে নগরীর রাস্তাঘাটগুলো ফাঁকা হয়ে পড়ছে। প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বেরুতে ভয় পাচ্ছে। সূর্যতাপে যেন শরীরের চামড়া পুড়ে যাওয়ার অবস্থা।ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে মানুষ যখন ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না সেখানেও আছে বিপত্তি। ঘনঘন লোডশেডিং এর কারণে ঘরের মধ্যেও মানুষের নাজেহাল অবস্থা। তবে রাজশাহী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডর সূত্র জানায়, বর্তমানে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।বিউবোর একটি সূত্র জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে এ মুহূর্তে প্রচণ্ড গরম বিরাজ করছে। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেছে কয়েকগুন। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় নগরীতে সামান্য লোডশেডিং হচ্ছে।
পাবনা:পাবনা অঞ্চলে গত ৩ দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। প্রখড় রোদ আর প্রচন্ড গরমে মানুষসহ প্রাণীকূলে নাভিশ্বাস উঠেছে। ¯’বির হয়ে পড়েছে জনজীবন।গরমে শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ঠিকমত কাজ করতে পারছে না। জেলার ঈশ্বরদীআবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।গত ২ সপ্তাহ ধরে পাবনা অঞ্চলে কোন বৃষ্টি নেই। ফলে রোদের তাপে মাটি গরম হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে গত ৩ দিন ধরে চলছে প্রচন্ড তাপপ্রবাহ।ঘরের বাইরে গেলে গরম বাতাস মানুষের শরীরে আগুনের ফুলকার মত বিধছে। প্রচন্ড গরমের কারণে রিকশা চালক, দিন মজুরসহ শ্রমজীবারা কাজ করতে পারছে না। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরেরও বাইরে বের হচ্ছে না।এদিকে কয়েকদিন ধরে গরমের কারণে শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ ডায়েরিয়া ও হিটস্ট্রকসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।