দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২১ মে: ভারতেরমেঘালয়ে চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে জানিয়েছেন দলের সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি।তিনি (সালাহ উদ্দিন আহমেদ)দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন এবং তার চিকিৎসার জন্য ভারত সরকারে প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার শিলংয়ে অবস্থানরত বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি এ কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে বুধবার থেকে এখন পর্যন্ত নর্থ ইস্টার্ন ইন্দিরা গান্ধী রিজওনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল সায়েন্সেস বা নেগ্রিমসের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। বিকেলে তাঁর স্বাস্থ্যবিষয়ক বেশ কিছু পরীক্ষা করা হলেও বৃহস্পতিবার সকালে আর কোনো পরীক্ষা হয়নি।
সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ তাঁদের আইনজীবী এস পি মাহান্তের সঙ্গে কথা বলতে সকালে তাঁর হাইকোর্ট এলাকার দপ্তরে গেছেন। নেগ্রিমসের পরিচালক এ জি এহেনগার জানান, বিএনপি নেতার স্বাস্থ্যবিষয়ক বেশ কিছু পরীক্ষা করা হবে। এরপর তাঁকে একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখা হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।সালাহ উদ্দিন আহমদের আইনি পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁর আইনজীবী এস পি মাহান্ত এ প্রতিবেদকের কাছে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানান, বিএনপি নেতার স্ত্রীর পাশাপাশিএখানকার কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশও তাঁর সুস্থ হওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।বৃহস্পতিবার দুপুরে জনি টেলিফোনে জানিয়েছেন, সালাহ উদ্দিনের স্বাস্থের খোঁজ-খবর নিতে এখন পর্যন্ত তারা নর্থ-ইস্ট ইন্দিরা গান্ধী রিজিওনাল রিসার্চ অ্যান্ড মেডিসিন সায়েন্স হাসপাতাল- নেগ্রিমসে যেতে পারেননি।
তবে, স্থানীয় সময় বেলা ২টার পর প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এবং তিনি নেগ্রিমসে যাবেন বলে জানান জনি। কিডনিসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার নেগ্রিমস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় সালাহ উদ্দিন আহমেদকে।গত ১২ মে ভারতের মেঘালয় থেকে উদ্ধার হওয়ার পর সেখানকার একটি হাসপাতাল শিলংয়ে ভর্তি করা হয় তাকে। উল্লেখ,১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে সালাজউদ্দিনের পরিবার।
গত ১১ মে শিলংয়ের গলফ-লিংক এলাকা থেকে আটকের পর সালাহ উদ্দিনকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিভিল হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলেও মানসিক সমস্যা আছে মনে করে পুলিশ বিএনপি নেতাকে মানসিক হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে একদিন রাখার পর তাঁকে ১২ মে আবার সিভিল হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু মূত্রনালিতে সংক্রমণ, কিডনিতে পাথরের উপস্থিতি ও মেরুদণ্ডে ব্যথার কারণে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদকে চিকিৎসকদের পরামর্শে শিলংয়ের সিভিল হাসপাতাল থেকে নেগ্রিমসে ভর্তি করা হয়েছে।বিনা পাসপোর্টে ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে ফরেনার্স অ্যাক্ট-৪৬ অনুযায়ী সালাহ উদ্দিন আহমদের বিচার হবে। তবে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে আদালতে পাঠানোর সম্ভাবনা কম।বিএনপির যুগ্ম-মহসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নর্থ-ইস্ট ইন্দিরা গান্ধি রিজিওনাল রিসার্স ও মেডিকেল সায়েন্স হাসপাতালে নেয়ার সুপারিশ করেছে ভারতের শিলংয়ের সিভিল হাসপাতাল।বুধবার মেঘালয়ের সিভিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সালাহ উদ্দিনের বিষয়ে এ সুপারিশ করে বলে জানান তার চিকিৎসক ডি জি গোস্বামী।
এদিকে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে শিলং সিভিল হাসপাতালে যান সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ। তিনি হাসপাতালের উপ-পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন দেখে সালাহ উদ্দিনের উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এ পর্যন্ত তার সাতটি শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। সবগুলোরই ফলাফল হাতে পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশ্য বুধবারই জানা গেছে, চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনের কিডনিতে পাথর পাওয়া গেছে।দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর ১১ মে শিলংয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়া যায়।সেখান থেকে তিনি স্ত্রী হাসিনা আহমদকে ফোন করেন। এর মধ্যদিয়ে সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার অবসান ঘটে। কিন্তু তিনি কিভাবে শিলং গেলেন তার রহস্য এখন পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি।
বুধবার জি কে গোস্বামী বলেন, সিটিস্ক্যানে সালাহ উদ্দিনের কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছেছ। তাঁর আরও কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে। সালাহ উদ্দিনের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের শল্য চিকিৎসক মনে করেন, তাঁর কিডনি চিকিৎসার জন্য আর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার। এ সুবিধাগুলো সিভিল হাসপাতালে নেই। এ জন্য বুধবার দুপুরে তাঁকে নেগ্রিমসে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইন্দিরা গান্ধী হেলথ ও মেডিকেল সায়েন্স) পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। আজই তাঁকে নেগ্রিমসে পাঠানো হবে।বুধবার সকালে ভারতের মেঘা য়ের শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালের বিচারাধীন মামলার আসামিদের ওয়ার্ডে হাসিনা আহমেদ তৃতীয় দিনের মতো স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।হাসিনা আহমদ জানান, সালাহ উদ্দিন আহমদকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করার আগে তাঁর উন্নত চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সালাহ উদ্দিন কিডনি ও হার্টের রোগী। তাঁর পা ফুলে গেছে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে কাঁপতে থাকেন। তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার। কিডনিসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে সালাহ উদ্দিনকে সিঙ্গাপুর নিতে চান।মঙ্গলবার আইনজীবী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসপি মোহন্তের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে হাসিনা আহমদ বলেন, ভারতের আইন অনুযায়ী কোন পথে এগুলো ভালো হবে, তা বুঝে তিনি পদক্ষেপ নেবেন বলে মোহন্ত তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন।
ভারত সরকারের অনুমতি পেলে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেঘালয়ের শিলং-এ অবস্থানরত তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।মঙ্গলবার শিলং সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।এছাড়া সালাহ উদ্দিনের পক্ষে কাজ করতে আইনজীবী এস পি মাহান্তের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি।