দৈনিকবার্তা-কুড়িগ্রাম,২১মে : কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলা খাদ্য গুদামে গম ক্রয় শুরু হলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্লিপেই নেয়া হচ্ছে গম। এতে করে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার গম চাষী কৃষকরা।জানা গেছে, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিউল আলম গত ১৪ মে আনুষ্ঠানিক ভাবে গম ক্রয় উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে একমাত্র তার স্লিপেই খাদ্য গুদামে গম নেয়া হচ্ছে। সরকারের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কৃষকদের বঞ্চিত করে তার দলীয় নেতা কর্মীদের স্লিপ দিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া যারা তার নির্বাচনের সময় কাজ করেছেন তাদের খুশির জন্য ১ মেট্রিক টন থেকে শুরু করে ৫০ মেট্রিক টন পর্যন্ত গমের স্লিপ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। যারা তাকে ভোট দেননি দলীয় হলেও তাদের অনেককেই গমের স্লিপ দেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরকার এ বছর রাজিবপুরে খাদ্য গুদামে ৬৬৭ মেট্রিক টন গম ক্রয় করবেন। সরকারী নীতি অনুযায়ী স্থানীয় সরকার ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা কৃষি অফিসের সম্বনয়ে প্রথমে কৃষকদের একটি তালিকা তৈরি করে টানিয়ে দিবেন। পরে কৃষকরা তাদের উৎপন্ন ফসল গম খাদ্য গুদামে দিবেন। মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর কড়া নির্দেশও তাই। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই কয়েকজন নেতার সাথে পরামর্শ করে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার যোগসাজসে একটি বন্টন তালিকা তৈরি করেন। বন্টন তালিকা অনুযায়ী ৩ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতাদের ১৫০ মেট্রিক টন, ৩ ইউনিয়ন পরিষদ ১৫০ মেট্রিক টন, জেপি ৩০মেট্রিক টন, জাপা ৩০ মেট্রিক টন, উপজেলা প্রেসক্লাব সভাপতি ২০ মেট্রিক টন, ভাইস চেয়ারম্যান ২ জনের ৭০ মেট্রিক টন বাকী ২৩৭মেট্রিক টন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, কৃষি কর্মকর্তা ও ওসিএলএসডি ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে।প্রথমে প্রায় ৫০ জন দলীয় নেতাদের কৃষক কার্ড দেখিয়ে গম ক্রয় শুরু দেখালেও পরবর্তীতে টন প্রতি ৩ হাজার টাকা চুক্তি করে কয়েকজন ব্যবসায়ীর নিকট স্লিপ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা যুবলীগ ৪০ হাজার টাকার ভাগ নিয়ে গজনী ও লাউ চাপড়া বনভোজন করে এসেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ তাদের বরাদ্ধ থেকে সাধারন কৃষকদের মধ্যে ৫০ টন দিতে চাইলেও পরবর্তীতে প্রতি ইউপি সদস্য ৩ টন এবং ইউপি চেয়ারম্যান গণ ১৪ টন করে ভাগাভাগি করে নিয়ে স্লিপ বেঁচে দিয়েছেন। এদিকে গম দিতে না পারায় উপজেলার সাধারন কৃষক মনে চাপা ক্ষোভ নিয়ে তাদের ঘরে রাখা গম বাজারে ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০টাকার মধ্যে বিক্রি করে দিচেছন। আর ব্যবসায়ীরা সেই গম খাদ্যগুদামে বিক্রি করছেন ১১২০টাকায়। ফলে রক্ষক ভক্ষক হয়ে ফাকিঁ দিলেন কৃষকদের। রাজিবপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিবের ডাংগী গ্রামের আব্দুস ছাত্তার জানান, আমি এ বছর ২ একর জিমিতে গমের আবাদ করেছি। আশা ছিল খাদ্য গুদামে গম দিব। কিন্তু শত চেষ্টা করেও তা দিতে পারলাম না। কোদালকাটি ইউনিয়নের কোদালকাটি গ্রামের কৃষক শহর আলী জানান, সরকারক গম দেওয়ার স্লিপ পাই নাই। স্লিপ পাইলে বেশি দামে গম বেছতাম। এখন কমদামে বেছতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে রাজিবপুর উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শফিউল আলমের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল লতিফ খানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আপনারা এসে দেখে যান। আমি কোন অভিযোগও পাইনি।