দৈনিকবার্তা-কাউখালী(পরোজপুর ),২১মে : পিরোজপুরের কাউখালীর সন্ধ্যা ও গাবখান নদীর ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়ে আমরাজুড়ি ফেরিঘাট বাজারে বেশকয়েকটি দোকান বিলীন হয়েছে । হুমকির মুখে রয়েছে আমরাজুরী ফেরিঘাট। যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে পিরোজপুর-স্বরুপকাঠী রুটের গাবখান চ্যানেলের আমরাজুরী ফেরি। বুধবার দুপুর থেকে হঠাৎ করে গাবখান নদীর মোহনায় অবস্থিত ওই বাজারের একদিক থেকে ভাঙন শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদী গহ্বরে দেবে যেতে থাকে একের পর এলাকা। এ সময় দোকানিরা তাদের মালামাল সরাতে শুরু করে। সরেজমিনে দেখা যায় ওই বাজারের বিরাট অংশজুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য ফাটল। বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সিদ্দিক জানান আমরাজুরি মূলবাজার এখন সন্ধ্যা নদীর মাঝখানে। ইতিমধ্যে বিলীন আমড়াজুড়ি ফেরিঘাট, বাজার ও কয়েকশত বাড়ি ঘর। গত দুই বছরে নদী ভাঙনের কারণে ২৪ বার ফেরিঘাট স্থানান্তর করতে হয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে নদীর দুই তীরের অসংখ্য বাড়ি ঘর।
পিরোজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাউখালী অঞ্চলের উপসহকারী প্রকৌশলী জানান, সন্ধ্যা নদীর ভাঙনের কারণে ফেরিঘাটের দুই প্রান্ত ভেঙে যাচ্ছে। গত দুই বছরে আমড়াজুড়ি ফেরিঘাটের উত্তর পার ২১ বার এবং পূর্ব পার তিন বার ঘাট স্থানান্তর করতে হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা নদীর দুই তীরের আমড়াঝুড়ি, আশোয়া, কুমিয়ান, গন্দর্ব আমড়াঝুড়ি আবাসন, সোনাকুর এলাকার পাঁচ কিলোমিটার জুড়ে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে ফেরিঘাট, বাজার ও বাড়ি ঘর। আমড়াঝুড়ি ফেরিঘাট এলাকায় নদী ভাঙনের ফলে গ্যাংওয়ের নিচের মাটি সরে গেছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে যান উঠা নামা করছে। আমড়াঝুড়ি বাজারের ১০ থেকে ১২টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ফেরিঘাট মসজিদ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
আশোয়া আমরাজড়ির বাসিন্দা আবুল বাশার বলেন, প্রতি বছর সন্ধ্যা ও গাবখান নদী ভাঙে। গত ২০ বছরে সন্ধ্যার করাল গ্রাসে আশোয়ার কয়েকশ বাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত এক মাসে আমড়াঝুড়ি বাজারের ছয়টি দোকান নদীতে ভেঙে হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে নদী শাসনের উদ্যোগ না নিলে ঘাট, বাজার ও বাড়ি ঘর রক্ষা করা যাবে না। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ জানান, চলতি বছর ভাঙনের তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙনের ফলে স্থানীয় ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের এখন পথে বসার অবস্থা। বারবার দোকান সরানো এবং সবসময় আতংকে থাকতে হয়।
কাউখালীর মানবাধিকার সংগঠক শাহ আলম নসু বলেন, নদী ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে আমরা মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কমসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আমরা নদী শাসন ও নদী ভাঙনের কারণে বাস্তুহারা পরিবারগুলোর পূর্ণবাসনের দাবি জানচ্ছি। আমড়াজুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণ লাল গুহ বলেন,স্বাধীনতার পর থেকে ভাঙন রোধে কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যুগযুগ ধরে সন্ধ্যা নদী ভাঙছে। প্রতিদিন এ জনপদের মাটি,স্থাপনা ও বৃক্ষরাজি সন্ধ্যার করাল গ্রাসে চলে যাচ্ছে।