দৈনিকবার্তা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২০ মে: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা-বিনোদপুর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা অপরাধে অভিযুক্ত মানবতাবিরোধী মামলার আসামী আফসার হোসেন চুটু ও মাহিদুর রহমানে রায় আজ বুধবার বেলা সাড়ে এগারটার পরপর ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে তাদের দুজনকেই আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদান করেছেন বিজ্ঞ আদালত। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আদালত এ আদেশ দেন। তাদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের মধ্যে তদন্তকারী সংস্থা মোট তিনটি অভিযোগের ব্যাপারে আদালতে চার্জ গঠন করতে সমর্থ হয়। প্রসিকিউশন প্রথম অভিযোগে ২৪জনকে হত্যা,দ্বিতীয় অভিযোগে ৭০ টি বাড়ীতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট এবং তৃতীয় অভিযোগে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার বিষয়টি আদালতে উথ্থাপন করে ।
কিন্তু শেষোক্ত অভিযোগে ১৯৭২ সালের দালাল আইনে আসামীরা যাবজ্জীবন দন্ডভোগ করায় সেটি আদালতের পর্যবেক্ষনে বাতিল হয়। আদালত প্রথম অভিযোগে এই দুই বয়োবৃদ্ধ তৎকালীন মুসলিমলীগ রাজনীতির সাথে যুক্ত রাজাকারকে আমৃত্যু কারাদন্ড ও দ্বিতীয় অভিযোগে ৫ বছরের কারাদন্ড দেন। এদিকে এ রায় নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-শিবগঞ্জে চলছিল নানা জল্পনা কল্পনা।
এলাকাবাসী আশা করেছিল আদালত অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেবে। এ মামলার বাদী বদিউর রহমান বুদ্ধু বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আফসার হোসেন চুটু ও মাহিদুর রহমানসহ মুখ চেনা রাজাকাররা আমার পিতাসহ এলাকার নিরীহ মানুষদের হত্যা করেছে। এছাড়া বাড়িঘর লুটপাট করার পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। তিনি অপরাধীদের সর্বচ্চ শাস্তি মৃৃত্যুদন্ড আশা করেছিলেন। তাৎক্ষনিক এক প্রতিক্রিয়ায় এ রায়ের বিরুদ্ধে আবারো আপিল করা হবে মনে মত দেন তিনি। শিবগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বজলার রহমান সোনু জানান, দেরীতে হলেও শিবগঞ্জের খুনী,লুন্ঠনকারী ও অগ্নিসংযোগকারী রাজাকারদের বিচার হয়েছে তবে তিনিও এই দুই রাজাকারের মৃত্যুদন্ড আশা করেছিলেন। মনাকষা ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রশিদ, মুক্তিযোদ্ধা প্রভাত কুমার, নিয়াজউদ্দিন, আমজাদ, তোজাম্মেল, আনেসুরসহ এলাকার প্রায় ৩০জন মুক্তিযোদ্ধাও তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ডের আশা করে এই রায়ে হতাশা জানিয়েছেন। এদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্য়াতনের শিকার শহীদ পরিবারগুলির সদস্যরাও এবং এলাকাবাসী তাদের সর্বোচ্চ সাজার আশা করেছিলেন।
তারাও তীব্র হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে আসামীপক্ষ বলে জানা গেছে। অপরদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রধান তদন্ত সমন্বয়কারী হান্নান খান তদন্তের ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এর আগে ১৯৭১ সালে মূক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাজতে আটক চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মনাকষা এলাকার মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে মর্মে মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আদালত আদেশ দেন।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল বুধবার মামলার কার্যক্রম শেষে ট্রাইব্যুনাল রায়টি অপেক্ষমাণ( সি.এ.ভি) রাখেন। ওই দিন মাহিদুর ও আফসারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের কৌসুলীরা। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবি সাহিদুর রহমান ও ব্যারিষ্টার তুরিন আফরোজ অপরদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবি আব্দুস সোবহান তরফদার। গত বছরের ২৭ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। আদালতের প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান প্রসিকিউশনের পক্ষে এ অভিযোগ দাখিল করেন। ওই বছরই ২৪ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক চার্জ আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। ১১ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
এদিকে রায়ের পর এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। পুলিশের টহল জোরদার করা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, ছোটবড় সকলেই এ রায়ে হতাশ হলেও একে স্বাগত জানিয়ে এলাকায় আনন্দ মিছিল এবং ফাসিঁর দাবী জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে । অনেককে এর রায় শোনার জন্য গভীর আগ্রহে টিভি সেটের সামনে ভীড় করে।