দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ মে: বিএনপির যুগ্ম-মহসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নর্থ-ইস্ট ইন্দিরা গান্ধি রিজিওনাল রিসার্স ও মেডিকেল সায়েন্স হাসপাতালে নেয়ার সুপারিশ করেছে ভারতের শিলংয়ের সিভিল হাসপাতাল।বুধবার মেঘালয়ের সিভিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সালাহ উদ্দিনের বিষয়ে এ সুপারিশ করে বলে জানান তার চিকিৎসক ডি জি গোস্বামী।
এদিকে স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে শিলং সিভিল হাসপাতালে যান সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমদ। তিনি হাসপাতালের উপ-পরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতিবেদন দেখে সালাহ উদ্দিনের উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এ পর্যন্ত তার সাতটি শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। সবগুলোরই ফলাফল হাতে পেয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অবশ্য বুধবারই জানা গেছে, চিকিৎসাধীন বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনের কিডনিতে পাথর পাওয়া গেছে।দুই মাস নিখোঁজ থাকার পর ১১ মে শিলংয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখান থেকে তিনি স্ত্রী হাসিনা আহমদকে ফোন করেন। এর মধ্যদিয়ে সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার অবসান ঘটে। কিন্তু তিনি কিভাবে শিলং গেলেন তার রহস্য এখন পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি।
বুধবার জি কে গোস্বামী বলেন, সিটিস্ক্যানে সালাহ উদ্দিনের কিডনিতে পাথর ধরা পড়েছেছ। তাঁর আরও কিছু শারীরিক সমস্যা রয়েছে। সালাহ উদ্দিনের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের শল্য চিকিৎসক মনে করেন, তাঁর কিডনি চিকিৎসার জন্য আর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার। এ সুবিধাগুলো সিভিল হাসপাতালে নেই। এ জন্য বুধবার দুপুরে তাঁকে নেগ্রিমসে (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইন্দিরা গান্ধী হেলথ ও মেডিকেল সায়েন্স) পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে। আজই তাঁকে নেগ্রিমসে পাঠানো হবে।বুধবার সকালে ভারতের মেঘা য়ের শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালের বিচারাধীন মামলার আসামিদের ওয়ার্ডে হাসিনা আহমেদ তৃতীয় দিনের মতো স্বামীর সঙ্গে দেখা করেন। এরপর তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।হাসিনা আহমদ জানান, সালাহ উদ্দিন আহমদকে আইনি প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করার আগে তাঁর উন্নত চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সালাহ উদ্দিন কিডনি ও হার্টের রোগী। তাঁর পা ফুলে গেছে। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকলে কাঁপতে থাকেন। তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার। কিডনিসহ অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে সালাহ উদ্দিনকে সিঙ্গাপুর নিতে চান।মঙ্গলবার আইনজীবী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এসপি মোহন্তের সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে হাসিনা আহমদ বলেন, ভারতের আইন অনুযায়ী কোন পথে এগুলো ভালো হবে, তা বুঝে তিনি পদক্ষেপ নেবেন বলে মোহন্ত তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন।
ভারত সরকারের অনুমতি পেলে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন মেঘালয়ের শিলং-এ অবস্থানরত তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।মঙ্গলবার শিলং সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।এছাড়া সালাহ উদ্দিনের পক্ষে কাজ করতে আইনজীবী এস পি মাহান্তের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি।বিকেল ৫টার পর আইনজীবী এসপি মাহান্তের সঙ্গে কথা বলে তাকে নিয়োগের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।গত ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসা থেকে নিখোঁজ হন। তারপর থেকে তার স্ত্রী দাবি করে আসছিল গোয়েন্দা পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত সোমবার তাকে ভারতের মেঘালয়ে সন্ধান পাওয়া যায়। পরে চিকিৎসার শিলং হাসপাতালে ভর্তি হন।ভারতের শিলংয়ে গ্রেপ্তার বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে চিকিৎসার জন্য ‘তৃতীয় কোনো দেশে নিয়ে যেতে চান তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ।
তবে অবৈধ অনুপ্রবেশ মামলার আসামি সালাহ উদ্দিনের এখনই ছাড়া পাওয়ার কোনো সুযোগ দেখছে না ভারতীয় পুলিশ।দুই মাস আগে ঢাকায় নিখোঁজ হওয়ার পর গত ১১ মে শ খানেক কিলোমিটার দূরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে বিএনপির এই যুগ্ম মহাসচিবের সন্ধান মেলে।আচরণ অসংলগ্ন মনে হওয়ায় বাংলাদেশের সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে প্রথমে একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও পরে স্থানান্তর করা হয় শিলং সিভিল হাসপাতালে। সেখানেই সোমবার রাতে তার সঙ্গে দেখা করেন সাবেক এমপি হাসিনা।বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধের মধ্যে ‘নিখোঁজ’ স্বামীর সন্ধান জানার পর ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন হাসিনা। ভিসা পাওয়ার পর রোববার রাতে বিমানে কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি।কলকাতা থেকে সোমবার সকালে রওনা হয়ে শিলং পৌঁছে সন্ধ্যায় হাসপাতালে যান সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী। পুলিশের অনুমতি মেলার পর রাত ৯টার দিকে স্বামীর সঙ্গে ১৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পান তিনি।
সাক্ষাতের সময় উপস্থিত বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ জনি স্বামী-স্ত্রী দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরেন। এ বলেন, একসঙ্গে হওয়ার পর সময় দুজনই কাঁদছিলেন।স্ত্রীর কাছে সালাহ উদ্দিন জানতে চান সন্তানদের খবর। তিনি বলছিলেন, সন্তানদের দেখতে তিনি ঢাকায় ফিরতে চান।হাসিনার সঙ্গে জনি ছাড়াও ছিলেন তার ভগ্নিপতি মাহবুব কবির ও আরেকজন আত্মীয়।হাসিনা তার স্বামীর সন্ধানের জন্য ভারত সরকার ও মেঘালয় পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছেন।
বেরিয়ে আসার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের হাসিনা বলেন, আমার স্বামী খুব বেশি অসুস্থ। আমরা চেষ্টা করব, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে তৃতীয় কোনো দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
বিএনপি নেতা জনি শিলংয়ে পৌঁছান তিনদিন আগে। দলীয় নেতাকে দেখে এসে তিনি রোববার বলেছিলেন, সালাহ উদ্দিনের স্মৃতিভ্রম হচ্ছে। সোমবার সকালে সালাহ উদ্দিনের সিটি স্ক্যানও করা হয়েছে।৫৪ বছর বয়সী সালাহ উদ্দিন নিজেও দাবি করেছেন, অচেনা এক দল লোক তাকে তুলে নিয়েছিল। এরপর থেকে আর কিছুই তিনি মনে করতে পারছেন না।স্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর হাসপাতালের বারান্দায় সালাহ উদ্দিনের সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ পান সাংবাদিকরা।তিনি বলেন, দেশে তো এখন রেড এলার্ট জারি করেছে ইন্টারপোল। এটা উচিৎ হয়নি। আমি তো কোনো সাজাপ্রাপ্ত দাগি আসামি নই। তো কেন করেছে আমি তো জানি না।তবে ইস্ট খাসি হিল জেলার পুলিশ সুপার এম খাড়খাড়ং বলছেন, পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন সালাহ উদ্দিনের এখনই ছাড়া পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখন তার ছাড়া পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি।হাসপাতাল থেকে যদি পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে আদালতে হাজির করে, তাহলে বাংলাদেশের এই নেতাকে ভারতের কারাগারে যেতে হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছর কারাদণ্ড।আইনজীবীরা বলছেন, আদালতে হাজির করার পর যদি সরকার তাকে ফেরত পাঠানোর আবেদন করে, আদালত তা বিবেচনা করতে পারে।বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধের মধ্যে লুকিয়ে থেকে বিবৃতি পাঠিয়ে আসা সালাহ উদ্দিনকে গত ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে তার পরিবারের দাবি। এজন্য হাসিনা আহমেদ ও বিএনপি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়ী করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই তা অস্বীকার করা হয়।
স্বামীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় দেখা করলেন হাসিনা আহমদ। মঙ্গলবার দুপুরে আসামিদের ওয়ার্ডে সাক্ষাৎ হয় স্বামী সালাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। ছেলেমেয়ে ও পারিবারিক নানান বিষয় নিয়েই কথা হয় তাদের মধ্যে।সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় শিলংয়ের সিভিল হাসপাতালে স্বামীর সঙ্গে প্রথমবার সাক্ষাৎ করেন হাসিনা আহমদ। ৯টা পর্যন্ত হাসপাতালে ছিলেন তিনি। গত আড়াই মাসের মধ্যে সেটি ছিল প্রথম সাক্ষাৎ।মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের ওয়ার্ডে স্বামীর সঙ্গে কথা বলার পর হাসিনা আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, তার (সালাহ উদ্দিন) শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। দুই থেকে তিন মিনিটের বেশি তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। তার শরীর কাঁপতে থাকে। তার হার্টের সমস্যা আছে। কিডনির অবস্থাও ভালো না। তাই জরুরি ভিত্তিতে তার চিকিৎসা প্রয়োজন। তবে এই চিকিৎসা তিনি করাতে চান তৃতীয় কোনো দেশে বিশেষ করে সিঙ্গাপুরে।এসময় সাংবাদিকরা তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন। ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটা উন্নত। বাংলাদেশের অনেক লোক ভারতে হার্ট ও কিডনির চিকিৎসা করাতে আসেন। তা হলে সালাহ উদ্দিনকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করাতে হবে কেন?জবাবে হাসিনা আহমেদ বলেন, গত ২০ বছর ধরে সালাহ উদ্দিনের সব চিকিৎসা চলছে সিঙ্গাপুরে। তিনবার তার হার্টে অস্ত্রোপচার হয়েছে। রিং পরানো হয়েছে। তিনি সিঙ্গাপুরেই চিকিৎসা নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন।তবে চাইলেই তো আর সালাহ উদ্দিনকে তৃতীয় কোনো দেশে নেয়া যাবে না। রয়েছে আইনের জটিলতা। ফরেনার অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছেন বিএনপির এই নেতা। এটি অবৈধ অনুপ্রবেশ। গুরুতর অপরাধ। এর একটা সুরাহা হতে হবে।এ ব্যাপারে হাসিনা আহমেদ বলেছেন, তিনি অপরাধ বিষয়ক একজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেই পদক্ষেপ নেবেন।
জানা গেছে, আজ হাসপাতালে যাওয়ার আগে হাসিনা আহমদ যান শিলংয়ের লাশুম এলাকায় অপরাধ বিষয়ক সিনিয়র আইনজীবী এসপি মাহান্তের অফিসে। কিন্তু তিনি তখন আদালতে থাকায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি। জুনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বললেও তারা তাকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারেননি।হাসিনা আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার বিকেলেই তিনি এসপি মাহান্তের সঙ্গে কথা বলবেন। মোটকথা আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমেই তিনি স্বামীকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে চান।দুইমাস নিখোঁজ থাকার পর ১১ মে শিলংয়ে সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়া যায়। সেখান থেকে তিনি স্ত্রী হাসিনা আহমদকে ফোন করেন। এর মধ্যদিয়ে সালাহউদ্দিনের নিখোঁজ হওয়ার অবসান ঘটে। কিন্তু তিনি কিভাবে শিলং গেলেন তার রহস্য এখন পর্যন্ত উন্মোচিত হয়নি।রোববার রাতে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে কলকাতা পৌঁছান হাসিনা আহমদ। রাতযাপনের পর সোমবার সেখান থেকে তিনি সকালে রওনা হন শিলংয়ের পথে। সন্ধ্যায় সেখানে পৌঁছান তিনি।