Bogra Serpur Crime News 19-5-15

দৈনিকবার্তা-বগুড়া, ১৯ মে: বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রায় ১৪ মাস বেতন পান না। ফলে, তারা পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কারণ, এই প্রতিযোগিতার যুগে কমবেশি সব সেক্টরে আয় বাড়লেও ১৩৯ বছরের পুরনো এ পৌরসভা অনেকটা যেন উল্টো স্রোতে চলছে। কেননা এ পৌরসভার বার্ষিক আয় স্থবির। ফলে, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রতিবছরই ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। আর যার খেসারত হিসেবে পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা বকেয়া থাকছে।

মজার বিষয় হলো, একই সমস্যায় আক্রান্ত পুরো পৌর পরিষদ। অর্থ সংকটের কারণে পৌরসভার মেয়র ও ১২ নারী-পুরুষ কাউন্সিলর গড়ে প্রায় ৭ মাস ধরে তাদের সম্মানি ভাতা নিতে পারছেন না। এ জন্য পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি বড় অংশ দায়ী বলে মনে করেন শেরপুর পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র ফিরোজ আহমেদ জুয়েল। কেননা তাদের কর্মস্থলে বসে হাওয়া খাওয়া ও খোশগল্প করতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু পৌরসভার আয় উন্নতিকল্পে মাঠে যেতে তাদের সমস্যার অন্ত নেই। সরেজমিন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হলে শেরপুর পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন ভাতা সম্পর্কে এরকম চিত্র উঠে আসে।

শেরপুর পৌরসভার কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পৌরসভায় বিভিন্ন পদে ৫ জন কর্মকর্তা ও ৪১ জন কর্মচারী কর্মরত। এছাড়া চুক্তিভিত্তিক ৪৫জন সুইপার ও ২২জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। অবশ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মানিভাতা বকেয়া থাকলেও সুইপার এবং শ্রমিকদের পারিশ্রমিক নিয়মিত পরিশোধ করা হয়। শেরপুর পৌরসভার কাউন্সিলর নিমাই ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে বিভিন্নখাত থেকে বছরে এই পৌরসভা ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১কোটি ১৫ লাখ টাকার মতো আয় করে থাকে। আয়ের খাতের মধ্যে রয়েছে হাটবাজার, পৌরকর, ট্রেড লাইসেন্স ও ভূমি উন্নয়ন কর।

এদিকে, বিভিন্নখাতে বছরে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো ব্যয় করতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মানিভাতা, জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ বিল, বাল্ব বাবদ, টিউবওয়েল, দরিদ্র তহবিল, ঈদ-পূজা, শ্রমিক ও সুইপারের পারিশ্রমিক, স্টেশনারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য। এই জনপ্রতিনিধি জানান, পৌরকর সঠিকভাবে তোলা গেলে সেই আয়ের সঙ্গে বছরের আরও অন্তত ১কোটি টাকা বাড়তি আয় যোগ হবে। তাহলে বেতন ভাতা নিয়ে এরকম সমস্যা হতো না। কিন্তু এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা কারো কথা শোনেন না বলে তিনি জানান।

তিনি আরও জানান, সমস্যাটি দীর্ঘ প্রায় দুইযুগ ধরে চলে আসছে। বর্তমান পরিষদের আমলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো বেতন ভাতাদি বকেয়া নেই। আর আগের সেই বকেয়াই ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। শেরপুর পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র ফিরোজ আহমেদ জুয়েল বাংলানিউজকে জানান, বিগত সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব জনবল নিয়োগ দিয়েছেন। আর নিয়োগের কাজটি যোগ্যতা অনুযায়ী করা হয়নি। ফলে, এসব কর্মচারী দিয়ে সঠিকভাবে কাজ বুঝে নেওয়া যায় না। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না কেন-এমন প্রশ্নের জবাব কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে তিনি জানান, পৌরকর্তৃপক্ষ এসব কর্মচারীদের নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় রয়েছে। পাশাপাশি তিনি পৌরসভার বেতন ব্যবস্থাকে রাজস্ব খাতে নেওয়ার দাবি জানান।