দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ মে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, তাঁর সরকার এই লক্ষ্য অর্জনে শান্তি, অগ্রগতি ও সৃষ্টি চায়, সংঘাত, পিছিয়ে যাওয়া এবং ধ্বংস চায় না। তিনি বলেন, ‘আমি সকলকে বলতে চাই- আমরা সংঘাত নয়, শান্তি চাই। আমরা অগ্রগতি চাই, পিছিয়ে যেতে চাই না এবং আমরা সৃষ্টি চাই, ধ্বংস চাই না। সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী সোমবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবস এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণে এ কথা বলেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ইমরান আহমেদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. ফয়জুর রহমান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে আইটিইউ’র মহাসচিব হোউলিন ঝাও-এর ভিডিও বার্তাও প্রচার করা হয়।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বসু অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবসের মূল প্রতিপাদ্যের ওপর নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী অন লাইন রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্যসংঘ দিবস এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী একটি ডাক টিকিট অবমুক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী এ বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে তিন মাস ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগামহীন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তাঁর সরকার দেশ ও জনগণের স্বার্থে এ ধরনের জঘন্য ও বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। শেখ হাসিনা বলেন, কোন কারণ ছাড়াই বিএনপি-জামায়াতের অশুভ শক্তি ৫ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ করে তথাকথিত হরতাল ও অবরোধ শুরু করে। তিনি বলেন, তারা জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করে এবং বাস, ট্রেন ও লঞ্চে চলাচলকারী সাধারণ মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে। তারা আন্দোলনের নামে বাস, ট্রাক ও সিএনজি চালকদের পুড়িয়ে হত্যা করে এবং গাছ ও রাস্তা কেটে ফেলে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে দেশে আর কখনো এ ধরনের জঘন্য অপরাধ ঘটেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে কখনো এ ধরনের আন্দোলন দেখিনি। আমরা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর দেখতে চাই না।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশ ও জনগণের উন্নয়ন এবং শান্তি চাই। আমরা চাই দেশের জনগণ সুন্দরভাবে জীবনযাপন করুক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রতি বছরের প্রথম দিনেই ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে আসছে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে হরতাল ও অবরোধ আরোপ করে তাদেরকে স্কুলে যেতে দেয়নি। তারা এসএসসি, ও-লেভেল এবং এ-লেভেল পরীক্ষার সময়েও হরতাল ও অবরোধ ডেকেছে। এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচির মাধ্যমে তারা ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাজীবন বিনষ্ট করতে চেয়েছিল।
বিএনপি-জামায়াতের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করতে চায়। তিনি বলেন, আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর, উন্নত ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আসুন বাংলাদেশকে বিশ্বের একটি মর্যাদাপূর্ণ জাতি হিসেবে গড়ে তুলি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আসুন, বিগত সাড়ে ছয় বছরে দিন বদলের যে ধারা শুরু হয়েছে আমরা সে ধারাকে আরো বেগবান করি। টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তির সকল সুবিধা ব্যবহার করে সরকারের রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়ন করি। বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করি।’