Rajshahi Online School News 19-5-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১৯ মে: শহর থেকে একটু বাইরে কাশিয়াডাঙ্গা বাইপাস সড়ক। ওই সড়ক ঘেঁষেই রেলপথ। পড়ে আছে রেলের বিস্তৃত জমি। জমির একখন্ড জমিতে উঠেছে স্কুল। সকালে যানবাহনের হর্ণের শব্দে কান যখন ঝালাপালা, ঠিক তখন কুটির থেকে কঁচি-কাঁচার কণ্ঠে ভেসে আসে বর্ণমালার শব্দ। ‘অ’ স্বরে অ-তে অজর; অজগর ওই আসছে তেড়ে। ‘আ’ স্বরে আ-তে আম; আমটি আমি খাবো পেড়ে। ইত্যাদি শিশুপাঠের ছড়াময় কোরাস। দুলে দুলে শিশুমনে পড়ে যাচ্ছে সবাই।

হ্যাঁ, স্কুল তবে আর দশটির চেয়ে একটু আলাদা। এটি সমাজের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পথ শিশুদের স্কুল। যারা তিন বেলা পেটপুরে খেতে পায় না। পায় না ঠিকমতো লেখাপড়ার সুযোগও। মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এসব শিশুদের জন্য উদ্যোগী হয়ে উঠেছে কিছু স্বপ্নবাজ তরুণ। হার্টবিট ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরুণরা মিলে গড়ে তুলেছে ‘হার্টবিট স্কুল’। এটি অনলাইন স্কুল। তবে দ্রুত গতির ইন্টারনেট না থাকায় এখন অনলাইনে ক্লাশ হয় সপ্তাহে দু’দিন। বিনে পয়সায় পথ শিশুদের পড়ানোর অসম্ভব ইচ্ছেকে সম্ভব করার প্রচেষ্টায় থাকা হার্টবিট ফাউন্ডেশনের জন্ম ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর। নগরের লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া (পাঠার মোড়) এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একপাশে রেলপথ অপরপাশে কাশিয়াডাঙ্গা বাইপাস সড়ক। রেলের খাস জমিতে দুইশ’ বর্গফুট জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে হার্টবিট স্কুল।

স্কুলের মাথার ওপর ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি কড়ই গাছ। দুই পাশে টিন। সামনে বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা। উপরে টিনের ছাউনি। সপ্তাহে দু’দিন সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ স্কুলের ক্লাশ নেন মিলা রহমান এবং মালয়েশিয়া থেকে মাহমুদ খায়রুল। তাই হার্টবিট অনলাইন স্কুলটির অন্যদিনে ক্লাশ নেওয়া হয় হোয়াইট বোর্ডে।

মাটির ওপর বেঞ্চ, সামনে হোয়াইট বোর্ড টানিয়ে এক চালার ছোট্ট কুটির ঘরই তাদের শ্রেণিকক্ষ। যেখানে ৩৫ জন পথ শিশু শিক্ষা নিচ্ছে। প্রথম শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তাদের পড়ানো হয়। শিশুদের বই-খাতা, কলম-পেন্সিলসহ যাবতীয় শিক্ষা উপকরণ হার্টবিট ফাউন্ডেশনই সরবারহ করে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, এসব ব্যয়ভার বহন করতে তাদের কোনো দাতা সংস্থা বা আলাদা কোনো ফান্ড নেই। প্রতিমাসে ১০০ টাকা হারে সংগঠনের সদস্যদের চাঁদা দিয়ে চলে এর শিক্ষা কার্যক্রম।হার্টবিট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার রহমান জানান, সংগঠনটি স্বেচ্ছাসেবী। তাদের প্রতিষ্ঠা করা হার্টবিট স্কুল রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মধ্যে পথ শিশুদের জন্য একমাত্র রেজিস্টার্ড স্কুল। তিনি জানান, তাদের সংগঠনে মোট সদস্য ২৪ জন। এর মধ্যে ইলিয়াস বিন কাশেম সংগঠনের চেয়ারম্যান এবং সাদমান সৌমিক চৌধুরী জেনারেল সেক্রেটারি। অর্না জামান আছেন সিইও হয়ে।

শাহরিয়ার রহমান বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হলো, শিক্ষাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সন্ধান দেওয়া ও দুঃস্থদের সেবায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করা। ‘এর আগে ১৫ জন শিশুকে নিজ খরচে পোশাক দেওয়া হয়েছে। ৩৫ জন শিশুকেই স্কুলের পোশাক এবং জুতো কিনে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের,’ যোগ করেন তিনি।

শাহরিয়ার জানান, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শিশুদের পাঠদান চলে। পথ শিশুদের স্কুলমুখী করতে ক্লাশের ফাঁকে টিফিনেরও ব্যবস্থা করা হয়।স্কুলে ইরেজি, বাংলা, অংক, সাধারণ জ্ঞানের বই পড়ানো হয় শিশুদের। স্থানীয় আশরাফ আলী মধু বিকেলে আরবি শিক্ষা দেন। তিনি জানান, তার এক বন্ধুর বাবা এমএ হালিম ওই জমিটি নিজ নামে লিজ নিয়ে স্কুলের জন্য ফাউন্ডেশনকে দিয়েছেন। ফাউন্ডে শনের স্বপ্নের কথা জানিয়ে এর প্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার বলেন, ২০২১ সালে বিজয়ের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে পথ শিশুদের জন্য পরিপূর্ণ আরও পাঁচটি অনলাইন স্কুল করতে চাই রাজশাহীতে। তবে কীভাবে হবে জানি না! তবে মনের জোরেই শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাবেন বলে জানান তিনি।

অনলাইন স্কুলের ইন্টারনেট গতি প্রসঙ্গে শাহরিয়ার রহমান বলেন, অনলাইন স্কুল চালাতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এরমধ্যে দ্রুত গতির ইন্টারনেটের অভাব উল্লেখযোগ্য। হার্টবিট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস বিন কাশেম জানান, তাদের স্কুলের পথ শিশুদের মনে পড়াশোনায় আনন্দের কোনো কমতি নেই। কারণ এখানে নেই কোনো বেতের ভয়, নেই বেতনের মতো কোনো ঝামেলা। আছে শুধু আনন্দ। আনন্দের মাধ্যমেই এখানে শিশুরা সব কিছু শেখে। ‘এখানে কারও কাছ থেকে নগদ টাকা-পয়সা নেওয়া হয়না। প্রয়োজন জেনে কেউ কিছু কিনে দিলে নেওয়া হয়,’ বলেন তিনি।