দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৯ মে: ব্যবসায়ীদের প্রতি আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তাই আগামী রমজানে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না বলে তিনি আশা করছেন। এক বছর আগে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম না বাড়ানোর যে অঙ্গীকার করেছিলেন তা রক্ষা করেছেন বলেই মন্ত্রী এমনটা ভাবছেন বলে জানান।মঙ্গলবার সচিবালয়ে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা ও পরিশোধনকারীদের সঙ্গে মন্ত্রীর বৈঠক হয়। সেখানে তিনি এই আশার কথা জানান।বৈঠকে বাণিজ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হোসেন মিঞা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডেও (এনবিআর) তথ্য ি য়ে বলেন, প্রতিটি পণ্যের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বেশি আছে।তাই দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।সাংবাদিকেরা মন্ত্রীর কাছে বোতলজাত সয়াবিন তেল ও খোলা সয়াবিন তেলের দামের পার্থক্য ২০ টাকা হওয়ংার কারণ জানতে চান। এ সময় মন্ত্রী বলেন, এটা তাঁর জানা নেই।পেঁয়াজের দাম ২৮ টাকা থেকে বেড়ে হঠাৎ ৪৮ টাকা কেন হলো জানতে চাইলে মন্ত্রী ব্যবসায়ীদের কাছে কারণ জানতে চান। এ সময় পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের বদলে ডাল ব্যবসায়ী গোলাম মওলা দাম বাড়ার কারণ জানান। বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে পেঁয়াজের দামের ওপর প্রভাব পড়েছে।শুধু রমজানে নয়, সারা বছরই দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে, দাম বাড়বে না।বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, পণ্য সরবরাহ ও মজুদ চাহিদার চেয়ে বেশি রয়েছে। গত বছরের মতো এবারও রমজানে বাজার স্থিতিশীল থাকবে।শুধু রমজানে নয়, সারা বছরই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে, দাম বাড়বে না বলে জানান তিনি।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ দেশজ উৎপাদন এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীল। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় এবার চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, চিনি, পিঁয়াজ, আদা, রসুনসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাহিদার বেশি পরিমাণ মজুদ রয়েছে।
মন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ভোজ্য তেলের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে দেশি উৎপাদন প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। আর প্রতি মাসে গড়ে এক লাখ দশ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন ও পাম তেলের দেশীয় চাহিদা ছাড়াও পবিত্র রমজানে ও ঈদুল ফিতরে বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হয়। তোফায়েল আহমেদ বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জুলাই ১৪ থেকে এপ্রিল ১৫ পর্যন্ত ১১ লাখ ৬৭ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল (পরিশোধিত-অপরিশোধিত) আমদানি হয়েছে। এনবিআর তথ্যমতে, দেশে ১৬ লাখ ৫৬ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল প্রবেশ করেছে।মন্ত্রী বলেন, খোলা সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য প্রতি লিটার ৮০ থেকে ৮২ টাকা। বোতলজাতের মূল্য ৯৩ থেকে ১০০ টাকা এবং পাম তেলের মূল্য ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। গতবারের তুলনায় ১৮ ও ৩০ শতাংশ কম।চিনির সরবরাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে ১৩ থেকে ১৪ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। এনবিআর তথ্যমতে, ১৪ লাখ ৮ মেট্রিক টন চিনি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে।
এছাড়া বাংলাদেশ সুগার করপোরেশনের কাছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চিনি মজুত রয়েছে। বর্তমান বাজারে চিনির খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৩৮ টাকা থেকে ৪২ টাকা। যা গতবারের চেয়ে ১০ শতাংশ কম। মশুর ডালের চাহিদা ৩ লাখ ৭৫ হাজারের বিপরীতে দেশি উৎপাদন প্রায় ২ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন এবং এলসি নিষ্পত্তি করা ১ লাখ ৯ হাজার মেট্রিক টন মশুর ডাল মিলিয়ে এবার সরবরাহ বেশি হয়েছে।মশুর ডালের খুচরা মূল্য প্রতি কেজি ৮৫ থেকে ১২০ টাকা। ছোলার চাহিদা রয়েছে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশি উৎপাদন প্রায় ১০ হাজার মেট্রিক টন বাকি প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করা হয়েছে। বর্তমান খুচরা বাজারে ছোলার (বুট) মূল্য ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। স্থানীয় বাজারে ছোলার মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, রমজানে প্রায় ১৩ হাজার মেট্রিক টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। এনবিআর তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ হাজার মেট্রিক টন খেজুর প্রবেশ করেছে। খেজুরের খুচরা মূল্য ৮০ থেকে ২২০টাকা।একইভাবে পিঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, বিবিধ মসলাও চাহিদার বিপরীতে বেশি সরবরাহ করা হবে বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।তিনি বলেন, গতবার রমজানের আগে ব্যবসায়ীরা অঙ্গীকার করেছিলেন, পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়বে না, তারা সেই কথা রেখেছেন। এই জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। ব্যবসায়ীদের ওপর আমার আস্থা রয়েছে। এবারও তারা সেই ব্যবস্থাই নেবেন।বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৯১ দিন অবরোধ ডেকে খালেদা দেশের সাপ্লাই চেইন ধ্বংসের চেষ্টা করেছিলেন। কিছুটা ক্ষতি হলেও ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় তার সেই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ, বিপণন, মূল্য স্থিতিশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ের রাখা নিয়ে পর্যালোচনা হয়।