দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ১৯ মে: গাজীপুরের চাপুলিয়ায় স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে স্বামীসহ ৪ জনকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২য় আদালতের বিচারক মো: ফজলে এলাহী ভূইয়া মঙ্গলবার দুপুরে ওই রায় দেন।নিহতের চাচা ও মামলার বাদী মো: শওকত আলী জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চাপুলিয়া এলাকার তার বড় ভাই মৃত মোহাম্মদ আলীর মেয়ে মোরশেদার সঙ্গে ১৯৯৮ সালে একই এলাকার আবু আইয়ুব লালনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর হতেই লালন যৌতুকের দাবীতে বিভিন্ন সময়ে দু’কন্যা সন্তানের জননী তার স্ত্রী মোরশেদাকে নির্যাতন করতো। ইতোমধ্যে একই এলাকার জনৈক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে লালন অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। এতে মোরশেদা তার স্বামীকে বাধা দেয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে ২০০৮ সালের ৫ নবেম্বর রাতে লালনের হুকুমে তার তিন সহযোগী ঘরে ঢুকে ৫ মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা মোরশেদাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কোপায়। এ সময় আহত মোরশেদার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসে এবং ছোরাসহ ঘাতকদলের হানিফকে হাতেনাতে আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। আশংকাজনক অবস্থায় মোরশেদাকে প্রথমে গাজীপুর সদর হাসপাতালে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মোরশেদা মারা যায়। এ ঘটনায় নিহতের চাচা মো: শওকত আলী বাদী হয়ে ৮নবেম্বর নিহতের স্বামীসহ চার জনকে আসামী করে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেফতার করে। শুনানী শেষে মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় মঙ্গলবার গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২য় আদালতের বিচারক মো: ফজলে এলাহী ভূইয়া নিহতের স্বামীসহ চারজন আসামীর প্রত্যেককে ফাঁসিতে ঝুলাইয়া মৃত্যু দন্ডাদেশ কার্যকরের আদেশ দেন। এছাড়াও আদালত দন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার রায় দেন। রায়ে আসামিরা ৭ দিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এসময় আদালতে বাদী ও আসামীগণ উপস্থিত ছিলো। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী ও নিহতের চাচা মোঃ শওকত আলী আদালতের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
দন্ডপ্রাপ্তরা হলো- মোরশেদার স্বামী ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চাপুলিয়া বন্নাইপাড়া এলাকার মো: ছলিম মুন্সির ছেলে আবু আইয়ুব লালন (৪২) এবং তার সহযোগী চাপুলিয়ার রিয়াজ উদ্দিন ভূইয়ার ছেলে মুল্লুক হোসেন ভূইয়া (৩০) ও একই এলাকার বদিউল আলমের ছেলে মো: রানা (৩৪) এবং মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার বলাই খাঁ এলাকার জুলহাস খানের ছেলে হানিফ মিয়া (৩২)।গাজীপুরের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ মকবুল হোসেন কাজল বলেন, মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাদের প্রত্যেককে ফাঁসির দন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে সরকার পক্ষ সন্তুষ্ট।এদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী হুমায়ুন কবির ও মো. শরীফ উদ্দিন জানান, আমরা ন্যায় বিচার পাইনি। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।