দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১৯ মে: গোদাগাড়ীতে পোস্টিং নিতে ব্যর্থ হলেও শেষ পর্যন্ত পবা থানায় পোস্টিং করা হয়েছে বিতর্কিত ওসি আলমগীর হোসেনকে। রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) নানা বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা ওসি আলমগীরকে পবা থানার ওসি হিসেবে পোস্টিং করেছেন। রাজশাহী জেলা পুলিশের রিজার্ভ অফিসার (আরও) গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে আলমগীর সোমবার পর্যন্ত পবা থানার দায়িত্ব নিতে পারেন নি। পুলিশের সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাজশাহীর রেঞ্জ ডিআইজির অব্যাহত চাপে আলমগীরকে পবা থানায় দিতে বাধ্য হয়েছেন রাজশাহীর এসপি। জেলা এসপি এই নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
জানা গেছে, বিতর্কিত ওসি আলমগীরকে পবা থানায় বদলি করে জেলার আরো দুই থানার ওসি পদে রদবদল করা হয়েছে। পবা থানার ওসি মতিয়ার রহমানকে বাগমারা থানায় বদলি করা হয়েছে। অন্যদিকে বাগমারা থানার ওসি আবু ওবাইদাকে জেলা পুলিশ লাইনে যুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে ওসি আলমগীরকে তার নির্বাচনী এলাকার থানায় দেওয়া পোস্টিং বাতিলের জন্য এসপিকে অনুরোধ করেছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিন। আয়েন উদ্দিন গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘বিতর্কিত এই পুলিশ কর্মকর্তা পবা থানার ওসির দায়িত্ব নিলে এলাকায় অপরাধ বাড়বে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।’ এলাকার মানুষও বিতর্কিত এই ওসিকে পবায় পোস্টং দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ওসি আলমগীরকে জেলার সদর থানা বলে পরিচিত পবার ওসি পদে পোস্টিং দেওয়ায় রাজশাহীর সর্বস্তরের সাংবাদিকসহ নগরীর ভুক্তভোগী অনেক মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওসি আলমগীরকে পবা থানায় বদলি করায় জেলায় দায়িত্বরত বিভিন্ন স্তরের পুলিশ সদস্যদের মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ওসি আলমগীরকে পবা থানায় বদলি করে ডিআইজি অপরাধে সিদ্ধহস্ত এই ধরনের কর্মকর্তাদের উৎসাহিত করেছেন বলে মনে করেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বোয়ালিয়া থানার দায়িত্বে থাকাকালীন ওসি আলমগীর যে ধরনের অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন, তাতে শাস্তির বদলে তাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে।’ বিতর্কিত ওসিকে রক্ষায় রেঞ্জ ডিআইজির রহস্যজনক ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করেন সামাজিক সংগঠনের এই নেতা।
চাকরি জীবনের নানান বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত ওসি আলমগীর ২০১২ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রথমবার কিছু সময় বোয়ালিয়া মডেল থানার দায়িত্বে ছিলেন। এই সময়ে ওসি আলমগীর টাকার বিনিময়ে বিবদমান এক পক্ষের হয়ে জমি দখল নিতে গিয়ে আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘন করেন। আদালত এই অপরাধে তাকে অন্যত্র বদলির নির্দেশ দেন। ফলে মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ওসি আলমগীরকে ক্লোজড করে খুলনা রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়।
বিপুল টাকা পয়সা খরচ করে রাজশাহীর রেঞ্জ ডিআইজি ইকবাল বাহারকে ‘ম্যানেজ’ করেন আলমগীর। তার সুপারিশে আবার ঢুকে পড়েন আরএমপিতে। এদিকে চলমান সহিংসতার মধ্যেই গত ২৩ জানুয়ারি আলমগীর হোসেনকে খুলনা থেকে বদলি করে এনে রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি করা হয়। বোয়ালিয়া থানা থেকে একবার ক্লোজড হওয়া আলমগীর হোসেনকে পুনরায় একই থানার দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে পুলিশের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা আমলে নেননি।
আলমগীরের গ্রেফতার বাণিজ্যের খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশ হয়ে পড়লে বিতর্কিত এই ওসি যুগান্তরের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান আনু মোস্তফা, দৈনিক প্রথম আলোর ফটোসাংবাদিক শহীদুল ইসলাম ও চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা পারসন রায়হানুল ইসলামকে একাধিক গাড়ি পোড়ানো ও সহিংসতার মামলায় আসামি করেন।
আলমগীরের গ্রেফতার বাণিজ্যের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত ৪ মে ওসি আলমগীরকে আবার সুপারিশ করে রাজশাহী রেঞ্জে বদলি করে আনেন রেঞ্জ ডিআইজি ইকবাল বাহার। তাকে ওইদিনই রাজশাহী জেলায় বদলি করা হয়।