Rajshahi City Meyor News 18-5-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ১৮ মে: পুলিশআতঙ্কে মেয়র, প্যানেল মেয়র-১ ও ২ এর পর এবার ঘরে ছেড়েছেন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-৩ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নুরুন নাহার বেগমও। সিটি মেয়র বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল সাময়িক বরখাস্তের পর আইন অনুযায়ী তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। মূলত এরপরই পুলিশী তৎপরতা শুরু হয়। ইতিমধ্যে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছেন, নুরুন নাহারের নামে কোনো মামলা নেই। তবে পুলিশের দাবি, সরকারবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগে দায়ের করা ৩-৪টি মামলার সন্দেহভাজন আসামী নুরুন নাহার।

জানা গেছে, গত ৭ মে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তের চিঠি আসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ধারা ১২ ধারা অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রদান করা হলে উক্ত আদেশপ্রাপ্তির তিনদিনের মধ্যে সাময়িকভাবে বরখাস্তকৃত মেয়র তার দায়িত্ব পালনকারী জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে মেয়রের প্যানেলের সদস্যের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। কিন্তু রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ বিএনপি নেতা আনোয়ারুল আমিন আজব ও প্যানেল মেয়র-২ নুরুজ্জামান টিটো দুইজনই পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ হত্যার মামলার আসামী। এর মধ্যে আজব রয়েছেন কারাগারে। আর টিটো প্রায় চার মাস ধরে আত্মগোপনে। সে হিসেবে প্যানেল মেয়র-৩ বিএনপি নেত্রী নুরুন নাহার বেগম ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাওয়ার কথা। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী বুলবুল বরখাস্তের চিঠি পাওয়ার পর পরই প্যানেল মেয়র-৩ নুরুন নাহার বেগমকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব প্রদানের চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের জন্য নাহার নিজে থেকে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন নি। তবে নাহারকে দায়িত্ব প্রদানের জন্য চিঠিও দেয়া হয় নি সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে।

এদিকে, মেয়র বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তের পর প্যানেল মেয়রদের সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় চিঠি দেয় সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে। জবাবে জানানো হয়, প্যানেল মেয়র-১ আনোয়ারুল আমিন আজব ও প্যানেল মেয়র-২ নুরুজ্জামান টিটো দুইজনই পুলিশ সদস্য সিদ্ধার্থ হত্যার মামলার আসামী। এর মধ্যে আজব রয়েছেন নাশকতার মামলায় কারাগারে। তবে প্যানেল মেয়র-৩ নুরুন নাহার বেগমের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।অপরদিকে, এ অবস্থায় মন্ত্রণালয় থেকে অপর এক চিঠিতে নতুন করে প্যানেল মেয়রদের তালিকা তৈরি করে পাঠাতে বলা হয় রাজশাহী জেলা প্রশাসককে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সে তালিকাও পাঠানো হয়েছে। এতে প্যানেল মেয়র-১ হিসেবে ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু, প্যানেল মেয়র-২ হিসেবে ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিযাম উল আজিম ও প্যানেল মেয়র-৩ হিসেবে সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মুসলিমা বেগম বেলির নাম পাঠানো হয়। এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্যানেল মেয়রদের নামের একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এরপর এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।

এদিকে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নতুন প্যানেল মেয়রদের তালিকা পাঠানো পর ভারপ্রাপ্ত মেয়র হতে মন্ত্রণায়লয়ে ছুটোছুটি শুরু করেন কাউন্সিলর কামরুজ্জামান কামরু। তিনি রাজশাহীর একজন এমপি’র সমর্থনে জোরালো তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা কামরু সমর্থন না দেয়ায় সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না বলে সূত্র জানায়।এ অবস্থায় গত ১২ মে প্যানেল মেয়র-৩ নাহার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠান। ভারপ্রাপ্ত মেয়র ইস্যুতে নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। বিএনপি সমর্থকরা নাহারের পক্ষ নিলেও আওয়ামী লীপন্থীরা কামরুর পক্ষে অবস্থান নেন।

এদিকে প্যানেল মেয়র-৩ নুরুন নাহার বেগম অভিযোগ করে জানান, তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশের পর থেকেই পুলিশ পিছু নিয়েছে। ১২ মে ও গত শনিবার গভীর রাতে রাণীনগর এলাকার তার বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়। এমন কি তার বাড়ির আশেপাশে সাদা পোশাকে অবস্থানও নিয়েছে পুলিশ। তিনি বলেন, কোনো মামলার না থাকার পরও শুধু বিএনপি করার কারণে আমাকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে না। এরপরও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।এবিষয়ে নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাহমুদ হাসান গতকাল রোববার বিকেলে বলেন, কাউন্সিলর নুরুন নাহারের বিরুদ্ধে ৩-৪টি মামলা রয়েছে। কিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী কর্মকান্ডের অভিযোগ থাকায় পুলিশ গ্রেফতারের জন্য খুঁজছে।উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৫জুন অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হন। এর সরকারবিরোধী আন্দোলনের নেমে অন্তত ১৬টি মামলার আসামী হয়েছেন তিনি। গ্রেফতার এড়াতে প্রায় চার ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন বুলবুল।