দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৮ মে: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, তিনি দেশে ফিরতে চান।স্বেচ্ছায় নয়, চোখ ও হাত বেঁধে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাঁকে শিলংয়ে আনা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। সোমবার দুপুরে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিনকে বিচারাধীন মামলার আসামিদের ওয়ার্ড থেকে শিলং সিভিল হাসপাতালের মূল ভবনে সিটি স্ক্যান করতে নেওয়া হয়। এ সময় তিনি গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় সালাহ উদ্দিন আহমদকে দুর্বল দেখায়। পুলিশ তাঁকে ধরে রেখেছিল। তাঁর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি।
সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারির কারণে তাঁর দেশে ফেরার ব্যাপারে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে সহযোগিতা করে সরকার ভালো কাজ করেনি।বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, গলফ-লিংক এলাকায় যাওয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন তিনি কোথায়।এ সময় তিনি স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশের কাছে যান।সালাহ উদ্দিন আহমদের স্ত্রী হাসিনা আহমদ ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে কলকাতা থেকে বিমানে আসামের দিকে রওনা হয়েছেন। বিকেল চারটার দিকে তাঁর শিলংয়ে পৌঁছানোর কথা।গত মঙ্গলবার থেকে শিলং সিভিল হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ জি কে গোস্বামীর তত্ত্বাবধানে সালাহ উদ্দিন আহমদের চিকিৎসা চলছে। গতকাল শিলংয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক আবদুল লতিফ সাংবাদিকদের বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমদের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি কোনো কথা মনে রাখতে পারছেন না বলে আবদুল লতিফ জানান।
আবদুল লতিফের বক্তব্যের পর থেকে চিকিৎসক গোস্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, সালাহ উদ্দিন স্বাভাবিকই আছেন। শনিবার হাসপাতালে তাঁকে দেখে মনে হয়নি যে তিনি কথা ভুলে যাচ্ছেন।সাত দিন পেরিয়ে গেলেও অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিএনপি নেতাকে কবে আদালতে নেওয়া হচ্ছে, কেউ তা নিশ্চিত করে বলছেন না। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকের ছাড়পত্র পাওয়া গেলে তাঁকে আদালতে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।গত সোমবার ভোরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের গলফ-লিংক এলাকায় উদ্ভান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় স্থানীয় লোকজনের ফোন পেয়ে পুলিশ সালাহ উদ্দিন আহমদকে গ্রেপ্তার করে বলে জানানো হয়। শিলংয়ে তিনি কীভাবে পৌঁছালেন, গত সপ্তাহেও সে রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি। এদিকে, ভারতীয় সংবাদপত্র টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক মানস দাস বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, সকালে কলকাতা থেকে একটি বিমানে করে শিলং এসে পৌঁছান হাসিনা আহমেদ।এছাড়া মেঘালয় পুলিশ ইঙ্গিত দিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে কোন সমস্যা হবে না।দুই মাস ‘নিখোঁজ’ থাকার পর ১১ ই মে শিলংয়ে সালাহ উদ্দিনের খোঁজ পাওয়া যায়। বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পর আদালতে পাঠানো হবে। আদালতই সিদ্ধান্ত দেবে তাকে দেশে পাঠানো হবে নাকি জেলে পাঠানো হবে। মেঘালয় পুলিশ প্রশাসন আশা করছে, বিএনপির এই নেতাকে দ্রুত ছাড়া হবে হাসপাতাল থেকে।
মেঘালয় পুলিশের ডেপুটি মহাপরিচালক রাজিব মেহতা জানান, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই কেবল সালাহ উদ্দিন আহমেদকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। আমার মনে হচ্ছে তিনি খুব তাড়াতাড়িই ছাড়া পেয়ে যাচ্ছেন হাসপাতাল থেকে। মেঘালয় গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, সালাহ উদ্দিনকে দেশে পাঠানোর জন্য তাকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ভারতে অনুপ্রবেশকারী কোনো ব্যক্তিকে তার দেশে ফেরত পাঠানোর কাজটি দেখভাল করে থাকে বিএসএফ। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা এখনো এ নিয়ে কোনো নির্দেশনা পায়নি।কিন্তু সালাহ উদ্দিনের দেশে ফেরা নিয়ে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর একটি কারণতার অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা। আরেকটি হচ্ছে সিলং হাসপাতোলে চিকিৎসা গ্রহণ। এখনো তার কিছু টেস্ট বাকি রয়েছে। মেঘালয় পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে আদালতের সামনে উপস্থাপন করতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করার দিকে এগুচ্ছে। স্থানীয় আইন-কানুনও এর সঙ্গে জড়িত। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।সালাহ উদ্দিন আহমেদ শিলং হাপাতালে ভর্তি হন ১২ মে। আর আগের দিন তাকে মেঘালয় মানসিক হাসপাতালে নেয়া হয়। ১১ মে তাকে অবৈধ অনুপ্রবেশের ( বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভ্রমণ) অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
একজন সিনিয়র আইনজীবীর বরাত দিয়ে শিংল টাইমস জানায়, ফরেনার অ্যাক্ট লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ সালাহ উদ্দিনকে আদালতে পাঠাবে। আর আদালতের হেফাজতে থাকা মানেই হচ্ছে তাকে জেলে যেতে হবে। ফরেনার অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে তার সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেলও হতে পারে।রাজিব মেহতা বলেন, আদালতই সিদ্ধান্ত নেবেন তাকে ফরেনার অ্যাক্ট লঙ্ঘনের দায়ে শাস্তি দেয়া হবে নাকি দেশে ফেরত পাঠানো হবে। এছাড়া যদি দিল্লি সরকারের কোনো নির্দেশনা আসে তাও আমরা আদালতে উপস্থাপন করবো।উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর পাঠানো হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে ফেরার পর কেবল সালাহ উদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। ভারতে থাকাকালীন নয়।
খবর বেরুলেও সালাহ উদ্দিনকে হস্তান্তরের বিএসএফ কোনো নির্দেশনা পায়নি। এ ব্যাপারে বিএসএফ ডিআইজি এসকে সিং বলেন,দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলে বিষয়টি বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশকে ( বিজিবি) জানানো হবে। সীমান্তে তাদের কাছেই হস্তান্তর করা হবে।ডা. ডি জে গোস্বামী রোববার বলেন, সালাহ উদ্দিনের ইসিজি করা হয়েছে। তার হার্টের অবস্থা স্বাভাবিক। আল্ট্রা সাউন্ডে তার কিডনিও পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কিডনির অবস্থা সন্তোষজনক নয়। এ কারণে তাকে দ্রুত সিটি স্ক্যান করাতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্কিন পরীক্ষার জন্যও একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিয়োজিত করা হয়েছে।বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ জনি রোববার দাবি করেন, সালাহ উদ্দিনের স্মৃতিভ্রম হয়েছে। এর পর সোমবার সালাহ উদ্দিনের সিটি স্ক্যান করা হয় সিভিল হাসপাতালে।তবে সব মিলিয়ে সালাহ উদ্দিন কম বেশি সুস্থ্য রয়েছেন। তিনি হাসপাতালের দেয়া খাবার খাচ্ছেন বলে জানা গেছে।