দৈনিকবার্তা-বগুড়া, ১৮ মে: সংখ্যালঘুদের ত্রাস আর শাজাহানপুর উপজেলার পালপাড়ার দুই সহস্রাধিক বাসিন্দার রাতের ঘুম কেড়ে নেয়া সন্ত্রাসী মোর্শেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন হিন্দু নারীরা। প্রায় এক যুগ ধরে মুখ খুলতে পারছিলেন না পালাপাড়ার নির্যাতিত নারীরা। শুধু নীরবে সয়ে গেছে অত্যাচার।
প্রথম দিকে শুধু চাঁদাবাজির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও দিন দিন বেড়েছে মোর্শেদ বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। একই হারে বেড়েছে অত্যাচারের মাত্রাও। চাঁদার পরিমাণ যেমন বাড়ছিল তেমনি হামলা চালিয়ে ভাঙচুর মারধরের মাত্রাও বাড়ছিল।এক পর্যায়ে মোর্শেদের অত্যাচার, চাঁদাবাজির পাশাপাশি শুরু হয় অন্যধরণের নির্যাতন। পালপাড়ার বালিকা থেকে শুরু করে কলেজপড়ুয়া তরুণী কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা নারী বা বিধবার ওপর চোখ পড়ে তার। সময়ে অসময়ে সে পালপাড়ায় এসে নারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালাতো।
পুরুষদের চোখের সামনেই তাদের স্ত্রী কন্যাদের শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করতো। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে নিঃস্ব হতে হতো। মোর্শেদের অত্যাচারে কিশোরী আর তরুণীরা ঘরের বাইরে সহজে বের হতো পারতো না।বছর খানেক আগে মায়া রাণী নামে এ বিধবার এক মাত্র ঘর ভাঙচুর করে। এরপর তার বাড়ির গাছপালা কেটে নিয়ে যায়। তার বাহিনীর সদস্যরা স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। এরপর চলে পাশবিক নির্যাতন। একই ভাবে এক কলেজছাত্রীকেও তুলে নিয়ে যায়। এরপর সেই ছাত্রীর পরিবার পালিয়ে যায় ভারতে।
সোমবার মোর্শেদ বাহিনীর প্রধান মোর্শেদ আলম গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে। তার গ্রেপ্তারের খবরে পালপাড়ায় নারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে অনেকেই। এক পর্যায়ে দুপুরে নির্যাতিতসহ পালপাড়ার বাসিন্দারা মোর্শেদের গডফাদার সাজ্জাতকে গ্রেপ্তার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। পরে তারা শাজাহানপুর থানা ঘেরাও করে।
এসব ঘটনার পরে সাংবাদিকদের কাছে মোর্শেদ বাহিনীর অত্যাচারের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেন পালপাড়ার নারীরা। বিক্ষুব্ধ কয়েকজন নারী জানান, মোর্শেদ বাহিনী পাড়ার পুরুষ সদস্যদের রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে মারধর করতো। সে কারণে পাড়ার পুরুষ সদস্যরা জিম্মি হয়ে পড়েছিল। এ সুযোগে তারা নারীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করা ছাড়াও স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন চালাতে থাকে। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করলেই রাতের আঁধারে মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল ভেঙে ফেলা আর গাছপালা কেটে ফেলে।
নারীরা জানান, ২০১২ সালে মোর্শেদ বাহিনীর সদস্যরা পাড়ার কলেজপড়ুয়া এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন চালায়। এরপরই পুরো পালপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। আতঙ্কিত প্রদীপ পাল নামে এক ব্যক্তি তার দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে ভারত পালিয়ে যান। একই ভাবে সপরিবারে দেশ ছেড়ে যায় আরো কয়েকটি পরিবার।
মোর্শেদ বাহিনীর ভয়ে নির্ঘুম সংখ্যালঘুরা
সংখ্যালঘুদের ত্রাস সেই মোর্শেদ গ্রেপ্তার
পালপাড়ার হিন্দুদের থানা ঘেরাও
মুখ খুলছেন পালাপাড়ার নারীরা