দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ মে: দক্ষিণ-দক্ষিণএশিয়ায়মানবপাচাররোধে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে একমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমান।রোববার মালিয়েশিয়ার বোর্নিও দ্বীপের সাবাহ দেশের কোতা কিনাবালু শহরে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ কমিশনের বৈঠকে এ মতপোষণ করেন তারা।বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। আর মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দাতো সেরি আনিফা আমান।এর আগে, ১৬ মে দু’দেশের অতিরিক্ত সচিবদের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পর্যায়ে বৈঠক হয়।
উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দু’দেশের মধ্যকার বর্তমান আন্তরিক সম্পর্ক নিয়ে দুই নেতাই সন্তোষ প্রকাশ করেন। একইসঙ্গে দু’দেশের স্বার্থে উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়সহ নিয়মিত যোগাযোগ রাখার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।বৈঠকে, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগ, অবকাঠামো উন্নয়ন,পর্যটন,সংস্কৃতি,শিক্ষা,কৃষি এবং বিঞ্জান ওপ্রযুক্তিসহ সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।এই বৈঠকের আগে গতকাল শনিবার উভয় দেশের উর্দ্ধতন সরকারি কর্মকর্তারা বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিব নেতৃত্ব দেন।আন্তরিক ও হৃদ্যতাপূর্ন পরিবেশে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার যৌথ কমিশনের বৈঠকে উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে উভয় নেতা আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বসহ উভয় দেশের কর্মকর্তাদের নিয়মিত সফর নেতৃবর্গ ও কর্মকর্তাদের পরস্পরের যোগাযোগের পাশাপাশি উভয় দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পর্ক ও উন্নয়নের নেপথ্যে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
এ বৈঠকে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এ সময় উভয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার জনগণের পরস্পরের স্বার্থে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ওপর পুনরায় গুরুত্ব আরোপ করে এ ব্যাপারে নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনে একমত পোষণ করেন।এতে জানানো হয়, বৈঠকে উভয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মালয়েশিয়া সাউথ-সাউথ এ্যাসোসিয়েশন (এমএএসএসএ) ও বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (বিএমসিসিআই)সহ বিদ্যমান প্লাটফর্মগুলোকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম গঠনে সম্মত হন। বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে একমত পোষণ করেন। সেইসঙ্গে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান, অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন, পর্যটন, সংস্কৃতি, শিক্ষা, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দুই দেশের অবস্থান নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন তারা। বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী মালয়েশিয়া দক্ষিণ-দক্ষিণ অ্যাসোসিয়েশন (এমএসএসএ) ও বাংলাদেশ মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজকে (বিএমসিসিআই) বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ায় বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হবে বলেও সিদ্ধান্তে আসেন।যৌথ কমিশনের এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ায় আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অনুরোধ জানানো হয়।
পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তর (এমএমডি) ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) নিজ নিজ তথ্য আদান-প্রদান করে দুই দেশের জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ে আরও উন্নয়নের চেষ্ট করা হবে বলে এসময় একমত হন মাহমুদ আলী ও আনিফাহ আমান।এছাড়া, দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে ও সম্পর্কোন্নয়নে নিয়মিতভাবে বার্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলেও একমত হন দুই নেতা।এসময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মানে মালয়েশিয়ায় একটি শহীদ মিনার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। জবাবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নেওয়ার কথা বলেন মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী।এসময় আসিয়ান সংলাপের অংশীদার হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিফাহ আমানের কাছে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী। এ ব্যাপারে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দেবে বলে নিশ্চয়তা দেন দেশটির আনিফাহ আমান। বৈঠকে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩১ পয়েন্টের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পাশাপাশি ২০১৭ সালে ঢাকায় একটি যৌথ কমিশনের বৈঠকে অংশ নেবেন বলেও একমত হন বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে দেশটির একটি ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসবে যোগ দেন মাহমুদ আলী।