দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ মে: রোবাবর ১৭ মে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের এদিন দীর্ঘ নির্বাসন শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন।এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কোলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এসময় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান।
বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।শেখ হাসিনা দীর্ঘ নির্বাসন শেষে ৩৪ বছর আগে ১৯৮১ সালের ১৭ মে ঢাকায় ফিরে তৎকালীন কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসার জবাবে এসব কথা বলেন।কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আজকের জনসভায় লাখো লাখো চেনামুখ আমি দেখছি। শুধু নেই আমার প্রিয় পিতা বঙ্গবন্ধু, মা আর ভাইয়েরা এবং আরো অনেক প্রিয়জন।শেখ হাসিনা বলেন, ভাই রাসেল আর কোনো দিন ফিরে আসবে না, আপা বলে ডাকবে না। সব হারিয়ে আজ আপনারাই আমার আপনজন।শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এ সময় তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রবাসে থাকায় ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পান।১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপ¯ি’তিতে তাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।
একই বছরের ১৭ মে তিনি বাংলার মাটিতে ফিরে আসেন। এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ৭৩৭ বোয়িং বিমানে তিনি ভারতের রাজধানী দিল্লী থেকে কলকাতা হয়ে তৎকালীন ঢাকা কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন।শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে পরদিন ১৯৮১ সালের ১৮ মে দৈনিক সংবাদ ‘লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্যদিয়ে বরণ করে নেয় তাদের নেত্রীকে শিরোনামে লিখে- রাজধানী ঢাকা গতকাল (১৭ মে) মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টিও মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। শ্লোগানেও ভাটা পড়েনি। লাখো কণ্ঠের শ্লোগান নগরীকে প্রকম্পিত করেছে।সংবাদ আরো বলা হয়, বিকেল সাড়ে চারটায় আকাশে যখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি দেখা যায় তখন সকল নিয়ন্ত্রণ আর অনুরোধ আবেদন অগ্রাহ্য করে হাজার হাজার মানুষ বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকে যায়। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিমানটি অবতরণ করে। জনতা একেবারেই বিমানের কাছে চলে যায়।বহু চেষ্টার পর জনতার স্রোতকে কিছুটা সরিয়ে তাকে বহনের জন্য আনা ট্রাকটি ককপিটের দরজার একেবারে সামনে নেয়া হয়। এই সময় শেখ হাসিনা ভেতর থেকে জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন।
বিকাল ৪টা ৩২ মিনিটে শেখ হাসিনা কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ট্রাকে নেমে আসেন। এই সময় লাখো জনতার কণ্ঠে ছিল গগন বিদারী শ্লোগানÑ ‘শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলামÑ মুজিব হত্যার বদলা নেব।’ এ সময় অনেকের চোখে ছিল অশ্র“ধারা। আবদুর রাজ্জাক যখন মালা পরিয়ে দেন তাঁকে, তখন শেখ হাসিনাও অঝোর ধারায় কান্না করছিলেন।এ সময় শেখ হাসিনার পরনে ছিলো সাদা রঙের ওপর কালো ডোরাকাটা তাঁতের শাড়ী ও মাথায় ঘোমটা ঢাকা।কুর্মিটোলা থেকে শেখ হাসিনার শেরেবাংলা নগরে এসে পৌঁছতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা। এ সময় ঝড় বৃষ্টিতে নগর জীবন প্রায় বিপণœ।রাস্তাঘাট স্বাভাবিক জীবন যখন ব্যাহত তখন এখানে অপেক্ষা করে কয়েক লাখ মানুষ। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তিনি গণসংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত হন। পরবর্তীতে ১৯৮১ সালের ১৪, ১৫ ও ১৬ ফেব্র“য়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের হৃদয় ছোঁয়া ভালবাসার জবাবে তিনি বলেন, বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি দেশে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসাবে, মেয়ে হিসাবে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই।আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে এদেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ ভূলুণ্ঠিত করা হয়। ১৯৮১ সালের ১৭ মে রাজনীতিবিদ হিসাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আবারো দেশে স্বাধীনতার মূল্যবোধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর যারা ছিল অবহেলিত ও নির্যাতিত, শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তনে ও তার নেতৃত্বের পরশে তারা আবারো জেগে ওঠার সাহস ও প্রেরণা পায়। এদিন শেখ হাসিনার নামে যথার্থই জেগে ওঠে বাংলাদেশ।দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ৭ দিন ব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।এ উপলক্ষে ১৬ মে বিকেল ৩টায় রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়।রোববার ১৭ মে সূর্যোদয় ক্ষণে সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ১০টায় রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ও সকাল ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দলীয়, অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষরা শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে গঠিত উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন আগামী ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ মে আওয়ামীলীগের অঙ্গ-সহযোগি, ভ্রাতৃপ্রতীম ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করবে। এ ছাড়া ২২ মে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে বর্ণাঢ্য র্যালী বের হবে। র্যালীটি ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে শেষ হবে।