দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ মে: প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড.মশিউর রহমান নগরায়ণের সুফল পেতে নগর ও শহরের উপযুক্ত ভূমি ব্যবহার নীতিমালা প্রণয়নের আহবান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে ভূমি ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু ও টেকসই নগরায়ণের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আর্ন্তজাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আরবান ফোরাম (বিআরএফ) এবং পরিকল্পনা কমিশনের যৌথ আয়োজনে ‘৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নগরায়ণ ভাবনা বিষয়ক’ পরামর্শ সভায় বিশেষজ্ঞগণ এমন অভিমত দেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান।পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য প্রফেসর শামসুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নগরবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য দেন। পরামর্শ সভার প্রারম্ভিক সেশনে বক্তব্য দেন ইউএনডিপি কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন ট্যামেসিস, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মইনুদ্দিন আবদুল্লাহ এবং পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আজম ।পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের খসড়া উপস্থাপনার ওপর আলোচনায় অংশ নেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, বুয়েট নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক রোকসানা হাফিজ, পৌরসভা সমিতির উপদেষ্টা এডভোকেট আজমতউল্লাহ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব এবং উন্নয়ন সহযোগী ডিএফআইডি’র উপদেষ্টা নাভেদ চৌধুরী।
ড. মশিউর রহমান বলেন, আমাদের দেশের ভূমি আইন ও ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জটিল। তাই, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন।গত পঞ্চাশ বছরে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে নগরায়ণ হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮১ সালের এক কোটি ৩৫ লাখ জনসংখ্যা মাত্র চার দশকে দাড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখে। নগরায়ণের প্রবৃদ্ধির এ হার বার্ষিক ৪ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ নগরে বাস করছে। নগরায়ণের এই মাত্রা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০৫১ সালে বাংলাদেশের ৫৫ শতাংশ মানুষ নগরে বাস করবে।অপরিকল্পিত ও অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণের ফলে এখনই শহর ও নগরে বসবাসকারী মানুষেরা নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিশৃঙ্খল নগর উন্নয়ণ, বেকারত্ব, পরিবেশের অবনতি, মৌলিক সেবা প্রাপ্তির অভাব,অপরাধ এবং নগর দরিদ্র জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে। এজন্য সুষম ও টেকসই নগরায়ন নিশ্চিতকল্পে উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ জরুরী।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নগরায়ণ বিষয়ক খসড়া উপস্থাপনায় বলা হয়, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষির অবদান কমছে এবং নগর খাত তথা শিল্পের অবদান বাড়ছে। কাজেই দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রাখতে সুষম ও টেকসই নগরায়ণ নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে, নগর সুশাসন, আবাসন, পরিবহন এবং নগর দারিদ্র্য বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নগরায়ণ’ বিষয়ক খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে ।প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, জিডিপিতে নগরায়ণ খাতের ক্রমবর্ধমান অবদান বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে জাতীয়ভাবে এ খাতকে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি এ প্রসঙ্গে জাতীয় নগরায়ণ নীতিমালা গ্রহণের আহবান জানান। বলেন, জাতীয় গৃহায়ণ নীতিমালায় বর্ণিত বিষয়সমূহ ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার জন্য গ্রহনীয় হতে পারে। তিনি সুষম ও টেকসই নগরায়নের জন্য উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ জরুরী বলে মত দেন।
ইউএনডিপি কান্ট্রি ডিরেক্টর পলিন ট্যামেসিস বলেন, ‘সিটি ভিশন’ বা নগর ও শহরগুলোর জন্য পরিকল্পনা তৈরী করা দরকার। এ সব পরিকল্পনায় নগরবাসীদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে।ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমানে নগরায়ন বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। আশার কথা যে, ৭ম পরিকল্পনায় সুষ্ঠু নগরায়ণ নিয়ে বিশদ নীতি -নির্ধারণী পরিকল্পনা রয়েছে । কিন্তু নগরায়ণের ক্ষেত্রে ঢাকা এবং সেকেন্ডারী সিটির (জেলা/উপজেলা) জন্য একই পরিকল্পনা করা খুবই দুরূহ ব্যাপার। কেননা, দুটি শহরের ব্যাপকতা, নগরায়ণ ধারা ভিন্ন মাত্রার।তিনি আরো বলেন, সুষম নগরায়ণ করার জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। নগর দারিদ্র্য বিষয়ে একটি ভুল ধারনা রয়েছে, যা শোধরানো দরকার। নগর দরিদ্ররা গ্রামীণ দরিদ্রের চেয়ে বেশি আয় করলেও, শহরের দরিদ্র জনগণ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে পিছিয়ে আছে, যা সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।বক্তারা বলেন, সুষম ও টেকসই নগরায়ণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রথমইে নগরায়ণ রূপকল্প বা লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে যা মূলত: নাগরিক বান্ধব এবং মৌলিক সেবাসমূহ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে রচিত হবে। এই রূপকল্প নির্ধারণে শুধু রাজধানী নয় বরং দেশকে সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় আনতে হবে।