দৈনিকবার্তা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ১৬ মে: যারা ধ্বংসের রাজনীতি আর মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের ভোট দেবেন না রাজনীতি করার অধিকার তাদের নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।বিএনপি-জামাত মানেই ধ্বংসের রাজনীতি উল্লেখ করে ধ্বংসকারীদের ভোট না দেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, বিএনপি বিদ্যুৎ দিতে পারে না, কিন্তু আওয়ামী লীগ বিদ্যুৎ দিলে ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়িয়ে ধ্বংস করে। বিএনপি মানেই ধ্বংসের রাজনীতি করা। জামাত মানেই ধ্বংসের রাজনীতি করা। তারা মানুষের ধ্বংস করতে পারে। এদের মতো জঘন্য রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষ আর দেখে নাই।সন্ত্রাসীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই উল্লেখ করে তাদেরকে ধরিয়ে দেয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামাত আপনাদের বিদ্যুৎ দিতে পারেনি, দিয়েছে গুলি। বিদ্যুতের জন্য আপনারা আন্দোলন করায় তারা আপনাদের উপর গুলি চালিয়েছিল। সেদিন ১৮ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করে তারা।অবরোধ হরতালের নামে যারা মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে তাদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।এ সময় উন্নয়নের নানা দিক তুলে ধরে ছিট মহলবাসীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান শেখ হাসিনা। পরে সাফল্যের নানা দিক তুলে ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ উন্নয়নের নানা বিভিন্ন প্রতিশ্র“তি দেন তিনি।
এর আগে এর আগে বেলা একটার দিকে সদর উপজেলার সাহেবেরঘাট এলাকায় গিয়ে মহানন্দা নদীর ওপর শেখ হাসিনা সেতু’ (দ্বিতীয় মহানন্দা সেতু) উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এ সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের আওতায় এলো।এ সাতটি উজেলার ৮০% কৃষি জমিতেই রয়েছে আমের বাগান। এলাকাবাসির দাবির প্রেক্ষিতে সেতুটির নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা সেতু।এরপর প্রধানমন্ত্রী চাপাইনবাবগঞ্জ যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউট উপকেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ অন্ধ কল্যাণ সমিতির চক্ষু হাসপাতাল উদ্বেধন করেন।এছাড়াও সদর হাসপাতালকে ১০০ শয্যা থেকে ২০০ শয্যায় উন্নীতকরণসহ সড়ক ও বাঁধ নির্মানের কয়েকটি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। এরআগে দুপুর ১২টা ২৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির আ আ ম মেজবাউল হক স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। পরে মহানন্দা নদীর ওপর ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধন করেন তিনি।এরপর দুপুর পৌনে ১টার দিকে সদর উপজেলার সাহেবের ঘাটে দ্বিতীয় মহানন্দা সেতুর শেখ হাসিনা সেতু) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ক্ষমতায় এসে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত তা পুড়িয়ে ধ্বংস করেছে।তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত ধ্বংসের রাজনীতি করে। তারা ক্ষমতায় আসলে দেশের ক্ষতি হয়। আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতি করে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় এসে বাংলা ভাই, জঙ্গিবাদ তৈরি করে। ২০১৩ সালে তারা এ এলাকায় যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তা মানুষ ভোলে নাই। কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে, তারা বিদ্যুৎ দিতে পারে নাই। কিন্ত খালেদার নির্দেশে ১৮ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, তারা আন্দোলনের নামে হাজার হাজার গাছ কেটে ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ৯ বছরের শিশু রকিকে হত্যা করেছে। ইউপি সদস্য নুরজাহানের হাত-পা কেটে দিয়েছে। শিবগঞ্জে ৩ আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ও ৩৫ দোকান পুড়িয়ে দিয়েছে শিবির।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছিটমহলবাসীদের আর কোনো কষ্ট থাকবে না। তাদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট, স্কুল ও বিদ্যুৎসহ যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা করা হবে।তিনি বলেন, আমরা মানুষের বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি। যারা বিদ্যুৎ পায়নি তাদের জন্য সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি। কৃষকের সার ও বীজের ব্যবস্থা করেছি।তিনি বলেন, আমরা ৫ হাজার ২৭৫টি তথ্যসেবা কেন্দ্র করেছি। এতে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।ডিজিটাল সেন্টার ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আমরা বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করুক তা বিএনপি-জামায়াত চায় না। তারা এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দিনেই হরতাল দিয়েছে। আমি ছাত্র-ছাত্রীদের বলব তোমরা মন দিয়ে লেখাপড়া কর, এর থেকে বড় সম্পদ আর নেই।তিনি বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আওয়ামী লীগ প্রযুক্তি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। আমার প্রত্যেক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম করছি। পর্যায়ক্রমে দেশের সব স্কুলে তা করা হবে।এরআগে বিকেল ৪টার কিছু আগে প্রধানমন্ত্রী জনসভামঞ্চে পৌঁছান।এসময় দলীয় সভানেত্রীকে নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানান।
বিকেলে তিনি নবাবগঞ্জ সরকারী কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মইনুদ্দিন মন্ডলের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির কঠোর সমালোচনা করেন।এ সময় উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীজুনায়েদ আহমেদ পলক,পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মাহরিয়ার আলম,উপদেষ্টা ড.তৌফিক ই এলাহী,আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এম.পি, বেগম আখতার জাহান এম.পি, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, চাপাইনবাবগঞ্জ-১ শিবগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানী এম.পি, সদর সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ এম.পি, জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর কবীর প্রমূখ।