দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ মে: জঙ্গি সংগঠন আনসার উল্লা বাংলা টিমকে নিষিদ্ধ করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছে পুলিশ। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে দৈনিকবার্তা কে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের(ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।শনিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞান লেখক ড. অভিজিৎ রায়, ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু ও সর্বশেষ ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ হত্যাকাণ্ডের পর জঙ্গি এ সংগঠনটি দায় স্বীকার করে।পুলিশের ভাষ্য মতে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম আন্তর্জাতিক সশস্ত্র গোষ্ঠী আল কায়দার একটি ঘনিষ্ঠ সংগঠন। আল কায়দার যাবতীয় মতাদর্শকে তারা অনুসরণ করে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম দেশে সবগুলো জঙ্গি সংগঠনের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের জঙ্গিরা আনসার উল্লার নাম ধারণ করে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। পাহাড়ি এবং নির্জন এলাকায় তাদের প্রশিক্ষণও হয়।মনিরুল ইসলাম বলেন,আনসারুল্লাহ বাংলাটিমকে নিষিদ্ধের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে জঙ্গি সংগঠনটি তৎপর না হলেও নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সুবিধা হয়।সম্প্রতি লেখক ও ব্লগারদের হত্যার পর আনসারুল্লাহ বাংলাটিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দায় স্বীকার করার পর পুলিশের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলো।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের সদস্যদের সঙ্গে কোনো ব্যক্তির ধর্মীয় কোনো বিষয় মতের অমিল হলেই তাকে নাস্তিক আখ্যা দেয় এই জঙ্গি সংগঠনটি। এরপর তাদের তালিকা তৈরি করে। তালিকা অনুযায় হত্যাকা- সংগঠিত করার জন্য পরিকল্পিত ছোট ছোট সিøপার সেল কাজ করে থাকে। সংগঠনটির শতাধিক সক্রিয় কর্মী রয়েছে। তবে সমর্থক আরো বেশি রয়েছে।আনসারুল্লাহ বাংলাটিম পীর এবং ইসলামী চিন্তাবিদদেরও বিরোধীতা করে। এরা মূলত উগ্রমৌলবাদী। সংগঠনটি বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিরোধীতা করে। পহেলা বৈখাশের অনুষ্ঠানকে এরা বৈশাখী পূজা মনে করে। এরাই মূলত হত্যাকা- সংগঠিত করে থাকে। এরা আইএস’র এবং আল কায়দার অনুসারী। বহু আগ থেকেই সংগঠনটি আল কায়দার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে। তবে এখনো তারা যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়নি। বলেও যোগ করেন যুগ্মকমিশনার।
ব্লগার হত্যাকারীদের গ্রেফতারের বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের অনেক শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হয়ে কারগারে রয়েছেন। ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যা মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চলবে। ট্রাইব্যুনালে যেহেতু বিচার কার্যক্রম শেষ করার একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা রয়েছে, তাই আশা করা যায় দ্রুত এর বিচার শেষ হবে।জঙ্গি সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে তেমন কোনো আদর্শগত পার্থক্য নেই। এমনকি যারা ইসলামকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করে তাদেরও খেলাফত এক। তাদের লক্ষ্য এক। তবে তাদের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সংগঠন গুলো বাংলাদেশর অস্বীত্বকে অস্বীকার করে, সংবিধানকে অস্বীকার করে ছুরে ফেলে তাদের ধারণা মতো তালেবানী বা ইসলামী এস্টেটের মতো করে একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। তাদের ধারণা এই সরকারের আমলে তারা কাজ করতে পারছে না। সংগঠনকে আরো বড় করার জন্য তাদের পক্ষের অ্যাটমোস্ফায়ার পাচ্ছে না। এ জন্য এই সরকারকে তারা হটাতে চায়। তাদের ধারণা এই সরকারকে হটাতে পারলেই তাদের ৬০ শতাংশ কাজ হয়ে যাবে। এজন্য জঙ্গি সংগঠন গুলো ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করে যাচ্ছে।
হিযবুত তাহরীর সরকারি বাহিনী গুলোর মধ্যে কু করানোর চেষ্টা করে সরকার উৎখাত করানো চেষ্টা করে। জেমএবি এবং আনসারুল্লাহ বাংলাটিম ক্লিং মিশনের মাধ্যমে সরকার হটাতে চায়। তাদের আপাদত টার্গেট হলো ক্লিং।জঙ্গি সংগঠনগুলো হত্যাকা- সংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নামের তালিকা রয়েছে উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, অনেক শ্রেণিপেশার ব্যক্তিবর্গের তালিকা রয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলাটিমের কাছে। তবে কত জনের তালিকা রয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন তালিকা প্রকাশ করেছে জঙ্গি সংগঠনগুলো। অনেকের নাম প্রত্যেকটি তালিকায় রয়েছে। আবার কারো কারো নাম সাধারণ মানুষ চিনবেও না ।