দৈনিকবার্তা-সিলেট, ১৫ মে ২০১৫: যুক্তি সম্পাদক, মুক্তমনা ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও খুনীদের শনাক্ত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে ৩টি সূত্র ধরে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।এদিকে,এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ও সিলেট বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।যুক্তি পত্রিকার সম্পাদক,মুক্তমনা ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক এবং সিলেট গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক অনন্ত বিজয় দাস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা চারজনকে আসামি করে মামলা হলেও এখনও হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।পুলিশ পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনন্ত হত্যা তদন্তে কিলিং মিশনে সিলেট অঞ্চলের যুবকের সম্পৃক্ততা, হিটলিস্ট ও আইপি এড্রেস শনাক্তকরণ- এ ৩টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তদন্ত করছে তারা। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সবকটি ইউনিট মাঠ পর্যায়ে তদন্তে নেমেছে এবং উচ্চপর্যায় থেকে তা মনিটরিং করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে,অনন্ত বিজয় দাশ হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।ক্যাম্পাসে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এসময় তারা অনন্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।উল্লেখ্য, মঙ্গলবার সকালে সিলেটের সুবিদবাজারের বনকলাপাড়া এলাকায় নিজ বাসা থেকে বেরিয়ে শহরের দিকে যাওয়ার সময় কয়েকজন মুখোশধারী উগ্রপন্থী কুপিয়ে হত্যা করে অনন্ত বিজয় দাশকে। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ওইদিন বিকালে টুইটারে বার্তা দেয় আনসার বাংলা ৮ নামে একটি জঙ্গি সংগঠন।পরে সন্ধ্যায় টুইটেই আরেকটি বার্তায়, আল কায়েদা ইন ইনডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট’ সিলেটে অনন্ত বিজয় হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে।
একাধিক গোয়েন্দা সূত্র মতে, একের পর এক ব্লগারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছে এবিটির ঘুপ্তঘাতক স্লিপার সেলের ভয়ঙ্কর জঙ্গিরা। গ্রেফতার না হওয়ায় তারা ধীরে ধীরে রীতিমতো আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এর ফলে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন ব্লগার, লেখক, সংস্কৃতিকর্মীসহ প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার মানুষরা। গোয়েন্দা সূত্র মতে, ছোট ছোট গ্র“পে ভাগ হয়ে এ সেলের সদস্যরা ‘কথিত ইমানী’ দায়িত্ব নিয়ে অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ছে। এই সেলটির মূল নেতৃত্বে আছেন উগ্রপন্থি যুবক সাবেক ছাত্র শিবির নেতা রেজওয়ানুল আজাদ রানা। উগ্রপন্থি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) এই সেলটি কাট আউট পদ্ধতি চলে। চার থেকে পাঁচজনের একটি গ্রুপের তথ্য আরেকটি গ্র“প জানে না। এ দুর্র্ধষ রানাকে গ্রেফতার করতে পারলেই এসব হত্যার রহস্য, খুনি ও নির্দেশদাতাদের নাম বেরিয়ে আসবে। দীর্ঘদিনেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে রানা বর্তমানে দেশে নেই বলে দাবি পুলিশের।
সূত্র জানায়, সারাদেশে আনসারুল্লাহর এক হাজারের অধিক অনুসারী রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত তিনশ’ নিয়মিত সদস্য। এরা নানা নেপথ্য চক্রে ভাগ হয়ে তৎপর রয়েছে। এছাড়া আনসারুল্লাহর ‘একাকী মুজাহিদ’ রয়েছে। সূত্র জানায়, আনসারুল্লাহ সিøপার সেলের জঙ্গিরা লোন উলফ্রে বাংলা করেছে ‘একাকী মুজাহিদ’। এই পদ্ধতিতে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণের জন্য একজনকে উদ্বুদ্ধ এবং প্রস্তুত করা হয়। একাকী মুজাহিদ ও ‘স্লিপার সেলের’ জন্য ঘরে বসে ও রান্নাঘরের উপাদান ব্যবহার করে বোমা-বিস্ফোরক তৈরি, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ ও আক্রমণপূর্ব পর্যবেক্ষণসহ (রেকি) অন্যান্য কলাকৌশল গ্রহণ করে থাকে।এদিকে তালিকামাফিক একের পর এক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পরও বর্তমানে এসব জঙ্গি গ্রেফতার না হওয়ায় পুলিশ ও র্যাবের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এক সময় র্যাব জঙ্গিবিরোধী তীব্র অভিযানে থাকলেও বর্তমানে তাতে অনেকটা ভাটা পড়েছে। খোদ সরকারি দলের নীতি নির্ধারক, সাবেক মন্ত্রী ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেন বুধবার এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করে বলেছেন, হয়ত পুলিশ চাইছে না বলেই একের পর এক ব্লগার হত্যায় জড়িত খুনিরা গ্রেফতার হচ্ছে না।জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার ও ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, ব্লগারদের হত্যাকারী সন্দেহভাজন জঙ্গিদের গ্রেফতারে পুলিশের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। খুনিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে এবং তদন্তও ঠিকমতোই চলছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন হত্যাসহ ঘটনার দায় স্বীকার করে টুইট বার্তা দিলেও আনসারুল্লাহ গ্র“পর নেতৃত্ব ও অবস্থান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়নি। তবে অভিজিৎ হত্যায় জড়িত বলে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।