দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ মে ২০১৫: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদকে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছেন মেঘালয় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।পুলিশের অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, সালাহউদ্দীন গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন তাকে কোনো একটা জায়গায় ঘুপচি ঘরে রাখা হয়েছিল প্রায় ২ মাস।এদিকে, সালাউদ্দিনের কলকাতার দুই আত্মীয় বৃহস্পতিবার শিলং-এ তার সঙ্গে দেখা করেছেন। বিবিসি বাংলাকে তারা জানিয়েছেন,চোখ বাধা অবস্থায় কয়েকবার গাড়ি বদল করে তাকে শিলং নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে সালাউদ্দিন জানিয়েছেন তাদের। এরপর শিলং এর পোলো গ্রাউন্ডে চোখ বাধা অবস্থায় তাকে নামিয়ে দেয়া হয়।বিএনপির এ নেতার সঙ্গে দেখা করতে তার আরো দুই আত্মীয় ঢাকা থেকে শিলং গেছেন। তাদেরকে সালাহউদ্দীনের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিলেও, পরে আবার তা প্রত্যাহার করে নেয় শিলং পুলিশ।এর আগে, মেঘালয় রাজ্যের পুলিশ প্রধান রাজিব মেহতার বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সালাউদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার করতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার ইন্টারপোল ঢাকা ইউনিটের পক্ষ থেকে রেড এলার্ট নোটিশ পান। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের মাধ্যমে তারা এ নোটিশ পান বলে মেহতা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে মেঘালয় পুলিশ। বাংলাদেশে দুমাসের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের সাথে বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে গিয়ে বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি দেখা করেছেন বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো প্রায় দু’ঘণ্টা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে মেঘালয় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।পুলিশেরই কয়েকটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে গোয়েন্দাদের তিনি জানিয়েছেন যে তাঁকে কোনও একটা জায়গায় ঘুপচি ঘরে রাখা হয়েছিল প্রায় দুমাস। তারপর বেশ কয়েকবার গাড়ী বদল করে শিলংয়ে নিয়ে আসা হয়।গোয়েন্দাদের জেরা আর মি. আহমেদ নিজে আত্মীয়দের যা বলেছেন তার মধ্যে বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে মি. আহমেদের দুজন আত্মীয় দুপুরবেলা তাঁর সঙ্গে দেখা করে খাবার আর পোশাক দিয়ে এসেছেন। তার সাথে কথাবার্তাও হয়েছে। মি. আহমেদকে উদ্ধৃত করে ওই আত্মীয়রা জানান যে ৬২ দিন তিনি বন্দী অবস্থায় কাটিয়েছেন। কোথায় ছিলেন, সেটা বলতে পারেন নি। তার পরে ে চাখ বেঁধে বেশ কয়েকবার গাড়ী বদল করে নিয়ে আসা হয় যে জায়গাটাতে, সেটা মি. আহমেদ নিজেই খোঁজ করে জানতে পারেন যে শিলংয়ের গল্ফ লিংক এলাকা।
পুলিশ যদিও এতদিন দাবী করে আসছিল তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে মি. আহমেদকে হেফাজতে নেয়। তবে সালাউদ্দিন আহমেদ এদিন আত্মীয়দের জানিয়েছেন যে তিনি নিজেই পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। আর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন তিনি মোটের ওপর সুস্থই আছেন। তবে কিডনি আর চর্মরোগের একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন তার চিকিৎসা চলছে।ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আইজিপি (অপারেশনস) জিএইচপি রাজু বলেছেন, বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদ অবৈধভাবে ভারতে আসার মত লোক নন। তিনি একজন সাবেক মন্ত্রী। তিনি কোনো সাধারণ লোক নন।ভারতের পত্রিকা টাইমস অব ইন্ডিয়ার অনলাইন ভার্সনে বৃহস্পতিবার এ খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, মেঘালয় আইজিপি রাজু বলেছেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদ কিভাবে ভারতে এলেন আমরা সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যেভাবে লোকজন অবধৈভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে থাকে সালাহউদ্দিন আহমেদ সে পর্যায়ের কোনো লোক নন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়, সালাহউদ্দিন আহমেদ এখনো শিলং সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সে কারণে বুধবার পর্যন্ত তাকে কোর্টে হাজির করা যায়নি। ইস্ট খাসি হিলস এর এসপি খারখারাং বলেন, হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ করা হলে আমরা তাকে কোর্টে হাজির করব।শিলং সিভিল হাসপাতালে সালাহউদ্দিন আহমেদের চিকিৎসক ডাক্তার ডি জে গোস্বামী বলেন, তিনি কিডনি এবং হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন। আমরা তার কয়েকটি পরীক্ষা করেছি। তার কিডনিতে পাথর আছে কি-না সে বিষয়ে একজন সার্জনের পরামর্শ নিতে হবে বলে মনে হচ্ছে আমার।প্রতিবেদনে বলা হয়, দু’মাস ধরে নিখোঁজ সালাহউদ্দিন আহমেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তাকে উত্তরা থেকে অপহরণ করা হয়েছে।
বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে শিলং পুলিশ। সিভিল হাসপাতালে কারাবন্দিদের জন্য নির্ধারিত সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিভাবে তিনি শিলং পৌঁছালেন এ সংক্রান্ত তথ্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে জানার চেষ্টা করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে ২ ঘণ্টা সময় ধরে তাকে নানা ধরনের প্রশ্ন করা হয়। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তারা কি জানতে পেরেছেন তা প্রকাশ করেননি। হাসপাতালে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি সুস্থ হলে আগামী সপ্তাহে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হতে পারে বলে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।এছাড়া সালাহ উদ্দিন আহমেদ কোনো ধরনের বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই সীমান্ত অতিক্রম করায় বিব্রত বিএসএফ। ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এসকে সিং শিলং টাইমসকে এ তথ্য দেন।এদিকে ঢাকায় পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল শাখা জানায়, তারা দিল্লি পুলিশকে অবহিত করেছে যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ভারতের একটি হাসপাতালে আছেন।
তাকে ফেরত আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দিল্লি ইন্টারপোলকে অনুরোধ করা হয়েছে।এ প্রসঙ্গে আইজিপি একেএম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদকে পাওয়া গেছে। তার বিষয়ে রেড নোটিশ পাঠানোর প্রয়োজন নেই। কি প্রক্রিয়ায় তাকে ফেরত আনা যায় আমরা ওইসব বিষয় দেখছি। তাকে ফিরিয়ে আনতে দু’দেশেরই কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। রেড নোটিশ জারির বিষয়ে তিনি বলেন, তার সন্ধান পাওয়ার পর রেড নোটিশ জারি করা হয়নি। সোমবার শিলংয়ের পোলো গ্রাউন্ড এলাকা থেকে বিএনপির এ নেতাকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর বৃহস্পতিবার প্রথম তিনি তার আত্মীয়ের সঙ্গে মুখোমুখি বসে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি বলেন, রাতভর গাড়ি চালিয়ে চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে কেউ ভারতের শিলংয়ে ফেলে যায়। পথে কয়েক দফা গাড়িও বদল করা হয়েছে। শিলংয়ের পোলো গ্রাউন্ডে সালাহ উদ্দিনকে চোখ বাঁধা অবস্থায় নামিয়ে দেয়া হয়। চোখের বাঁধন খোলার পর তিনি বুঝতে পারছিলেন না কোথায় আছেন। পরে স্থানীয়দের কাছে জানতে চান এটি কোন এলাকা। তখন লোকজন তাকে জানায়, এটা শিলং।
বিবিসি জানিয়েছে, ঢাকার উত্তরা থেকে নিখোঁজের ৬২ দিন পর খোঁজ পাওয়া সালাহ উদ্দিনের আহমেদের সঙ্গে শিলং হাসপাতালে এ প্রথম কেউ সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন। সাক্ষাৎ করেছেন এমন দুই আত্মীয়ের মধ্যে একজন হলেন আইউব আলী। দূরসম্পর্কের এই আত্মীয় থাকেন কলকাতায়। তিনি সাক্ষাৎ করতে বৃহস্পতিবার সকালে শিলংয়ে আসেন। দেখা করার পর তিনি বিবিসিকে বলেন, পোলো গ্রাউন্ড থেকে সালাহ উদ্দিন নিজেই পুলিশের কাছে গিয়ে পরিচয় দেন। অবশ্য এর আগে গত দু’দিন ধরে শিলং পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হচ্ছিল, স্থানীয় লোকজন সালাহ উদ্দিন আহমেদকে উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখে থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায়। আইউব আলী আরও জানান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ অনুভব করতে পেরেছেন যে তাকে দূরে কোথাও নেয়া হচ্ছে।ইংরেজি দৈনিক শিলং টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, বিএসএফ মেঘালয় রাজ্যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ৪৪০ কিলোমিটার এলাকা পাহারা দেয়। কিন্তু এ সীমান্ত এলাকার অনেক স্থানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটু দুর্বল। এ সুযোগে অনেকেই ভারতে অনুপ্রবেশ করে থাকে। বিএসএফ জানে না সালাহ উদ্দিন আহমেদ কিভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে গেলেন। তবে এতে তারা বিব্রত।শিলং পুলিশ দাবি করেছে গত সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আটক করার সময় সালাহ উদ্দিন উদভ্রান্তের মতো ঘোরাফেরা করছিলেন। তার গালে ছিল ৮-১০ দিনের দাঁড়ি। হাতে ছিল প্লাস্টিকের ব্যাগ। ব্যাগে আরও এক সেট কাপড় ছিল বলে দাবি করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তার সঙ্গে টাকা-পয়সা বা কোনো কাগজপত্র ছিল না। শিলংয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার যে ছবি দেখা গেছে তাতে সালাহ উদ্দিনের পরনের পোশাক পরিষ্কারই ছিল। পায়ে জুতাও ছিল চকচকে। সেভ করা মুখে পরিপাটিভাবে চশমা আঁটা। প্রশ্ন উঠেছে, অপহরণের পর দুই মাস আটক থাকা অবস্থায় কোনো মানুষের পক্ষে এমন পরিপাটি থাকা সম্ভব কি না। এছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে তিনি কীভাবে পৌঁছালেন, এতদিন কোথায়, কী অবস্থায় ছিলেন, তা এখনও রহস্যই রয়ে গেছে। গত ১০ মার্চ রাতে ঢাকার উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩-বি নম্বর সড়কের একটি বাড়ির দোতলা থেকে তাকে অপহরণ করা হয় বলে তার পরিবার প্রথম থেকে দাবি করে আসছে।
এদিকে, বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। কিন্তু বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশের ঘটনায় সালাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলে জানায় শিলং টাইমস। আর এতে করে তার দেশে ফেরার বিষয়টি সহজ হবে না। কারণ, ভারতের পাসপোর্ট আইন ১৯৫০-এর ৩ ও ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, দেশটিতে অবৈধভাবে প্রবেশ বা প্রবেশের চেষ্টা করলে তিন মাস বা তার বেশি কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড পেতে পারেন। এছাড়া ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারা অনুযায়ী, অন্য কোনো দেশের নাগরিক যদি অনুমোদিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ভারতে অবস্থান করেন, তাহলে তার পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দুই দেশের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে ফিরিয়ে আনা হবে। তিনি যেহেতু ওই দেশে আটক হয়েছেন, সেহেতু ওই দেশের কিছু আইনি প্রক্রিয়া আছে। আমাদেরও কিছু আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। সেগুলো শেষ করে যথাসময়ে তাকে ফেরত আনা হবে। ইন্টারপোলে রেড নোটিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই।