DoinikBarta_দৈনিকবার্তাmuhit-p

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ মে ২০১৫: বাংলাদেশ বেতন ও চাকরি কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে কাঠামো সুপারিশ করেছে সচিব কমিটি।সচিব কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দপ্তরে প্রতিবেদনটি জমা দেন।বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ বেতন ৪৫ হাজার টাকা। আর সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১শ’ টাকা।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী জানান, পে-কমিশন নিয়ে সচিব কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ সচিব সকালে তার কাছে জমা দিয়েছেন। এতে সর্বোচ্চ বেতন ধরা হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২শ’ ৫০ টাকা।দুই ধাপে এটি বাস্তবায়ন হবে। আর বেতন কাঠামো কার্যকর হবে আগামী জুলাই থেকে- জানান অর্থমন্ত্রী।এর আগে সকালে পে-কমিশন নিয়ে সচিব কমিটির পর্যালোচনা প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর হাতে জমা দেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় দেখবে। তারপর মন্ত্রিসভায় যাবে। এতে জুলাই-আগস্ট দুই মাস সময় লাগবে। তবে বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন হবে আগামী জুলাই থেকে।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন,এতে ২০টি ধাপ রয়েছে। আমি ভেবেছিলাম ১০ বা ১৬টি ধাপে করার। কিন্তু এতে টাচ করা ঠিক হবে না।সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলবে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, কেনো হবে? আপনারা লেখেন তখন প্রশ্ন ওঠে।এ সময় উপস্থিত মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা বলেন, আগেই পে-কমিশনের রিপোর্টে সবাই জেনেছেন তখনও ইমপ্যাক্ট হয়নি। এখনও হবে না। সুপারিশ বাজেট বর্হিভুত নয়, তাই প্রভাব পড়বে না।এর আগে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মূল বেতন বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার পাশাপাশি সরকারকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার আনার সুপারিশ করে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন ও চাকরি কমিশন।ওই সময়ের সুপারিশে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২শ’ টাকা মূল বেতন ধরা হয়।সচিবালয়ে এক সভা শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বেতন ও চাকরি কমিশন সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতন ধরে নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করছিল। সচিব কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা সুপারিশ করেছে।ধারাবাহিকতা অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রী দেখার পর আন্তঃমন্ত্রণালয়ে এ কাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। এরপর মন্ত্রিপরিষদে যাবে অনুমোদনের জন্য।আমরা এটি মিনিস্ট্রিতে দেখব, আমার কলিগদের সাথে আলোচনা করব। ৪ জুনের আগে দেখবই না। এটি কেবিনেটে যেতে যেতে মাস দুয়েক লাগবে। কিন্তু এটি ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত বেতন কমিশন গত ২১ ডিসেম্বর যে প্রতিবেদন দিয়েছিল তাতে ১৬টি গ্রেডে বেতন কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে পাঁচ সদস্যের সচিব কমিটির সুপারিশে আগের মতো ২০টি গ্রেড রাখার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে।এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন,এখানে ২০টি ধাপই রয়েছে। আমার যেটা মনে হয়, এটাকে আর টাচ করা উচিৎ হবে না।নতুন এই বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১৩ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর বেতন ৮৭ থেকে ১০১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।এতে নিত্যপণ্যের বাজারে কতোটা প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন এটার কোনো ইমপ্যাক্ট হয় না।অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকেরই বেতন বাড়ানো উচিত। প্রতি বছর অটোমেটিক্যালি হওয়া উচিৎ। প্রতিবেদনে এটি সুপারিশ করা হয়েছে।প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, কমিটির সুপারিশ কমিশনের সুপারিশ থেকে কম হবে এটাই স্বাভাবিক। অতীতেও তাই হয়েছে।

কমিশনের রিপোর্ট দাখিলের পর বাজারের উপর কোনো প্রভাব পড়েনি, তাই এ পর্যায়েও হওয়ার কোনো যুক্তি নাই। ফরাসউদ্দিনের বেতন কমিশনের প্রতিবেদন পাওয়ার পর তা পর্যালোচনার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আহ্বায়ক করে গত ১ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যের এই কমিটি করে সরকার।অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এ কমিটিতে সদস্য হিসাবে রয়েছেন।আগের বেতন কাঠামোর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের বেতন ও চাকরি কমিশন (অষ্টম কমিশন) গঠন করা হয়েছিল গত বছরের ২৪ নভেম্বর। দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় ১৩ মাস পর তারা প্রতিবেদন দেন।ওই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নতুন কাঠামো কার্যকর করতে সরকারের বেতন বাবদ খরচ বাড়বে ৬৩.৭ শতাংশ। এ জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকারের হাতে রয়েছে।

সচিব কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী চূড়ান্ত কাঠামো অনুমোদন করা হলে বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা পদে যোগ দেওয়া একজন চাকরিজীবীর মূল বেতন হবে মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি। আগের কাঠামোতে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের মূল বেতন ছিল ১১ হাজার টাকা।সর্বশেষ ২০০৯ সালে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো হয়। সে অনুযায়ী বর্তমানে সরকারি চাকরিজীবীরা সর্বনিম্ন ৪,১০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা বেসিক ধরে বেতন পাচ্ছেন।এর সঙ্গে তারা পাচ্ছেন মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে মহার্ঘ্য ভাতা, যা ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের দিন থেকে এই মহার্ঘ্য ভাতা বিলুপ্ত হবে।