দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ মে: অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, আগামী ৪ বছরের মধ্যে রাজস্ব আদায় আরো ৩ শতাংশ বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, গত ৬ বছরে রাজস্ব আদায় ৩ শতাংশ বেড়েছে। আগামী ৪ বছরে একই পরিমাণ রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৩৬তম সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের জাতীয় আয়ের ১১ শতাংশ হচ্ছে রাজস্ব। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় তা খুবই কম। ২৭ বছরে রাজস্ব আদায় বেড়েছে মাত্র ৩ শতাংশ।তিনি বলেন, বর্তমানে ১৮ লাখ নিবন্ধিত করদাতা থাকলেও কর দেন মাত্র ১১ লাখ। ১৬ কোটি মানুষের দেশে এটা পর্যাপ্ত নয়। তাই বিভিন্ন ধরনের করের আওতায় আরো বেশি মানুষকে নিয়ে আসার চিন্তা ভাবনা আছে। যাতে অন্তত ৫০ শতাংশ মানুষ করের আওতায় আসে।তিনি আরো বলেন, আমাদের কর ব্যবস্থাপনায় কিছু সঙ্কট আছে। সম্পূরক শুল্ক থেকে আদায় কমিয়ে আনতে হবে। আগামী দিনগুলোতে তা উল্লেখযোগ্যহারে কমে আসবে। বিশ্ববাজার সৃষ্টির জন্য কাস্টমস ফি কমাতে হবেআগামী ২০১৫-২০১৬ অর্থবছর থেকে ভ্যাট আইন কার্যকর হবে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা যতই আপত্তি করেন না কেনো, ভ্যাটই হচ্ছে সবচেয়ে ভালো ট্যাক্স। তাই আগামী এক বছরের মধ্যে ভ্যাট আইন পুরোপুরি কার্যকর করা হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে তামাকের কর বিন্যাস করা হবে। এবার এটির কোনো স্তর থাকবে না।বাজেটের আকার বাড়ানো সম্পর্কে মুহিত বলেন, ‘বাজেটের আকার বড় করতে না পারলে সেবা দেয়া যায় না। তাই এবারের বাজেট একটু বড় করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে অর্থপ্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, বিজিএমইএর সভাপতি মো. আতিকুল ইসলামসহ অর্থমন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।এদিকে, আসন্ন জাতীয় বাজেটকে সামনে রেখে মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে অর্থমন্ত্রীর কাছে কৃষকের পক্ষে ৫৭ দফা সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। পোলট্রি ও মৎস্য উৎপাদনে সাফল্য থাকলেও গবাদি পশু উৎপাদনে তেমন সাফল্য না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের কৃষি বাজেট, কৃষকের বাজেট ২০১৫-১৬’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উঠে আসা কৃষকদের বিভিন্ন দাবির ভিত্তিতে এ সুপারিশমালা তৈরি করা হয়। কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ দাবিগুলো তুলে ধরেন।
এ সময় মাংস ও দুধ উৎপাদনে ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, পোলট্রি ও ফিশারিজে আমাদের খুবই সাকসেসফুল স্টোরি রয়েছে, কিন্তু চার পা, গবাদি পশুতে কিছু হয়নি।এ সময় আসে ছাগলের প্রসঙ্গ। অর্থমন্ত্রী বলেন, ছাগলের তো কিছু হলো না।উত্তরে শাইখ সিরাজ বলেন, ছাগল গাছ খেয়ে ফেলে। এ নিয়ে দেনদরবার চলে। এ জন্য ছাগল পালনে হয়তো সাফল্য আসেনি। কিন্তু ভেড়া পালনে বাংলাদেশ ভালো করবে। বিভিন্ন এলাকার কৃষকের মধ্যে ভেড়া পালন নিয়ে আগ্রহ রয়েছে।গরু আমদানি বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, গরু আসছে বয়স্ক গরু। সেগুলো জবাই করা হয়। আগামীতে বাছুর আমদানি করা যায় কি-না, তা ভাবা হচ্ছে।
গত তিন বছরে সহিংস রাজনীতিসহ বিভিন্ন কারণে কৃষকের ক্ষতির দিক তুলে ধরে কৃষকদের কৃষিঋণ মওকুফ কিংবা ঋণ রিসিডিউলের দাবি তুলে ধরেন শাইখ সিরাজ।এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণ মওকুফের বিষয়ে আমরা কিছু ভাবিনি। তবে ঋণ রিসিডিউল করা যেতে পারে।কৃষিঋণ যাতে প্রকৃত কৃষকরা পান, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।জুন মাসের (২০১৫-১৬) বাজেটকে সামনে রেখে চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষের উদ্যোগে পঞ্চগড়, টাঙ্গাইল ও খুলনায় ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়। এসব এলাকার ১২ হাজার কৃষকের উপস্থিতিতে প্রাক-বাজেট আলোচনায় উঠে আসা প্রস্তাব, দাবি ও চাহিদার আলোকে এসব সুপারিশ তৈরি করা হয় অর্থমন্ত্রীর কাছে।
সুপারিশের মধ্যে ঋণগ্রস্ত ও সর্বশান্ত কৃষকের জন্য বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা, কৃষিপণ্যের বাণিজ্যকৌশল নির্ধারণ, বিদ্যুৎচালিত সেচ কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ২০ শতাংশ রেয়াতের টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক হিসেবে প্রদান, ইউনিয়ন পর্যায়ে মাটি পরীক্ষা ল্যাব ও কীটতত্ত্ব ল্যাব স্থাপন, কৃষিতে উৎপাদন খরচ কমাতে আরও যন্ত্র ব্যবহার, দেশিয় চা শিল্প রক্ষা, আমদানি নীতিমালা করে ফসলি মৌসুমে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি দেশি শিল্প বিকাশের সুযোগ করে দেওয়ার দাবি উল্লেখযোগ্য।