দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ মে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের(ঢাবি)টিএসসিতে বাংলা নববর্ষে যৌননীপিড়নের দায়ীদের শাস্তি ও ছাত্র ইউনিয়নের ডিএমপি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ঢাবিতেও সর্বত্মক ছাত্র ধর্মঘট পালিত হয়ে। বিভিন্ন ভবনে তালা দেয় শিক্ষার্থীরা।মঙ্গলবার সকালে ধর্মঘটের সমর্থনে ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, কার্জন হল, লেকচার থিয়েটার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনসহ বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ভবনের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে তারা। এরআগে রোববার ঢাবির মধুর ক্যান্টিনে ছাত্র ইউনিয়ন সারাদেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়।
ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লিটন নন্দী জানান, ধর্মঘটের সমর্থনে আমরা ক্যাম্পাসে সরব রয়েছি। সকালে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রতিটি ভবনে আমাদের কর্মীরা রয়েছে।শিক্ষার্থীরা আমাদের কর্মসূচিতে সারা দিয়েছে বলেও তিনি জানান।উল্লেখ্য, গত রোববার রাজধানীর রমনা এলাকায় ছাত্র জোটের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার পর এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।এদিকে, মঙ্গলবার ধর্মঘট পালনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।পহেলা বৈশাখে নারীদের ওপর নিপীড়নকারীদের শাস্তি, ডিএমপি ঘেরাও মিছিলে হামলাকারীদের শাস্তি দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক।
তিনি বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে ২০ মে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে। এছাড়া আগামী ১৬ মে বিকালে শাহবাগে সংহতি সমাবেশ হবে।সংবাদ সম্মেলনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টেরসভাপতি সাইফুজ্জামান সাকন, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি সালমান রহমান, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তার, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদও ছিলেন।হাসান তারেক দাবি করেন, কয়েকটি স্থানে হামলা হলেও তাদের ডাকা ধর্মঘট সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার চালানোর সময় সোমবার রাতে ছাত্র ইউনিয়নের খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) শাখার আহ্বায়ক সুজয় চৌধুরী সাম্যের উপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।মঙ্গলবার সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকার, অর্থ সম্পাদক কৃষ্ণ বর্মন, সহ-সম্পাদক সমিত ও সদস্য আমিনেষ আহত হন বলেও দাবি করা হয়।হাসান তারেক বলেন, ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানা শাখার সভাপতি শ্রীকান্ত বৈদ্য ও সাধারণ সম্পাদক অনুপ চক্রবর্তী বরকল এস জেড হাইস্কুলে ধর্মঘটের প্রচারে গেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়।
ধর্মঘট সফল করতে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের সামনে অবস্থান নেন প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন ভবনে তালাও ঝোলায় তারা।ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি বিভাগে পরীক্ষা হয়েছে। তাছাড়া সব বিভাগের শিক্ষাথীরা ক্লাস বর্জন করে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আমজাদ আলী বলেন, আমরা তাদের বলেছি, যে সব বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তার যেন বিঘ্ন না ঘটে।ধর্মঘটের সমর্থনে বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউটে প্রচার চালানোর পর সংবাদ সম্মেলনের আগে ক্যাম্পাসে মিছিল এবং কলা ভবনের সামনে সমাবেশ করে আন্দোলনকারীরা।ছাত্র ইউনিয়নের ঘেরাও মিছিলে হামলার ঘটনা তদন্তে পুলিশ দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এক নায়েককে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে।এদিকে ছাত্র আন্দোলনকারীদের লাঞ্ছনাকারী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে আইজিপিকে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।