দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ মে ২০১৫: বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে সমুদ্রপথে ঝুঁকিপূর্ণ মানব পাচার বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ। থাইল্যান্ডের জঙ্গলে একের পর এক অবৈধ অভিবাসীদের গণকবর পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ উদ্বেগ জানায় জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র একটি প্রতিবেদনে মানব পাচারের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরার পর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেন, বঙ্গোপসাগর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানবপাচারের ঘটনা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ঘটেছে। থাইল্যান্ডের সংখ্যলা প্রদেশে গত সপ্তাহে গণকবর থেকে উদ্ধার করা হয় ২৬টি মৃতদেহ।শুক্রবার একই প্রদেশের একটি পার্বত্য এলাকায় জীবিত অবস্থায় শতাধিক অভিবাসীর সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা মিয়ানমার ও বাংলাদেশের নাগরিক।থাই জঙ্গলের ওই শিবিরগুলো এবং পাদাং বেসারের চারপাশের কৃষি এলাকাগুলো মানবপাচারের আখড়া বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউএনএইচসিআর এর মুখপাত্র অ্যাড্রিয়ান এডওয়ার্ডস জানান, ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজারের মতো বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা মানব পাচারের শিকার হয়েছে। এ সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।
প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ডের গহীন জঙ্গল থেকে এবার ১১৭ জন অভিবাসীকে জীবিত উদ্ধার করেছে থাইল্যান্ড পুলিশ। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে অন্তত ৭৫ জন বাংলাদেশী বলে জানানো হয়েছে।শুক্রবার থাইল্যান্ড পুলিশ দেশটির শঙখলা প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলের গহীন জঙ্গলে বিশেষ অভিযান চালিয়ে এসব অভিবাসীদের উদ্ধার করে।উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশী, ২৮ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও বাকিরা বিভিন্ন দেশের নাগরিক।আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে থাইল্যান্ড পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়াদের রেখে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যরা পালিয়ে যায়। যার কারণে পাচার হয়ে আসা এসব অভিবাসী জঙ্গলেই পড়ে থাকে।এছাড়াও অভিযানে থাইল্যান্ডের গহীন জঙ্গলে মানবপাচারকারী চক্রের আরো চারটি ক্যাম্পের সন্ধান পেয়েছে দেশটির পুলিশ।
থাইল্যান্ডপুলিশ জানিয়েছে,সন্দেহভাজান এলাকার জঙ্গলগুলোতে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।পাচারের শিকার হয়ে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের জঙ্গলে থাকা শতাধিক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশি বলে দেশটির কর্মকর্তাদের দাবি।মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী ওই জঙ্গলে গত সপ্তাহে ৩৩ জনের কবর পাওয়ার পর মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানের নির্দেশ দেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চ্যান-ওচা।ওই অভিযানেই শংখলা প্রদেশের রাত্তাফুম জেলা থেকে ১১৭ জনকে উদ্ধার করা হয় বলে প্রাদেশিক ডেপুটি গভর্নর একারাত সিসেনকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে। তিনি বলেন, ১১৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, বাকিরা বাংলাদেশ থেকে আসা।বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে সাগর পথে মালয়েশিয়ার মানব পাচারের বেশ কয়েকটি ঘটনা ধরা পড়েছে এর আগে। বলা হচ্ছে, এদেরও সেভাবে পাচার করা হচ্ছিল।পাচারের শিকারদের মালয়েশিয়া সীমান্তবর্তী থাইল্যান্ডের ওই জঙ্গলে রাখা হত। যাদের মধ্যে নির্যাতনে অনেকের মৃত্যু ঘটে।১১৭ জনের বিষয়ে ডেপুটি গভর্নর বলেন, এরা আসলে পাচারের শিকার, না কি নিজেরাই এসেছে, তা যাচাই করে দেখছি আমরা।যাচাই করে যদি তারা মানব পাচারের শিকার বলে প্রমাণ মেলে, তবে তাদের দেশের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেফাজতে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।একারাত সিসেন সেই সঙ্গে বলেন, তবে এই ব্যক্তিদের কেউ যদি নিজ উদ্যোগে এসেছেন বলে প্রমাণ মেলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে।উদ্ধার ১১৭ জনকে রাত্তাফুম জেলায় যেখানে রাখা হয়েছে, সেখানে ঘুরে এসে রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেন, ওদের মধ্যে শিশুও রয়েছে। সেখানে তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে।