দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ মে ২০১৫: রাজনীতিক, অর্থনীতিবিদ, কৃষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং কৃষিশ্রমিকরা কৃষক ও কৃষি শ্রমিকের কৃষি অধিকার রক্ষায় আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য কৃষি আদালত গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।কৃষকরা শস্য উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং ক্রয়-বিক্রয়ে নানা ধরনের বৈষম্যের শিকার হন।কৃষি শ্রমিকরাও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্য ও বঞ্চনার শিকার। তাদের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য কিংবা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রত্যেক উপজেলায় কৃষি আদালত গঠন করতে হবে। এই কৃষি আদালতে প্রতিটি কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা যাতে ১০ টাকার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে মামলা করতে পারে সে বিধানও রাখতে হবে, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাসের সহ-সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপি জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনায় শনিবার এ আহ্বান জানান।
খাদ্য নিরাপত্তায় দায়িত্বশীল শাসনকাঠামো এবং ভূমি-মৎস্য-বনজ সম্পদে জনসাধারণের অধিকার শীর্ষক এ আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতি ছবি বিশ্বাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ, এশিয়ান ফার্মারস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এস্থার পেনুনিয়া, ভূমিহীন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুবল সরকার, কেন্দ্রিয় কৃষক মৈত্রীর সদস্য মোছা: মর্জিনা এবং খুলনার কৃষি শ্রমিক মুর্শিদা বেগম।এ্যাকশন এইউ বাংলাদেশ ও কেন্দ্রীয় কৃষক মৈত্রী যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।কেন্দ্রিয় কৃষক মৈত্রীর সভাপতি মো: মনির আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এ্যাকশন এইডের নির্বাহি পরিচালক ফারাহ কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক ফারহাত জাহান।ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বর্তমানে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা কোন সমস্যায় পড়লে বা বঞ্চনার শিকার হলে তাদের নালিশ জানানোর কোন জায়গা নেই। কৃষি আদালত গঠন হলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আদালতে যেতে পারবে।তিনি কৃষি আদালত গঠনের লক্ষ্যে শীঘ্রই একটি কৃষি আইন প্রণয়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। কৃষি আইন প্রণয়নের জন্য একটি খসড়া কৃষি আইন তৈরি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কৃষক নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ আলোচনার পর আইনের চূড়ান্ত খসড়া যথসম্ভব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সংসদে উত্থাপন করা হবে। তিনি কৃষকদের শষ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রী নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বাান জানান।
অধ্যাপক এম এম আকাশ কৃষকদের কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে গ্রামে গ্রামে ই-মার্কেট গড়ে তুলতে সরকারি সহায়তা ও উদ্যোগের পরামর্শ দেন।তিনি বলেন, কৃষক এবং ক্রেতার মাঝখানে কোন মধ্যস্বত্বভোগী থাকলে কৃষকরা কখনই ন্যায্য মূল্য পাবে না। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য না পেলে তারা শস্য উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই সরকারকে এখনই একটি কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।তিনি কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করার তাগিদ দিয়ে বলেন, কৃষক-শ্রমিকদের সংগঠন তৈরি হলে তারা নিজেরা নিজেদের প্রয়োজন নিয়ে দরকষাকষি করতে পারবে। আবার নিজেদের অধিকার আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।বক্তারা বলেন, কৃষক ও কৃষি শ্রমিকরা নানা বৈষম্যের শিকার। কিন্তু কৃষি নারীরা আরো বৈষম্যের শিকার। তাই কৃষি শ্রমে নারী-পুরুষের সম অধিকার ও সম মজুরী নিশ্চিত করতে হবে। ভূমিহীন নারী কৃষকদের জন্য খাসজমি বরাদ্দ দিতে হবে।কেন্দ্রিয় কৃষক মৈত্রীর সদস্য কৃষক মোছা: মর্জিনা কৃষিতে নারী-পুরুষের সম-মজুরী নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, সকলক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হলে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ নয়, একটি ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হবে।খুলনার কৃষি শ্রমিক মুর্শিদা বেগম বলেন, আমারও দুটি হাত, দুটি পা আছে। আমিও পুরুষদের সাথে একই সময় ধরে একইসমান কাজ করি। তাহলে আমাকে কেন কম মজুরী দেয়া হবে? আমাকেও পুরুষের সমান মজুরী দিতে হবে। আমাকেও জলার অধিকার দিতে হবে। বনজ সম্পদে আমারও অধিকার আছে। আমাকে সে অধিকার দিতে হবে।