দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৮ মে: ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আলোচিত তিন কন্যা। তারা হলেন- রূপা আশা হক, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকী ও রুশনারা আলী। লেবার পার্টি থেকে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হলেন- রুশনারা আলী। ৩২ হাজার ৩৮৭ভোট পেয়ে জয় পান রুশনারা, তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ম্যাথিউ স্মিথ পেয়েছেন আট হাজার ৭০ ভোট। বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকা থেকে নির্বাচন করেন তিনি।এর আগে ২০১০ সালে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন রাশনারা আলী।তবে কোয়ালিশন সরকার ইরাকের আইএস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাওয়ায় তিনি এর প্রতিবাদ করে ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। অবশ্য ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনের জন্য বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের জন্য তাঁকেই মনোনয়ন দেয় লেবার পার্টি।১৯৭৫ মালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশের সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন রুশনারা আলী। মাত্র সাত বছর বয়সে পরিবারের সাথে লন্ডনে অভিবাসিত হন তিনি।এদিকে মাত্র ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন বাংলাদেশী আরেক বংশোদ্ভূত রূপা আশা হক। ৪৩ বছর বয়সী রূপা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে এমপি পদে নির্বাচিত হলেন। লেবার পার্টির প্রার্থী রূপা পেয়েছেন ২২ হাজার দুই ভোট। আর ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী এনজি ব্রে পেয়েছেন ২১ হাজার ৭২৮ ভোট।
কিংস্টন ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক রূপা হক ইংরেজি লেখক ও কলামিস্ট হিসেবেও পরিচিত। তিনি ইলিংয়ের লন্ডন বরোর ডেপুটি মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন। রূপা হকের আদি বাড়ি বাংলাদেশের পাবনা জেলায়।এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক লেবার পার্টি থেকে লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনে এক হাজার ১৩৮ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছেন। ৩২ বছর বয়সী টিউলিপ ভোট পেয়েছেন ২৩ হাজার ৯৭৭টি (৪৪ শতাংশ), আর কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী সাইমন মার্কাস পেয়েছেন ২২ হাজার ৮৩৯টি (৪২ শতাংশ) ভোট।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টিতে যোগ দেন। তিনি রিজেন্ট পার্কের সাবেক কাউন্সিলর।
২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের প্রথম বাঙালি নারী কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে তিনি এই এলাকার কিংস কলেজ লন্ডন থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১০টি আসনের শীর্ষে ছিল হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন। এ আসনে লেবার দলের অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন ১৯৯২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা ২৩ বছর এমপির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালের নির্বাচনে মাত্র ৪২ ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন তিনি। ৭৮ বছর বয়সী গ্লেন্ডা জ্যাকসন অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর এই আসনে টিউলিপকে লেবার পার্টি থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়, স্থানীয় সময় রাত ১০টায় শেষ হয়। শুক্রবার বিকেলে ভোটের চূড়ান্ত ফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ব্রিটেনের মোট ৬৫০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সরকার গঠন করতে পেতে হয় ৩২৬ আসন।ব্রিটেনে পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, কঠিন দায়িত্ব পেয়েছি। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনে আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকালে ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি থেকে হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের এমপি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর লন্ডনে সাধারণ জনগণের প্রতি এ আহ্বান জানান শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ।এদিকে, ভোটগণনার সময় সারারাত ভোটগণনা কেন্দ্রের বাইরে শতাধিক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি অপেক্ষমান ছিলেন। হ্যামস্টেড ও কিলবার্নের ভোটগণনা কেন্দ্রের বাইরের অপেক্ষমান সেই মানুষজনের কাছে টিউলিপের কাঙ্ক্ষিত বিজয়ের খবরটি যখন পৌঁছায়, তখন স্থানীয় সময় ভোর ৫টা।এর আগে অবশ্য কেন্দ্রের ভেতরে দায়িত্বরত সাংবাদিকদের ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার টিউলিপ যে বিজয়ের পথে হাঁটছেন, সে খবরটি পেয়ে যান রাতজাগা ওই মানুষগুলো।ব্রিটিশ মসনদের লড়ায়ে বিরোধী লেবার পার্টির পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বেরুতে না পারলেও এবারের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশের তিন সাহসী কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী, রুশনারা আলী ও রূপা হক।এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতি, শেখ রেহানার কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নিটিউলিপ জিতেছেন প্রথমবারের মতো। রুশনারা আলী পুন:নির্বাচিত হয়েছেন। লেবারদের হারানো আসন পুন:রুদ্ধার করেছেন ড. রূপা হক।খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো থেকে পুন:নির্বাচিত হয়েছেন সিলেটের রুশনারা আলী। লেবার পার্টির হয়ে লড়াই করে তিনি পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩শ’৮৭ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের ম্যাথু স্মিথ পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৭০ ভোট। বাঙালি অধ্যুষিত ওই আসনে ভোটার ছিলেন প্রায় ৮০ হাজার। ৬৩.৯ শতাংশ লোক তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এখানে রুশনারা আলীর জয়ী হওয়ার বিষয়টি আগে থেকেই অনুমিত ছিল।এদিকে উত্তর পশ্চিম লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল অ্যান্ড অ্যাকটন আসন থেকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জয়ী হয়েছেন ড. রূপা হক। তিনি পেয়েছেন ২২ হাজার ২ ভোট। তার প্রতিপক্ষ রক্ষণশীল দলের এনজি ব্রে পেয়েছেন ২১ হাজার ৭০১ ভোট। ২০১০ সালের নির্বাচনে এই আসনে লেবার পার্টি হেরে গিয়েছিল। ক্যামব্রিজ পড়ুয়া রূপা হক এবারের নির্বাচনে ২৭৪ ভোটে জয়ী হয়ে আসনটি পুনরুদ্ধার করলেন। এই আসনে ভোটার ছিল প্রায় ৭০ হাজার।
সিলেট: ব্রিটেনে সাধারণ নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়ে নতুন ইতিহাসের জন্ম দিলেন সিলেটের মেয়ে রুশনারা আলী। নির্বাচনে প্রথমবারের মতো এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাও আবার ১২ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীর মধ্যে ১০ জনই সিলেটের।এর মধ্যে ব্রিটেনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এমপি হওয়া সিলেটের বিশ্বনাথের রুশনারা আলী পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২৪ হাজার ভোটের বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির ম্যাথু স্মিথ পেয়েছেন মাত্র ৮ হাজার ৭০ ভোট। বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসনের ৮০ হাজার ভোটারের ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ এবার ভোট দিয়েছেন।গত নির্বাচনে সাড়ে ১১ হাজার ভোটে জয়ী রুশনারা এবার ব্যবধান দ্বিগুণ করলেন। লেবার পার্টি থেকে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে রুশানার আলীর। আর তা যদি হয়, তবে তিনিই হবেন ব্রিটেন সাম্রাজ্যে প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মন্ত্রী। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।এবার িিব্রটনের সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ১২ বাংলাদেশি হচ্ছেন- লেবার পার্টির টিউলিপ রেজওয়ানা, রোশনারা আলী, ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, আমরান হোসাইন, ড. রূপা আশা হক, আলী আখলাকুল, ফয়ছল চৌধুরী, মেরিনা আহমেদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির আশুক আহমদ, প্রিন্স সাদিক আহমদ, মোহাম্মদ সুলতান ও কনজারভেটিভ পার্টির মিনা রহমান। তার মধ্যে টিউলিপ এবং মেরিনা ছাড়া বাকি সব প্রার্থীই সিলেটের।এদের মধ্যে রুশনারা আলী ব্যতিক্রমী অবস্থানে রয়েছেন। ২০১০ সালে হাউস অব কমন্সে প্রথম বংশোদ্ভূত হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এই রুশনারা। তিনি লেবার পার্টির শ্যাডো মন্ত্রিসভার শিক্ষামন্ত্রীও ছিলেন। ব্রিটেনের নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের মধ্যে এবারও সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে লেবার পার্টির হয়ে পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন রুশনারা আলী।১৯৭৫ সালে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার ভুরকি গ্রামে জন্মগ্রহণকারী রুশনারা ৭ বছর বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে ব্রিটেনে পাড়ি জমান। ইরাকে সামরিক হামলায় লেবার পার্টি সমর্থন দেয়ায় শ্যাডো মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে আলোচিত হন রুশনারা।এদিকে রুশনারা আলী পুনরায় বিজয়ী হওয়াতে সিলেটবাসীর মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। কেউ কেউ ইতোমধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছেন। আবার কেউ কেউ গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে রুশনারাকে অভিনন্দনও জানাচ্ছেন।রুশনারা বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর আম্বরখানা বাজার ব্যবসায়ী কমিটির কার্যকরী কমিটির সদস্য ও আম্বরখানস্থ জুনেদ এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর জুনেদ আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, এ বিজয় আমাদের জন্য শুধু আনন্দ নয়, এটি আমাদের গৌরবেরও ব্যাপার। এ বিজয় প্রবাসী নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে।তিনি বলেন, রুশনারা আলীর বিজয় বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। এ বিজয়ে ব্রিটেন-বাংলাদেশের মধুর সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।