দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ মে ২০১৫: আপাতত আন্দোলনের দরজা বন্ধ করে সংগঠন গোছানোর কথাই ভাবছে বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতারা উপলব্ধি করছেন তিন মাসের অবরোধে শক্তি ক্ষয় হয়েছে দলটির। সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মুখে তাই প্রতিরোধ গড়ে তোলার শক্তি ছিল না। এজন্য রাজপথের কর্মসূচির চেয়ে সাংগঠনিক শক্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকেই এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জন করলেও এই দাবিতে রাজপথে কোনো কর্মসূচি দেয়া হয়নি। সিটি নির্বাচনের কারচুপির ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে জনমত গঠনের কৌশল নেয়া হয়েছে। তিন মাসের লাগাতার অবরোধ-হরতালে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক কাঠামোর যে ক্ষতি হয়েছে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সিটি নির্বাচনে সরকার সমর্থকরা ব্যাপক কারচুপি করলেও তা প্রতিহত করতে বিএনপির নেতাকর্মীদের কোনো ভূমিকা নিতেই দেখা যায়নি। কোনো ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারার ঘটনায় দলের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের আত্মসমালোচনা হচ্ছে। জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা ভাবছেন। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা, জোটের শরীক দলগুলোকে সক্রিয় করার পাশাপাশি ইস্যু ও দিবসভিত্তিক মাঠ গরম রাখার কর্মসূচি নেবেন। খুব শিগগিরই বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সরকারবিরোধী আন্দোলনের নতুন রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন,বিএনপি ও ২০ দলের বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থায় রাজপথের আন্দোলনে গেলে কর্মসূচি বাস্তবায়ন কঠিন হবে। কর্মসূচি দিয়ে বাস্তবায়ন করতে না পারলে তা হিতে বিপরীত হবে। নেতাকর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মিত্ররাও হতাশ হবে। এজন্য নতুনভাবে আন্দোলনের জন্য সময় নিতে হবে। একদিকে আটক নেতাকর্মীদের জামিনে মুক্ত করতে হবে, নিখোঁজ ও আহতদের পাশে দাঁড়াতে হবে। অন্যদিকে, সাংগঠনিক দুর্বলতাও কাটিয়ে উঠতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ৫ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী লাগাতার তিন মাসের বেশি সময় অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি চালিয়ে আসে। এই কমর্সূচি চালাতে গিয়ে সরকারের নির্যাতনের মুখে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা বিপর্যস্ত। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ বহু নেতাকর্মী জেলে। যারা বাইরে রয়েছেন তারাও আটকা মামলার জালে। দলের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পর থেকে বিএনপির নেতারা নিজেদের জীবন নিয়েই শঙ্কার মধ্যে আছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিণতি দেখে বিএনপির নেতাদের মধ্যে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। স্থায়ী কমিটি, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক তো দূরের কথা সম্পাদক পর্যায়ের নেতারাও প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পান। প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোনেও কথা বলেন না। লাগাতার হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত ১০ মার্চ রাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হন। তার পরিবার ও বিএনপি দাবি করে আসছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সালাহউদ্দিনকে আটক করার কথা অস্বীকার করেছে। প্রায় দুই মাস চলে গেলেও তার কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘ অবরোধ-হরতালের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের অবস্থা আরো খারাপ। হাজার হাজার নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ছাড়া। বিশেষ করে সালাহউদ্দিন আহমেদের নিখোঁজের পর থেকে শেষ দিকে বিএনপির লাগাতার অবরোধ-হরতাল মূলত ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অবরোধ-হরতাল অনেকটাই শিথিল হয়ে পড়েছিল। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিএনপি সেই কর্মসূচি থেকে মূলত বেরিয়ে এসেছে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেন, আমাদের আন্দোলনে জনসমর্থন রয়েছে। সিটি নির্বাচনে আমাদের প্রার্থীদের পক্ষে গণজোয়ার তা প্রমাণ করে। সরকারের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের কারণে তিন মাসের আন্দোলনে নেতাকর্মীরা রাস্তায় নামতে পারেনি উল্লেখ করে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, কথায় কথায় গুলি, আটক, রিমান্ড, গুম, মামলা দিয়ে দেশব্যাপী যে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে, এ অবস্থার মধ্যে রাজপথে নামা কঠিন। তিনি জানান, বিএনপি জনসম্পৃক্ততামূলক কর্মসূচি দিয়ে খুব শিগগিরই জোরদার আন্দোলনও শুরু করবে।
অপর এক নীতিনির্ধারক বলেন, ৮ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। ওয়ান ইলেভেনের পর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়েছে। নির্যাতন সহ্য করেও তিন মাস সারাদেশে নেতাকর্মীরা আন্দোলন চালিয়ে গেছে। কিন্তু কাক্ষিত সফলতা আসেনি। এজন্য দলের নেতাকর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা আছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি, দীর্ঘদিন আন্দোলন চালানো ও কৌশলগত কারণে আন্দোলন সফল হয়নি বলেও মনে করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।দীর্ঘ আন্দোলনের পরও কাক্ষিত সাফল্য না আসায় বিএনপির নেতাকর্মী, সমর্থকরা দিন দিন হতাশ হয়ে পড়ছেন। নেতাকর্মীদের হতাশা কাটিয়ে তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনাটাই বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, নেতাকর্মীদের ভীতিকর পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করে তাদের মনোবল বাড়াতে উদ্যোগ নেবেন খালেদা জিয়া। নিখোঁজ নেতাকর্মী, আহত ও নিহতের পাশেও দাঁড়াবেন।বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সাংগঠনিক পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খুব শিগগিরই আবারো ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটিতে নেতৃত্বের পরিবর্তনের কথাও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ঢাকা মহানগর কমিটিতে আমূল পরিবর্তন আনার পরিকল্পনাও রয়েছে। আর এক্ষেত্রে তরুণ নেতৃত্বের হাতেই দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। মির্জা আব্বাসের পরিবর্তে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে আহ্বায়ক এবং তাবিথ আউয়ালকে সদস্য সচিব করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয়সহ, মহানগর, জেলা কমিটি জরুরিভিত্তিতে গঠন করা হবে। পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করার উদ্যোগও পর্যায়ক্রমে শুরু হচ্ছে।দল গোছাতেও নেতাদের জামিনেই যত আশা বিএনপির।
টানা তিন মাসের অবরোধ-হরতাল শেষে তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ফলাফল যাই ঘটুক মুক্ত রাজনৈতিক ধারায় দলটি ফিরে এসেছে। যদিও হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত আপাতত আন্দোলন নয়, দল গোছানো। কিন্তু দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে গিয়েও বিএনপি হাইকমান্ডকে দেখতে হচ্ছে অন্ধকার। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ প্রভাবশালী নেতারা কারগারে। সাংগঠনিক তৎপরতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রায় সব নেতাই হয় কারাগারে না হয় মামলার জালে পড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেকে দেশের বাইরে চলে গেছেন। মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের অবস্থাও একই। এ মুহূর্তে নেতাকর্মীদের জামিনই একমাত্র ভরসা। জামিন দেয়ার ক্ষেত্রে সরকার কতটা উদার নীতি গ্রহণ করবে সেটি পর্যবেক্ষণ করছে বিএনপি হাইকমান্ড। তিন সিটির নির্বাচন দলীয় পেশাজীবীদের দিয়ে মোকাবিলা করলেও মাঠকর্মীরা মামলায় আত্মগোপনে থাকায় ভোট কেন্দ্রে শক্তিশালীভাবে অবস্থান নিতে পারেনি। কিন্তু দল গোছাতে হলে জামিন নিয়ে প্রকাশ্য আসতে হবে। কারামুক্তি নিতে হবে। দলীয় পেশাজীবীদের দিয়ে আর যাই হোক সংগঠন গোছানোর সুযোগ নেই। এটি হারে হারে টের পাচ্ছে বিএনপির নেতৃত্ব। বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষ পর্যায়ের যেসব নেতা মুক্ত আছেন – তারা সাংগঠনিক কার্যক্রমের সঙ্গে সেভাবে জড়িত নন যেভাবে থাকলে বিএনপির মতো দলকে গোছানো যায়। এমন উপলব্ধি থেকে বিএনপি এখন কারাবন্দি ও মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে থাকা নেতাদের মুক্তির বিষয়টিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
৫ জানুয়ারি গ্রহণযোগ্য নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে দেশব্যাপী লাগাতার অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা করে বিএনপি। ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। অবরোধ-হরতাল চলাকালে নাশকতার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় জামিন পেলে তিনি কারামুক্তি পেতে পারেন। বর্তমানে তিনটি মামলায় মির্জা ফখরুলের জামিন আবেদন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। দলের দাফতরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবীর রিজভী আহমেদও জানুয়ারি মাস থেকে কারাগারে রয়েছেন। দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মানি লন্ডারিং, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী মানবতাবিরোধী অপরাধে, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নাশকতার মামলায় দীর্ঘদিন ধরেই কারাগারে রয়েছেন। সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামও মামলার আসামি হয়ে ফেরারি। ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হয়েও জামিন পাননি। মামলা রয়েছে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার নামেও। স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান কারাগারের বাইরে থাকলেও তাদের নামেও একাধিক মামলা রয়েছে।
শুধু স্থায়ী কমিটি সদস্যদের মধ্যে ড. আর এ গণি ও লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমানের নামে কোনো মামলা নেই।সারোয়ারি রহমান,এম শামছুল ইসলাম দুই জনই শারীরিকভাবে অসুস্থ।ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা মাথায় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন সাদেক হোসেন খোকা। ঢাকা মহানগর বিএনপির এই গুরুত্বপূর্ণ নেতা জামিন ছাড়া দেশে ফিরতে পারছেন না। শমশের মবিন চৌধুরীও কারাগারে আছেন। ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের নামে মামলা রয়েছে। আব্দুল্লাহ আল নোমানের নামে মামলা থাকলেও তিনি সদ্য সমাপ্ত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনজুর আলমের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টাদের মধ্যে শামছুজ্জামান দুদু কারাগারে রয়েছেন। আবদুস সালাম পিন্টু একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় কারাগারে কয়েক বছর। মামলার আসামি হয়ে বিদেশে পলাতক রয়েছেন মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ।
সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টাদের মধ্যে আবদুল আউয়াল মিন্টু, শওকত মাহমুদের নামেও মামলা রয়েছে। যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে একমাত্র ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন মুক্ত। সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ। রিজভী আহমেদ কারাগারে। রবকতউল্লাহ বুলু, মিজানুর রহমান মিনু, আমানউল্লাহ আমানের নামে রয়েছে একাধিক মামলা। তারা সবাই গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন। সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজ। ফজলুল হক মিলনের নামেও মামলা আছে। তিনিও দীর্ঘদিন থেকেই আত্মগোপনে। সম্পাদক পর্যায়ের সাংগঠনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মধ্যে আবদুস সালাম, খায়রুল কবীর খোকন, নাদিম মোস্তফা, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবুল খায়ের ভূইয়া, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবুল খায়ের ভূইয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ছাড়াও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা সাইফুল ইসলাম নীরব, মীর সরাফত আলী সফু, শফিউল উল বারী বাবু, ছাত্রদল রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, মহানগর যুবদল নেতা মামুন হাসানসহ অধিকাংশ নেতারা ডজন ডজন মামলার আসামি। জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের অবস্থাও একইরকম।যেসব অল্পসংখ্যক নেতার নামে মামলা হুলিয়া নেই তারা আছেন আতঙ্কে। এ অবস্থায় সাংগঠনিকভাবে দলকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনায় বিএনপির বড় বাধা এখন কারাবন্দি ও পলাতক নেতাদের জামিনের ব্যবস্থা করা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমানও বর্তমান পরিস্থিতিকে নাজুক স্বীকার করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, আটক করেছে, তা নজিরবিহীন। শীর্ষ থেকে তৃণমূল কেউ রেহাই পায়নি। তিনি বলেন, বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর তাগিদ আমরা অনুভব করছি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তা ভাবছেন। কিন্তু জামিনের মাধ্যমে নেতাদের মুক্ত করা না হলে কিছুই সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের অধিকাংশ শীর্ষ নেতা দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক। অনেকেই মামলা-হামলার আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খুব শিগগিরই নেতারা মুক্ত হবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।