দৈনিকবার্তা-যুক্তরাজ্যে, ০৮ মে ২০১৫: নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আরও পাঁচ বছর যুক্তরাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থাকছেন ডানপন্থী কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডেভিড ক্যামেরন।পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে ৬৪১টি আসনের যে ফলাফলএসেছে,তাতে কনজারভেটিভপার্টি ৩২৭টিতে জয় পেয়েছে।অন্যদিকে বৃহস্পতিবার ভোটের পর কঠিন একটি রাত কাটিয়েছে লেবার পার্টি, যেখানে শ্যাডো চ্যান্সেলর এড বলস নিজেও হেরে বসেছেন। বিরোধী দলে থাকা লেবার পার্টি এবার পেয়েছে ২২৯ আসন।
৫৬টি আসনে জয় পাওয়া স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) স্কটল্যান্ড থেকে লেবার পার্টিকে একপ্রকার নির্মূলই করে দিয়েছে। এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটসরা ৮টি এবং ২৩টি আসনে অন্যান্য দল জিতেছে। নিয়ম অনুযায়ী নিরঙ্কুশ জয়ের জন্য ৩২৬ আসন পেতে হলেও পার্লামেন্টে আয়ারল্যান্ডের সিন ফিনের চারটি আসন এবং স্পিকারের ভোট থাকে না বলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কর্যত ৩২৩ আসনই যথেষ্ট। দলের হতাশাজনক ফলাফলের পর লেবার নেতা এড মিলিব্যান্ড এবং লিব-ডেমসের প্রধান নিক ক্লেগ পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যমের খবর। ভোটের আগে যে প্রতিশ্র“তি ক্যামেরন দিয়েছিলেন, টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে এসে তা পূরণ করলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে ২০১৭ সালে গণভোটের মুখোমুখি হতে হবে যুক্তরাজ্যকে। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ওয়েস্টমিনস্টারে তৃতীয় বৃহৎ দল হিসাবে আবির্ভূত হওয়ায় ক্যামেরনের নতুন পাঁচ বছরের মেয়াদে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের দাবিও নতুন করে উসকে উঠতে পারে। ক্ষমতাসীন মধ্য-ডানপন্থি কনজারভেটিভ পার্টির শাসনেই আস্থা দেখালো যুক্তরাজ্যের বেশিরভাগ জনগণ। বৃহস্পতিবার সম্পন্ন ৫৬তম জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের দলের প্রার্থীদেরই সর্বোচ্চ ভোট দিয়েছেন তারা। সংসদের (হাউস অব কমন্স) ৬৫০ আসনের মধ্যে ৩২৭ আসনে জয়লাভ করে ফেলেছেন কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থীরা। এর ফলে এককভাবে সরকার গঠন নিশ্চিত হয়ে গেছে ক্ষমতাসীনদের।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায়) ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়ালস ও নর্থ আয়ারল্যান্ডের ৫০ হাজার ভোটকেন্দ্রে একযোগে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, একটানা চলে স্থানীয় সময় রাত ১০টা (বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা) পর্যন্ত। পাঁচ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ৭৫ শতাংশ এবারের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভোটগ্রহণের পর শুরু হয় ভোট গণনা। ভোট গণনা শেষে ফলাফল প্রকাশ হতে থাকে। প্রথম দিকে লেবার পার্টির প্রার্থীদের এগিয়ে থাকার খবর আসতে থাকলেও ধীরে ধীরে ফলাফলে জয়ের পাল্লা ভারী হতে থাকে কনজারভেটিভ পার্টির। আর শুক্রবার (৮ মে) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শেষ খবর অনুযায়ী, হাউস অব কমন্সের ৬৫০ আসনের মধ্যে ৬৪৬ আসনের ফলাফল ঘোষিত হয়েছে। এতে ৩২৭ আসনে জয় নিয়ে এককভাবে সরকার গঠন নিশ্চিত করেছে কনজারভেটিভ পার্টি। আর ২৩২টি আসনে জয় পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টি। এছাড়া, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) ৫৬ আসনে জয় পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
আর বর্তমান ক্ষমতাসীনদের অংশীদার লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (লিব ডেম) জয় পেয়েছে ৮ আসনে। সেসঙ্গে ইউনাইটেড কিংডম ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি (ইউকেআইপি) পেয়েছে ১ আসন। অন্য দলগুলো পেয়েছে ২২ আসনে জয়।শতকরা হিসাবে কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ। আর লেবার পার্টির পক্ষে ভোট পড়েছে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ।বিশ্ব গণমাধ্যমের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারী প্রার্থীই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে বিজয়ী হয়েছেন। তারা সবাই লেবার পার্টির পক্ষে লড়াইয়ে অংশ নেন। এদের মধ্যে রুপা হক লন্ডনের ইলিং সেন্ট্রাল ও একটন থেকে, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্ন থেকে এবং রুশনারা আলী বেথনেল গ্রিন ও বো থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।রুপা হক পেয়েছেন ২২ হাজার ২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী অ্যাঙ্গি ব্রে পেয়েছেন ২১ হাজার ৭শ’ ২৮ ভোট। নির্বাচনী এলাকায় রুপা হকের পক্ষে পড়েছে ৪৩ শতাংশ ভোট।টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক পেয়েছেন ২৩ হাজার ৯শ’ ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির সিমন মার্কজ পেয়েছেন ২২ হাজার ৮শ’ ৩৯ ভোট। নির্বাচনী এলাকায় টিউলিপের পক্ষে পড়েছে ৪৪ শতাংশ ভোট।নারী প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছেন রুশনারা আলী। তিনি পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩শ’ ৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভের ম্যাথিউ স্মিথ পেয়েছেন ৮ হাজার ৭০ ভোট। নির্বাচনী এলাকায় রুশনারার পক্ষে পড়েছে ৬১ শতাংশ ভোট।
এদিকে, যুক্তরাজ্যের ৫৬তম সাধারণ নির্বাচনে দলের পরাজয় স্বীকার করে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় নিয়ে পদত্যাগ করছেন শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। এ কাতারে ইতোমধ্যেই নাম লিখিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান এড মিলিব্যান্ড, ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান ও উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী দল ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির (ইউকেআইপি) প্রধান নিগেল ফ্যারেগ।বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল শুক্রবার (৮ মে) ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দলের পরাজয়ের ইঙ্গিত পেয়ে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিতে থাকেন মিলিব্যান্ড, ক্লেগ ও ফ্যারেগরা। কিন্তু ফলাফল প্রত্যাশিত না হওয়ায় ৮-১০টি আসনের ফল ঘোষণার আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন মিলিব্যান্ড, ক্লেগ ও ফ্যারেগরা।লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌঁড়ে থাকা মিলিব্যান্ড তার দলের পরাজয় স্বীকার করলেও বিজয়ী দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অপর দিকে, পদত্যাগ করে আগেরবারের যৌথ ক্ষমতাসীনদের অভিনন্দন জানিয়েছেন নিক ক্লেগও। এছাড়া, পদত্যাগ করে আগামীবারের দলের প্রধান হওয়ার নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফ্যারেগ।নির্বাচনে লড়াই করা ছোটখাটো দলগুলোর নেতৃত্বেরও পদত্যাগের খবর দিচ্ছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো।