দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৭ মে: হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ইঙ্গিত দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনায় উঠে আসা যুক্তরাজ্যের ৫৬তম নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলছে।বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায়) ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়ালস ও নর্থ আয়ারল্যান্ডের ৫০ হাজার ভোটকেন্দ্রে একযোগে শুরু হয় এ ভোটগ্রহণ।এবারের জাতীয় নির্বাচনে পাঁচ কোটি নিবন্ধিত ভোটার ৩ হাজার ৯শ’ ৭১ জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে হাউজ অব কমন্সের ৬শ’ ৫০টি আসনে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।তবে, ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পর ভোটার উপস্থিতি পর্যালোচনা করে অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, এবারের নির্বাচনে ৬৯ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।এর মধ্যে পাঁচশ’ ৩৩টি আসনেরই প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন ইংল্যান্ডের জনগণ। বাকি আসনগুলোর ৫৯টিতে স্কটল্যান্ড, ৪০টিতে ওয়ালস ও ১৮টিতে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন।
এছাড়া একই দিন ৯ হাজারের বেশি কাউন্সিল আসনের প্রতিনিধিসহ বেলফোর্ড, কোপল্যান্ড, লাইসেস্টার, ম্যানসফিল্ড, মিডিলসব্রো ও টরবে’র মেয়র নির্বাচনেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন গ্রেট ক্ষ্রটেনের ভোটাররা।নির্বাচনের দিন স্থানীয় সময় সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। শেষ সময়ের মধ্যে যেসকল ভোটার ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হবেন, তাদের সবাই ভোট দিতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে ব্রিটিশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।ভোটগ্রহণ শেষ হতেই শুরু হবে গণনা। গণনা শেষে ঘোষণা করা হবে নির্বাচনের ফলাফল।এদিকে, নির্বাচন পূববর্তী অভিষ্যদ্বাণীগুলো যুক্তরাজ্যের ৫৬তম এই জাতীয় নির্বাচনে ডেভিড ক্যামরনের কনজারভেটিভ পার্টিকে এগিয়ে রাখলেও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলা প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যার কারণে হয়তো এক ধরণের অনিশ্চয়তারও সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, কনজারভেটিভ পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চাইছে যুক্তরাজ্যের ৩৩ শতাংশ জনগণ। আর লেবারকে সরকারে দেখতে চাইছে ৩২ শতাংশ।নির্বাচনী ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বলছে, চলমান নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি ২৮৪টি আসনে জয় পেতে পারে। এর বিপরীতে লেবার পার্টি পেতে পারে ২৬৩ আসনে জয়।এক্ষেত্রে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অপেক্ষাকৃত দূর্বল দলগুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি (ইউকিপ) ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে কোনো যৌথ সরকার ব্যবস্থার মধ্যে থাকতে দেখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলেই নির্বাচনী বিশ্লেষকদের মতামত।
নির্বাচনে জনমত জরীপের তথ্য অনুযায়ী, ইউকিপের রয়েছে ১৪ শতাংশ ভোটার সমর্থন। বিপরীতে লিবারেল ডেমোকেটিকদের রয়েছে ৮ শতাংশ সমর্থন।নির্বাচনী ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, স্কটিশ নেশনালিস্ট জয় পেতে পারে ৪৮ আসনে। আর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি পেতে পারে ৩১ আসনে জয়। এছাড়া ইউকিপ ২ আসনে, গ্রিন ১ আসনে জয় পেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।এদিকে, নির্বাচনের কয়েকদিন আগে থেকেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে এড মিলিব্যান্ডের লেবার পার্টি নিক ক্লেগের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যৌথ সরকার গঠনে আগ্রহী বলে শোনা যায়। তবে এ তথ্যের সত্যতা কতটুকু, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার পরপরই।যুক্তরাজ্যের এ নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের জন্যও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিন হেভিওয়েট নারী প্রার্থী- টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রূপা হক ও রুশনারা আলীসহ ১২ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এতে।আলোচনায় থাকা তিন নারী প্রার্থীই লেবার পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন থেকে, রুশনারা আলী বেথনাল গ্রিন এন্ড বো থেকে ও রুপা হক মধ্য ইলিং থেকে লড়ছেন।
এছাড়া বাকি বাংলাদেশি ব্রিটিশ প্রার্থীরা হচ্ছেন- বেকেনহাম আসনে লেবার পার্টির ব্যারিস্টার মেরিনা আহমেদ, ওয়েলউইন অ্যান্ড হাটফিল্ড আসন থেকে লেবার পার্টির ব্যারিস্টার আনোয়ার বাবুল মিয়া, নর্থহ্যামটন সাউথ আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের প্রিন্স সাদিক চৌধুরী, সারের রায়গেইট ও বানস্টেড আসনে লেবার পার্টির আলী আখলাকুল, লুটন সাউথ থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটের আশুক আহমেদ, নর্থ ইস্ট হ্যাম্পশায়ার আসন থেকে লেবার পার্টির এমরান হোসাইন, স্কটল্যান্ডের এভারডিনশায়ারের বেনফ অ্যান্ড বুখান আসন থেকে লেবার পার্টির সুমন হক এবং ওয়েলসের আরফন আসন থেকে লিবারেল ডেমোক্রেট দলের মোহাম্মদ সুলতান চৌধুরী শামীমএদিকে, ৫৬ তম ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচন আজ। সব পূর্বাভাসই জানান দিচ্ছে নির্বাচনে লড়াই হবে হাড্ডা-হাড্ডি। ডাইনিং স্ট্রিটের ১০ নম্বর বাড়িটি দখলে নিতে হবে জমজমাট লড়াই।
ডব্রটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের নির্বাচনে যে দল জয়লাভ করে, সে দলের নেতা টিকিট পেয়ে যান ১০ নম্বর ডাইনিং স্ট্রিটের। প্রতি পাঁচ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় এ নির্বাচন।বৃহস্পতিবার লন্ডন সময় সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। সবার নজর এখন সেইদিকেই।নির্বাচনী হাওয়ায় উত্তাল ব্রিটেনে নির্বাচন নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আগ্রহ যেন এবার একটু বেশীই। নির্বাচনে এমপি পদে লড়ছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ১১ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী জয়ের সম্ভাবনা রুশানারা আলী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহেনার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ও খ্যাতনামা কিংস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডক্টর রুপা হকের।স্মরণকালের সবচেয়ে আলোচিত এই নির্বাচনকে ঘিরে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে এখন চলছে দারুণ প্রাণচাঞ্চল্য। প্রকাশিত জরিপগুলোর ফলাফল যদি ভুল না হয়, তবে ব্রিটেনের আগামী পার্লামেন্টে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপির সংখ্যা বেড়ে তিনজনে দাঁড়াবে। এদের তিন জনই লেবার পার্টির প্রার্থী।এদিকে ব্রিটেনের এ নির্বাচন নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও হিসেব-নিকেশ। প্রধান দলগুলোর নেতারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সফর করেছেন ও তাদের বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্ঠা করেছেন। এবারের নির্বাচনে কোন দল জয়ী হবে সেটা কেউ বলতে পারছে না। তবে জনমত জরিপে প্রধান দুটি দল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি ও বিরোধী লেবার পার্টি অবস্থান খুবই কাছাকাছি। তাই সবার নজর ছোট দল লিবারেল ডেমোক্র্যাট (লিবডেম) ও ইউকিপের মতো দলকে সাথে নিয়ে শেষ পর্যন্ত কারা সরকার গঠন করে সেদিকে।