SAMSUNG CAMERA PICTURES

দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ০৭ মে: গাজীপুরের জনপ্রিয় সংসদ সদস্য ও শ্রমিকনেতা প্রয়াত আহসান উল্লাহ মাস্টারের ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে।মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গাজীপুর মহানগরের পুবাইলের হায়দরাবাদে আহসান উল্লাহ মাস্টারের সমাধিস্থলে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্থানীয় প্রশাসন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠাণ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।গাজীপুর মহানগরের হায়দারাবাদ এলাকায় আহসান উল্লাহ মাস্টারের গ্রামের বাড়িতে দুপুরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের পুত্র গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বক্তব্য রাখেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক জিয়া সারা বাংলাদেশকে হত্যার লীলাভ’মিতে পরিনত করেছিল। গত তিন মাসে দেড়শ’ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং আড়াই হাজার জনকে দগ্ধ করেছে। এসব অগ্নিদগ্ধরা এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। সেই নির্লজ্জ বেহায়া রক্ত পিপাসু খালেদা জিয়া সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মানুষের কাছে ভোট চেয়েছে। কিন্তু ঢাকা ও চট্রগ্রাম মহানগরের সাধারণ মানুষ ধিক্কার ও থুতু দিয়ে গত ৩০ এপ্রিলের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তাকে প্রত্যাখাণ করে খালেদা জিয়া ও তার ছেলের নাশকতা কর্মকান্ডের জবাব দিয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া এসব হত্যা মামলা থেকে রেহাই পাবেন না। তার বিরুদ্ধে মাত্র একটি মামলার চার্জশীট দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামী করে আইনের আওতায় আনা হবে। কারণ আইন সবার জন্য সমান। তিনি আরো বলেন, আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায় বাস্তবায়ন করা এখন সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এ রায় বাস্তায়ন করতে আমি কাজ করবো।

স্মরণসভায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, আহসান উল্লাহ মাস্টার আওয়ামীলীগের একজন সৎ, নির্ভিক জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। জীবিত আহসান উল্লাহ মাস্টারের চেয়ে মৃত শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অনেক বেশি শক্তিশালী। শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার তার রাজনৈতিক জীবনে কোন দিন অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। তিনি একজন খাটি দেশপ্রেমিক বীরমুক্তিযোদ্ধা, নির্লোভ রাজনৈতিক নেতা অন্যদিকে মানুষ গড়ার কারিগর ছিলেন। তাকে বিএনপি জামায়াত জোট হত্যা করে ভেবেছিল আওয়ামীলীগকে গাজীপুর থেকে নিশ্চিন্ন করে দিবে। কিন্তু তারা তা পারেনি। আর কোনদিন পারবেও না। জঘন্য নির্মম ওই হত্যাকান্ডের খুনিদের বিচার বাংলার মাটিতে হবেই হবে। এটা কেউ রোধ করতে পারবে না।

সভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে ও গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল মামলার রায় কার্যকরের দাবী করেন।স্মরণসভায় এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, গাজীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক আক্তারুজ্জামান, কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামীলীগ নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, এড. ওয়াজ উদ্দিন মিয়া প্রমুখ।

এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপির ১১ম শাহাদাৎ বার্ষিকী টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানেও পালিত হয়েছে। টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম.এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দোয়া ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, রেল মন্ত্রী মোঃ মজিবুল হক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নবনির্বাচিত মেয়র আ.জ.ম নাসির, স্বেচ্ছাসেক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এড. মোল্লা আবু কাওসার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ আজহার উদ্দিন, কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা বাবলা, গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক মোঃ মতিউর রহমান মতি, গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব মোঃ ওসমান আলী প্রমুখ। আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন টঙ্গী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ ফজলুল হক।

গভায় বক্তারা গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে এসব স্মরণসভায় বক্তারা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারের বিদেশে পলাতক আসামীদের দেশে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানান। এছাড়াও সকালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মরহুমের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে দোয়া মাহ্ফিলের আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ৭ মে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টারকে টঙ্গীস্থ তার বাসভবন সংলগ্ন স্কুল মাঠে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক জনসভা মঞ্চে প্রকাশ্যে দিনদুপুরে সন্ত্রাসীরা ব্রাশ ফায়ারে তাকে হত্যা করে। ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল দ্রুত বিচার আইনে প্রধান আসামী বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। অপর ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে প্রধান আসামীসহ ১৭ জন বিভিন্ন কারাগারে বন্দী রয়েছে। বাকী ১১জন আসামী ভারত, ইতালি, বেলজিয়া, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে।