দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৬ মে: বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি বিলটি রাজ্যসভায় উত্থাপন করেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বুধবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টার পর এটি উত্থাপন করা হয়।এ বিল নিয়ে এখন আলোচনা করছেন রাজ্যসভার সদস্যরা।পাস হলে এটি কাল লোকসভায় তোলা হবে।এর আগে মঙ্গলবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনের এ বিলটি অনুমোদিত হয়।
১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হবে। এ চুক্তি কার্যকর হলে দুদেশের প্রায় ৫২ হাজার মানুষের বন্দি জীবনের অবসান ঘটবে। ছিটমহল বিনিময়ের ফলে তারা যুক্ত হবেন নিজ নিজ দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। নির্দিষ্ট হবে প্রতিবেশি দুই দেশের স্থল সীমানাও।এদিকে, ৪২ বছর ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত বিলটি ভারতীয় পার্লামেন্টে পাস হতে যাওয়ার খবরে আশার সঞ্চার হয়েছে ছিটমহলগুলোয়।বিতর্কিত স্থলসীমান্ত বিল বা ‘ইন্দো-বাংলা ল্যান্ড বাউন্ডারি বিল’-এ বিতর্কের ইস্যুগুলোতে কোনো রদবদল না করেই অনুমোদন করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা। বিলটি বুধবার রাজ্যসভায় অনুমোদন করায় এখন ৭ মে বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় অনুমোদন করানোর কথা রয়েছে। সোমবার রাতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ’র আসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিল অনুমোদন করা হয়। জানা যায়, মূলত প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের চাপে সোমবার রাতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এ বিল অপরিবর্তিতভাবে অনুমোদন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
আসছে ৮ মে লোকসভার অধিবেশন শেষ হতে চলেছে বিধায় বিলটি অনুমোদনের ব্যাপারে এতো হুড়োতাড়ার আশ্রয় নিলো ক্ষমতাসীন বিজেপি।আসছে জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে।সে পরিকল্পনা অটুট রাখার স্বার্থটিও দ্রুততম সময়ে এ বিল অনুমোদনের পেছনে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।সোমবার অনুষ্ঠিত দলীয় বৈঠকে অমিত শাহের বাড়ি উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্র-সরকারের পরারাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং সংসদীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু। আসামকে যুক্ত রাখা-সংশ্লিষ্ট আলোচনার স্বার্থে আসাম-বিজেপির প্রধান সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্যকে জরুরি তলবের মাধ্যমে এ বৈঠকে উপস্থিত করা হয়। আসাম বিজেপির অন্তর্ভুক্ত একাধিক সাংসদও উপস্থিত ছিলেন।
সকলের উপস্থিতিতে সীমান্ত বিলটির বিতর্কের বিশেষ স্থানগুলোসহ, কংগ্রেসের উদ্দেশ্য ও আপত্তির অংশগুলো উঠে আসে। বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসে বলে জানা যায়।বলা হয় এ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক-সংশ্লিষ্ট চুক্তি বিগত ৪২ বছর ধরে বিভিন্ন জটিলতায় সরিয়ে রাখা হয়েছিল। আরও বিলম্ব হলে রাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ন হতে পারে।বিজেপির আসাম-প্রধান সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য জানান, আসামকে বাইরে রেখে বিল আনার পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের। এর তীব্র বিরোধিতা করেছিল কংগ্রেস ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। বিরোধিতার জেরে স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলে যুক্ত করা হয় আসামকে।আসামকে যুক্ত করায় বিল পাশে মিলবে কংগ্রেসের সমর্থনও, মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর স্থলসীমান্ত চুক্তি বিলে আগেই সমর্থন জানিয়েছে তৃণমূল। ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহল বিনিময়ের জন্য ভারতীয় সংবিধান সংশোধনের এই বিল বুধবার রাজ্যসভায় ওঠার কথা। সেখানে পাস হয়ে এলে তা লোকসভায় পাস করাতে হবে।আসাম বিজেপির পক্ষ থেকে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে তীব্র বিরোধিতার মুখে চুক্তি থেকে আসামের ছিটমহলগুলো বাদ দেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিবেচনা করছেন বলে এর আগে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।এরপর স্থল সীমান্ত চুক্তি থেকে আসামকে বাদ না দিতে মোদীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। আসামকে বাদ দিলে রাজ্যসভায় এ বিল পাসে সমর্থন দেওয়া হবে না বলে ইংগিত দেয় প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।আগামী ৮ মে লোকসভার চলতি অধিবেশন শেষে চীন, মঙ্গোলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া সফরে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী। এরপর জুন বা জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসতে চান তিনি।
তবে ভারতীয় কূটনীতিকরা ইংগিত দিয়েছেন, খালি হাতে ঢাকা সফরে যাওয়া মোদীর ঠিক হবে না। এ কারণে লোকসভার চলতি অধিবেশনেই বিলটি পাস করিয়ে আনতে মোদীর এই তাড়াহুড়ো।ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি নামে পরিচিত ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা সফরে এসে প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।এর আওতায় বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি ছিটমহল এবং ভারতের সীমান্তে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল বিনিময় এবং ছয় দশমিক এক কিলোমিটার অমীমাংসিত সীমানা চিহ্নিত হওয়ার কথা।বাংলাদেশ ওই চুক্তিতে অনুসমর্থন দিলেও জমি হস্তান্তরে ভারতের সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন হওয়ায় বিষয়টি আটকে থাকে। ভারতের বিগত কংগ্রেস সরকার কয়েক দফা উদ্যোগ নিয়েও বিজেপি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধিতায় রাজ্যসভা ও লোকসভায় তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়।এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের অংশ হিসাবে ৬৫ বছর ধরে ঝুলে থাকা সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নেন। শুরু থেকে আপত্তি করে আসা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও নান চাপের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সম্মতি দেন। মোদী নিজেও বিভিন্ন সময়ে এ চুক্তি কার্যকরে জোর চেষ্টা চালানোর কথা বলেন। কিন্তু আসামে নিজের দলের ভেতর থেকেই তাকে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়। বাংলাদেশি ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৪হাজার এবং ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার।