দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৬ মে: শপথ নিলেন ঢাকা উত্তর,দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা।বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়।ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের সাঈদ খোকন ও চট্টগ্রাম সিটির নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছিরকে সকাল ১০টা ৩১ মিনিটে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এর আগে ১০টা ২৮ মিনিটে তিন সিটির নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুল মালেক।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন মেয়রের পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। তিন সিটিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থীরা বিজয়ী হন।ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে ২ লাখ ৪১ হাজার ৫ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন সাঈদ খোকন। তিনি পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট এবং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিতপ্রার্থী মির্জা আব্বাস পেয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট।ঢাকা উত্তরে আনিসুল হক ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৭ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি পেয়েছেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিতডপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল পেয়েছেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট।
চট্টগ্রামে আ জ ম নাছির উদ্দিন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলম পেয়েছেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট।নির্বাচনী প্রচারে ভোটারদের যেসব আশ্বাস দিয়েছিলেন,শপথ নেওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় ঘুরেফিরে সেই একই কথা বলেছেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন মেয়র। বুধবার মেয়র হিসাবে শপথ নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূল ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন রাজধানীকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসাবে গড়ে তোলার কথা বলেন।
অন্যদিকে, বন্দরনগরীর জলাবদ্ধতা দূর করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়ার কথা বলেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।নির্বাচনে জয় পাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় এই তিন মেয়রকে শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।একই অনুষ্ঠানে তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করান স্থানীয় সমরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।শপথ নেওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন প্রথম কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।সাদা পাজামা-পাঞ্জাবীর সঙ্গে মুজিব কোট পরা খোকন বলেন,ঢাকাবাসীর ভোটে আমার অধিকার একটু বেশি। ঢাকাবাসী আমাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছে।ঢাকাবাসীর হক আমার ওপর বেশি। আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও আমার ওপর থাকা ঢাকাবাসীর হক আদায় করব।
মেয়র হিসাবে রাজধানীর যানজট নিরসন,রাস্তাঘাট মেরামত এবং আর্বজনামুক্ত করার বিষয়গুলো অগ্রাধিকারে রাখার কথা বলেন খোকন। বাবা ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের মতোই ঢাকাবাসীর জন্য নিজেকে ‘উৎসর্গ করার প্রতিশ্র“তি দেন। যানজট নিরসন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট মেরামত, ময়লা আবর্জনা মুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ায় অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবেন জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমি আমার প্রথম দিন থেকে এ জন্য কাজ শুরু করবো।
তিনি বলেন, সংকট প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার আছে। আমি সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকাবাসীর উন্নয়ন করে যাবো।নীল পাঞ্জাবি পরিহিত হাস্যোজ্জ্বল আনিসুল হক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে প্রথম প্রতিক্রিয়ায় আবারও নগরবাসীর সহায়তা চেয়েছেন, যেমনটা তিনি চেয়েছিলেন নিজের নির্বাচনী প্রচারে।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি বলেন, কোনো কাজ একজন মেয়রের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপের মাধ্যমে ঢাকার উত্তর অংশের উন্নয়ন করে বাসের উপযোগী করার কথা বলেন আনিসুল। ভোটে বিজয়ী হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন নিশ্চিত করে বসবাস উপযোগী সুন্দর নগরী গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মেয়র আনিসুল হক।তিনি বলেন, কোনো কাজ মেয়রের একার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এ জন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।
ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে ঢাকা উত্তরের এ মেয়র বলেন, আমাকে সমর্থন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ। যারা আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমার জয়ের জন্য যারা কাজ করেছেন, তাদের সবার কাছে আমি ঋণী থাকলাম।প্রতিক্রিয়া জানাতে এসে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির প্রথমেই তোলেন নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গ।তিনি বলেন, ১৯৯৫ সালে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল। এতদিন ধরে এ প্ল্যান বাস্তবায়নও করা হয়নি, আবার বাদও দেওয়া হয়নি।জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা স্বল্প সময়ে সমাধান করা যাবে না। দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।নালা-নর্দমার ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নতুন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে শতভাগ সফল হওয়ার আশা প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের মেয়র। দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করতে হবে বলেও জানান তিনি।