Thakurgaon Mosjid Pic_1

দৈনিকবার্তা- ঠাকুরগাঁও, ০৬ মে: শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে জামালপুর নামক স্থানে অবস্থিত মুসলিম স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মসজিদ। প্রায় ২শ’ ৩০ বছরের পুরনো এই মসজিদটি আজো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

মসজিদটির শিল্পকলা দৃষ্টিনন্দিত, মনোমুগ্ধকর ও প্রশংসাযোগ্য। মসজিদে বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ আছে। গম্বুজের শীর্ষদেশ কাচ পাথরের কাজ করা। এই মসজিদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো মিনারগুলো। মসজিদের ছাদে আটাশটি মিনার আছে। একেকটি মিনার ৩৫ ফুট উঁচু এবং প্রতিটিতে নকশা করা রয়েছে। গম্বুজ ও মিনারের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে অপূর্ব সৌন্দর্য। এত মিনার সচরাচর কোন মসজিদে দেখা যায় না। মসজিদটির চারটি অংশ হলো মূল কক্ষ, মূল কক্ষের সঙ্গে ছাদসহ বারান্দা, ছাদবিহীন বারান্দা এবং ছাদবিহীন বারান্দাটি অর্ধ প্রাচীরে বেষ্টিত হয়ে পূর্বাংশে মাঝখানে চার থামের উপর ছাদ বিশিষ্ট মূল দরজা। খোলা বারান্দার প্রাচীরে এবং মূল দরজার ছাদে ছোট ছোট মিনারের অলংকার রয়েছে। মূল কক্ষের বাইরের দিক থেকে পরিমাপ হচ্ছে ২৯দ্ধ৪৭ ফুট এবং ছাদবিহীন বারান্দার পরিমাপ ২১দ্ধ৪৭ ফুট। মূল কক্ষের কোণগুলো তিন থাম বিশিষ্ট। এর জানালা দুটি, দরজা তিনটি, কুলুঙ্গি দুটি। মসজিদটির ভিতরে দরজায়, বারান্দায় এবং বাইরের দেয়ালগুলোতে প্রচুর লতাপাতা ও ফুলের সুদৃশ্য নকশা রয়েছে। ভারতের উত্তর প্রদেশের হংসরাজ এবং তার পুত্র রামহিৎ মসজিদটির মূল কারিগর। দ্বারভাঙ্গা এলাকার কারিগরেরাও নির্মাণ কাজে অংশ নেয়। এই মসজিদটি দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রাপ্ত থেকে অনেক লোক এসে ভির জমায়।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নে ১৭৮০ সালে জমিদার আব্দুল হালিমের তত্বাবধানে নির্মিত হয় এই অপূর্ব সুন্দর মসজিদটি। তিনি এই মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করলেও পূর্ণাঙ্গ মসজিদ দেখে যেতে পারেননি।

জমিদার আব্দুল হালিম ১৭৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে মারা যান। জমিদার আব্দুল হালিম মারা যাওয়ার পর জমিদারির দায়িত্ব পান নূর মোহাম্মদ চৌধুরী। তিনি জমিদারি দায়িত্ব হাতে পাওয়ার পর পুনরায় মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন এবং দীর্ঘ ২১ বছর নিখুঁতভাবে কাজ চালানোর পর ১৮০১ সালে ঐতিহ্যবাহী কারুকার্যময় জমিদার বাড়ি মসজিদের কাজ সমাপ্ত হয়।

জমিদার নূর মোহাম্মদ চৌধুরীর মৃত্যুর পর পরবর্তীতে এই মসজিদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পড়ে জমিদার এমদাদুর রহমান চৌধুরী, জমিদার করিম উদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী ও জমিদার বদিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরীর উপর। সর্বশেষ জমিদার বদিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী এলাকায় সর্বাধিক আধ্যাতিক হুজুর বলে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন বলেও জনশ্র“তি আছে। ফলে বিভিন্ন আপদ-বিপদে ভক্তরা তার কাছে ছুটে আসতেন।

শুধু মসলিম ধর্মীয় নয়- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তার দরবারে আসতেন সমস্যা সমাধানের আশায় এবং কেউ কোনোদিন খালি হাতে ফিরতেন না বলেও কথিত আছে। ফলে তিনি সব সম্প্রদায়ের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন অলৌকিক ক্ষমতার হুজুর হিসেবে। তিনি বেশিরভাগ সময় এ মসজিদে কাটাতেন বলে জানা গেছে।

দর্শনার্থী রেজাউল করিম, সোলেমান আলী, রোকসানা আক্তার সহ অনেকে জানান, মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর। মসজিদটির চারদিকে অপরূপ সৌন্দর্য। সুযোগ পেলেই তাঁরা এই মসজিদটি দেখতে চলে আসেন। তাঁরা আরো জানান, একবার এই মসজিদটি দেখলে মনে হয় যেন বার বার দেখি।

জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান দবিরুল ইসলাম জানান, ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি দেখার জন্য প্রতিদিন দুর দুরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী এসে ভির জমায়। তিনি আরও জানান, ১৮০১ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। সেই সময় থেকে আজও পর্যন্ত ওই মসজিদটির কোন সংস্কার করা হয়নি। ঐতিহ্যবাহী মসজিদ সংস্কার করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান।