দৈনিকবার্তা- ঢাকা, ০৬ মে: সফরের শেষে এসে তবে কী ভাগ্যের সহায়তাই পাচ্ছে পাকিস্তান। একেবারে মোক্ষম সময়ে দু’দুটি নো বলের সুবাধে ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন শেষেই বলা যায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তান। ১৮ রানে মোহাম্মদ শহিদের বলে আজহার আলির ক্যাচ দুর্দান্ত ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ধরেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু, দেখা গেলো, মোহাম্মদ শহিদের পা ক্রিজ অতিক্রম করে গেলো। সুতরাং নো’ বল। বেঁচে গেলেন আজহার আলি।৭৮ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন ইউনিস খান। বোলার সৌম্য সরকার। কাভার অঞ্চলে খেলতে যান ইউনিস। অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় তার ব্যাট থেকে ওঠা ক্যাচ তালুবন্দী করেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু কী আশ্চর্য, এবার সৌম্য সরকারেরও পা ক্রিজের সীমানা অতিক্রম করে গেলো। ফলে নো বল। সেই ইউনিস খান আউট হলেন ১৯৫ বলে ১৪৮ রান করে। আর আজহার আলি তো এখনও নট আউট ১২৭ রানে।
দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের সৌভাগ্য পাকিস্তানেরই। সৌভাগ্যের জেরেই ঢাকা টেস্টেও প্রথম দিন শেষে, ৯০ ওভারে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে সফরকারীদের রান ৩২৩। গড় ৩.৫৮ করে।বাংলাদেশের দুর্ভাগ্যটা দেখুন! প্রথম ওভারেই চোটে পড়ে গেলেন শাহাদাত হোসেন রাজীব। বাংলাদেশের জন্য দুঃসংবাদই বটে। পরে তিনি মাঠে নেমেছিলেনও। কিন্তু আবারও হাঁটুতে আঘাত নিয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ থেকে বিদায় নিতে হলো রাজিবকে।তবে সুসংবাদ আনতে খুব বেশি দেরি করেননি বাংলাদেশের বোলাররা। খুলনা টেস্টে অভিষিক্ত পেসার মোহ্ম্মাদ শহিদই ঢাকা টেস্টে এসে শুরুতেই আঘাত হানলেন পাকিস্তান ব্যাটিং লাইনআপের ওপর।ইনিংসের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলেই শহিদের হালকা বাউন্স আর ইনসুইংয়ের কাছেই পরাস্ত হতে হলো মোহাম্মদ হাফিজকে। পাকিস্তানি ওপেনারের গ্লাভস ছুঁয়ে দিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে জমা পড়ে ক্যাচটি। সঙ্গে সঙ্গেই আঙ্গুল তুলে দেন আম্পায়ার পল রেইফল। হাফিজ তখন ১৬ বলে ৮ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন।মিরপুরের উইকেটে কেন টস জিতে বোলিং নিলেন মুশফিকুর রহিম, সেটা ভালোকরেই বুঝিয়ে দিলেন মোহাম্মদ শহিদ এবং সৌম্য সরকার। অসাধারণ বাউন্স আর সুইং পাচ্ছিলেন দুই বোলার। অসাধারণ এক সুইংয়ে আজহার আলিকে পরাস্ত করেছিলেন মোহাম্মদ শহিদ।
ব্যাটের কানায় লাগিয়ে স্লিপে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন আজহার। সৌম্য সরকার ঝাঁপিয়ে পড়ে অসাধারণ দক্ষতায় ক্যাচটি ধরেছিলেনও। কিন্তু নো বল চেক করতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। শহিদের পা ক্রিজ ছাড়িয়ে যায়। অথ্যাৎ নো বল। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। বেঁচে গেলেন আজহার। তখন ১৮ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন তিনি।২৩তম ওভারের পঞ্চম বলে এসে তাইজুলের একটি বল ডিপ মিডউইকেটে তুলে খেলেন পাকিস্তানি ওপেনার সামি আসলাম। সেখানে দাঁড়ানো ছিলেন শাহাদাত হোসেন রাজিব। বলটি লুপে নিতে কোনই কষ্ট করতে হয়নি তাকে। ৫৮ রানে পড়ল পাকিস্তানের দ্বিতীয় উইকেট।লাঞ্চ পর্যন্ত পাকিস্তানের আর কোন উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। আজহার আলি এবং উইনিস খান স্বচ্ছন্দে ব্যাট করে যাচ্ছেন। লাঞ্চের পর দু’জন বেশ মারমুখি। একের পর এক বাউন্ডারি মেরেই যাচ্ছেন দু’জন। সবচেয়ে বেশি মারমুখি ইউনিস খান। দু’জনই শেষ পর্যন্ত হাফ সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন।দ্বিতীয় সেশনেও পাকিস্তানের আর কোন উইকেট ফেলতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং, আজহার আলি আর ইউনিস খানের ব্যাটে চড়ে সফরকারীরা রানের পাহাড়েই চড়ছে বলেই ধারনা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় সেশন শেষে পাকিস্তানের রানও প্রায় দু’শর কাছাকাছি। আজহার-ইউনিসের জুটি ১৩৮ রানের।
আজহার আলির ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছিল ‘নো’ বলের কল্যাণে।এবার একইভাবে বেঁচে গেলেন ইউনিস খানও। ১৪ রানের জুটি গড়ে যখন বাংলাদেশের সামনে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন আজহার আর উইনিস খান, তখন ব্রেক থ্রু এনে দিলেন সৌম্য সরকার। তার করা বলে শর্ট কভারে ইউনিসের দারুন ক্যাচ ধরেন সাকিব আল হাসান।কিন্ত হায়! একি!! এবারও নো বল। সৌম্যর পা আগেই ক্রিজ অতিক্রম করে গিয়েছিল। সুতরাং, আবারও যে বেঁচে গেলো পাকিস্তান। বেঁচে গেলেন ইউনিস খান। এ সময় তিনি ব্যাট করছিলেন ৭৮ রান নিয়ে।এরপর একে একে আজহার আলি এবং উইনিস খান- দু’জনই সেঞ্চুরি তুলে নেন। ১৪২ বলে ক্যারিয়ারের ২৯তম সেঞ্চুরি পূরণ করেন ইউনিস। এরপর ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন আজহার আলিও। ২১২ বলে ১০ বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।সাফল্য পাওয়ার জন্য অধিনায়ক মুশফিক ৯জন বোলার ব্যবহার করেছিলেন। তৃতীয় সেশনে এসে শেষ পর্যন্ত ইউনিস খানের উইকেটটি তুলে নিতে পারলো বাংলাদেশ। বোলার সেই মোহাম্মদ শহিদ।৮৫তম ওভারের পঞ্চম বলটি ইউনিস খান খেলেছিলেন পয়েন্টের ওপর দিয়ে। কিন্তু ক্যাচ চলে যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো শুভাগত হোমের কাছে।এবার আর বাঁচাবাঁচি নাই। ক্যাচটা ধরলেন অসাধারণ ক্ষিপ্রতায়। শেষ পর্যন্ত ২৫০ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন উইনিস আজহার। দলীয় রান তখন ৩০৮। ১১টি বাউন্ডারি আর ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান ইউনিস।এরপর দিনের বাকি ৫ ওভার অবশ্য হেসে খেলে কাটিয়ে দেন আজহার আর মিসবাহ। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের রান ৩ উইকেটে ৩২৩।