দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ মে: নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিএনপি। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কাযার্লয়ে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ভিড ডিঙিয়ে খালেদা জিয়া কফিনের সামনে এসে দাঁড়ান এরপর পিন্টুর কফিনে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে পুস্পস্তবক অপর্ণ করে পিন্টুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান।এরপর তিনি নিজ হাতে দলের পতাকা দিয়ে পিন্টু কফিন ঢেকে দেন। আবেগে আপ্লুত হয়ে কাঁদলেন তিনি, এরপর কিছুক্ষন নিরবে দাঁড়িয়ে থেকে চোখ রুমাল দিয়ে মুছেন বেগম জিয়া।
এসময় নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহতায়ালার কাছে তাকে বেহেশত নসিব করার জন্য এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে মোনাজাত করেন খালেদা জিয়া । শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাতের পরপরই বেগম জিয়া গুলশানের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। দলের পুস্পস্তবক অপর্নের পর মহানগর বিএনপি, যুব দল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্র দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অপর্ন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কাযার্লযের সামনে পিন্টুর ঢাকায় প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের মধ্যে মওদুদ আহমদ, আসম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, আহমেদ আজম খান, মোহাম্মদ শাহজাহান, ফজুলল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, খায়রুল কবীর খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, আনোয়ার হোসেন, এমএ মালেক, আবদুল লতিফ জনি, শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করীম শাহিন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ২০ দলীয় জোটের মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, সাঈদ আহমেদ, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মজিবুর রহমান মঞ্জুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়া মহিলা দলের নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা ও মির্জা আববাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন। নয়া পল্টনের কাযার্লয় থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী জানাজায় অংশ নেন। জানাজা উপলক্ষে নয়া পল্টন সড়কের এক পাশের সড়ক যান চলাচল পুলিশ বন্ধ করে দেয়। জানাজা শেষে পিন্টুর কফিন আবার হাজারীবাগে নিজের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা জানান, বাদ আসর হাজারীবাগে লেদার টেকনোলজী কলেজ মাঠে জানাজার পর পিন্টুকে আজিমপুর কবরাস্থানে তার বাবার কররে দাফন করা হবে।
রোববার পিন্টু রাজশাহী কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। রাজশাহীর কারা কতৃর্পক্ষ জানায়, বুকে ব্যথা অনুভব করায় পিন্টুকে দুপুরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ১২টা ২০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, পিন্টুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। লাশ ঢাকা রওনা হওয়ার আগে রাতে রাজশাহীতে মাদ্রাসা মাঠে পিন্টুর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির নেতা–কর্মী অংশ নেন।
খালেদা জিয়া আগমন উপলক্ষে নয়া পল্টন কাযার্লযের বিপরীত দিকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতাযেন ছিলো। নেতা-কর্মীরা বুকে কালো ব্যাজ ধারণ করেছে। কাযার্লয়ের সামনে কফিন রাখার জন্য স্থাপন করা হয় একটি ছোট মঞ্চ। রাজশাহী থেকে ভোর পৌনে ৬টায় পিন্টুর মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার হাজারিবাগে মনেশ্বর সড়কের বাসায় আনা হয়। সেখান থেকে ১০টা ৫০ মিনিটে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স নয়া পল্টনে এসে পৌঁছায়।
জানাজার আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “ এই মৃত্যু আমাদের কাছে অ্প্রত্যাশিত। পিন্টু কেবল একজন উদীয়মান নেতাই ছিলেন না, তিনি দলের একজন সক্রিয় সংগঠকও ছিলেন।’’ “ তার এই অকাল চলে যাওয়া আমাদের জন্য মমার্ন্তিক ও শোকের। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাই সহমর্মিতা ও সমবেদনা।’’ পিন্টুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কাযার্লয়সহ সারাদেশের কাযার্লয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০০৮ সালের অষ্টম সংসদ নিবার্চনে পিন্টু ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য নিবার্চিত হয়েছিলেন। তিনি ছাত্র দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।