1430645881

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৩ মে: বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব গৌতম বুদ্ধের জন্মোৎসব শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা রোববার উদযাপিত হয়েছে।যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশব্যাপী বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনুসারিরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব উদযাপন করেছে।দেশের বিভিন্ন বিহারে সকালে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করা হয়। পরে বুুদ্ধ পূজা, মহাসংঘদান, মহা অষ্টপরিস্কারদানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যাদি সম্পন্ন হয়। এরমধ্যে জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা।সবুজবাগ ধর্মরাজী বৌদ্ধবিহার থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি অতীশ দীপঙ্কর সড়ক ধরে মুগদা আইডিয়াল স্কুল প্রাঙ্গণ হয়ে আবার বৌদ্ধবিহারে এসে শেষ হয়।

সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হয় স্বধর্মসভা। এতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন প্রধান অতিথি ছিলেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া ছিলেন বিশেষ অতিথি।বিকাল ৫টায় সবুজবাগ বৌদ্ধবিহার মিলনায়তনে ‘বৌদ্ধ ধর্ম ও বিশ্ব শান্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি প্রধান অতিথি ছিলেন। নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার বেঞ্জামিন ডি কস্তা ছিলেন বিশেষ অতিথি।

খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা জানান, বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও উৎসব মুখর পরিবেশে খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আজ সকালে মহাজন পাড়া এলাকা থেকে বিশ্ব শান্তি ও মঙ্গল কামনায় একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ ও বৌদ্ধ মৈত্রী কল্যাণ সংঘের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শোভাযাত্রাটি মিলনপুর মৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে শেষ হয়। এতে নানা বয়সের হাজারো মানুষ অংশ নেন। শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতিন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমণি চাকমা প্রমুখ।এদিকে সকাল থেকে মন্দিরগুলোতে ছিল পূর্ণাথীদের ভিড়। বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে খাগড়াছড়ি জেলার ৮ উপজেলার শতাধিক বৌদ্ধ বিহারে চলছে পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘ দান, অষ্ট পরিস্কার দান, ভিক্ষুদের পিন্ড দান, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, ধর্মদেশনা ও বিশ্ব মঙ্গল কামনা করে সমবেত প্রার্থনা। সন্ধ্যায় বিহারগুলোতে প্রদীপ পূজা ও ফানুস বাতি উড়ানো হবে। একইভাবে রাঙ্গামাটিতেও এ সম্প্রদায়ের লোকেরা উৎসবটি উদযাপন করেছে।

রোববার থেকে ২ হাজার ৫৫৮ বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম দেয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’।এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ ছিল সরকারি ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে শুভেচছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বৌদ্ধ‘সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দও দেশবাসীকে শুভেচছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস, গৌতম বুদ্ধ বিশ্বের মানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ বলে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছেন।মানব জীবনের দুঃখ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য তথা সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুÑএ চারটির কারণ উদঘাটন এবং মানুষের শান্তি ও মুক্তির লক্ষ্যে নিমগ্ন হন।এক সময় রাজপ্রাসাদের বিত্ত-বৈভব ও সুখ এবং স্বজনের মায়া ত্যাগ করে সিদ্ধি লাভের পন্থা অন্বেষণে তিনি বেরিয়ে পড়েন অজানার পথে । দীর্ঘ ৬ বছর সাধনার পর গৌতম বুদ্ধ বোধিপ্রাপ্ত হন।